অনুবাদ : ফওজুল করিম
নীলের বিশ্বায়ন
হাওয়াই-এর একটি রেষ্টুরেন্ট ও লিথুয়ানিয়ার একটি ক্যাফের মধ্যে সাধারণ সম্পর্ক কি থাকতে পারে? তুরস্ক ও চিলির দু’টি ট্র্যাভেল এজেন্সি ও সিঙ্গাপুরের একটি ফিল্ম ফেষ্টিভেলের মধ্যেই বা যোগসূত্রটি কি? এ প্রশ্নের উত্তর হল এদের সবারই নাম- “নীল”। হ্যাঁ- নীল। এশিয়া আফ্রিকা ও আমেরিকার আদিবাসীদের উপজাতীয় ও লোকসংস্কৃতির নিদর্শন বিক্রেতা একটি আর্ট গ্যালারির নাম নীল, আবার উত্তর ভারতে পুরুষদের দামি পোষাক বিক্রেতা বিপনীবিতানের নামও “নীল”।
আধুনিক বিশ্বের অনেক দেশের লোকের কাছে নীল শব্দটি রোমান্টিকতার সুঘ্রাণে সুবাসিত। শব্দটি শুনলে সেই কোনো এক চাঁদনি রাতে সাহারা মরু-প্রান্তরে নীল রং- এর হেজাব পরিহিতা তুয়ারেগ রমণীর সুখস্মৃতি মনে পড়ে। কারু মনে পড়তে পারে মনের আনন্দে বাজানো জাজ যন্ত্রসঙ্গীতের মনোমুগ্ধকর সুর নয়তো, ক্লাসিক ব্লু জীনস- এর সঙ্গে সম্পর্কিত সাদামাটা জীবন-যাপনের সুখস্মৃতি নীল শব্দটি স্পর্শ করে মনকে। আর, এতে বাজিমাত করা যায়। তাই, এতে আর আশ্চর্য কি যে, মানুষের জীবনধারা ও মন মেজাজ নিয়ে যারা ব্যবসা করে তাদের কাছে শব্দটি হবে যুতসই। ১৯৩১ সালে ডিউক অফ এলিংটন যে দিন “মুড ইন্ডিগো” নামের ব্লু সঙ্গীতটি গেয়েছিলেন তখন থেকেই কথাটি সঙ্গীত জগতে জনপ্রিয়, তা রেকর্ড-এর লেবেল হিসাবে হোক অথবা ফিলিপাইন থেকে ফ্রান্স পর্যন্ত সফল কোনো ব্যান্ড সঙ্গীতই হোক।
আধুনিক শিল্প- উদ্যোগের উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্য দ্রব্যের মার্কা বা চিহ্ন হিসাবেও শব্দটি আজকাল সুপরিচিত। ভেষজ তেল, জোর্তিবিদ্যার মানচিত্র বা লামা উলের পোষাক সে যে কোনো ধরনের পণ্য দ্রব্য হোকনা কেন তার মার্কা বা চিহ্ন নীল, শব্দটি হতে পারে। দু’টি নতুন ক্ষেত্রে শব্দটি ব্যবহারের জন্য নীলের সাংস্কৃতিক তাৎপর্য বেড়ে গেছে বহু গুণে। একটি হল নীল শিশু বলা হচ্ছে প্রতিভাবান শিশুদের- এই শিশুদের জন্য আবার বিশেষ ধরনের বই, শিক্ষার উপকরণ, এমনকি বিশেষ ধরনের স্কুল, এসব নিয়ে প্রায় বলতে গেলে দাঁড়িয়ে গেছে ছোটোখাট একটি কুটির শিল্প। অন্য ক্ষেত্রটি হচ্ছে কম্পিউটার। প্রোগ্রামিং-এর ওয়েব ডিজাইনিং থেকে শুরু করে জাপানের একটি ইন্টারনেট কনসালটিং ফার্মের নাম হচ্ছে ইন্ডিগো বা নীল। একবিংশ শতাব্দীতে মানসম্পন্ন জীবনযাত্রা ও জীবনধারা কথাটি বোঝাতে বিশ্বব্যাপী যে শব্দটি ব্যবহার করা হচ্ছে তা হল নীল।
ভাবনার জগতে চিত্রকল্প হিসাবে বিশ্বব্যাপী নীল শব্দটির বিস্তার দু’টি কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমতঃ নীল এখন আর প্রাত্যহিক জীবনের অঙ্গ নয়। রঞ্জক হিসাবে নীলের গুঁড়া প্রায় শতাব্দীকাল আগে বাজার থেকে বিলুপ্ত। নীলের গাছ আজকাল এতই বিরল যে খুব কম লোকই চোখে দেখেছে এই গাছ। নীল গাছ চোখে দেখে চিনতে পারবে এমন লোকই বা কজন। জনপ্রিয় শব্দ হিসাবে বিশ্বব্যাপি চমক লাগানোর যে চেষ্টা, তা নেহায়েতই রোমান্টিসিজম। নীল সম্পর্কে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কম লোকেরই আছে।
Leave a Reply