শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:২০ পূর্বাহ্ন

নীলের বিশ্বায়ন – নীল ও ঔপনিবেশিক বাংলায় গোয়েন্দাগিরি (পর্ব-২)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪, ১০.০০ পিএম

পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল

অনুবাদ : ফওজুল করিম

দ্বিতীয়ত: হাল আমলে নীলের তাৎপর্যময় গুঢ় অর্থ একেবারে বদলে গেছে। ঘোড়া দ্বিতীয়ত উনবিংশ শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি প্রধান পণ্য দ্রব্য ছিল এল। নীলচাষের সঙ্গে লোভ-লালসা নিষ্ঠুরতা বীভৎসতা এসব ছিল জড়িত। আজকাল নীল বলতে মানসপটে যে চিত্রকল্প ভেসে ওঠে তা ভিন্ন। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে নীলচায়ের সঙ্গে ক্রীতদাস ব্যবস্থা ও বাধ্যতামূলক শ্রমের অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক। উন্নত জীবনধারা ও মহোত্তর জীবনচর্যার সঙ্গে ওই সব সেকেলে ব্যবস্থার কোনো সম্পর্ক থাকতে পারে না।

পরবর্তীকালে সাংস্কৃতিক ধারাক্রমে নীল শব্দটির নতুন অর্থের বিষয়টি বেশ আগ্রহোদ্দীপক বিশ্বে রুচিশীল জীবনধারা ও প্রাচীন আভিজাত্যের প্রতীক হিসাবে নীল শব্দটির আবির্ভাবের কাহিনী বাস্তবিক চমকপ্রদ। স্থান ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে একটি শব্দের অর্থ যে কি করে বদলায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই নীল শব্দটি। অন্য একটি বইয়ে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা যেতে পারে। তবে বর্তমান বইটির উদ্দেশ্য ভিন্ন। একটি ঐতিহাসিক পণ্য দ্রব্য হিসাবে নীল-এর বৃত্তান্তই এই বইটির লক্ষ্য। বর্তমানে নীলের সুখানুভূতি উদ্রেককারী বিশেষ অর্থ- এ বইয়ের আলোচ্য নয়। বেশ কয়েক শতাব্দী নীল ছিল বিশ্ববাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য দ্রব্য। বিশ্বের প্রভাব ও প্রতিপত্তিশালী কোম্পানীগুলো নীলের ব্যবসার জন্য ছিল পাগল। আধুনিক বিশ্বের গঠনে নীলের অবদান অপরিসীম। বিশ্বের দূরতম অঞ্চলগুলোর মানুষের মধ্যে যোগসূত্র রচনায় নীলের ভূমিকা কম নয়। বিশ্বায়নের পথ-নির্দেশক বলা যেতে পারে নীলকে। এ সবকিছু সত্ত্বেও নীল সম্পর্কে গবেষণা আশানুরূপ নয়। নীলের ইতিহাস বলতে আমরা যা পাই তা হল সংক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন কতগুলো আঞ্চলিক ইতিহাসের মত।

যেখানে যেখানে নীলের চাষ করা হয়েছে, নীল প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে, নীলের ব্যবসা করা হয়েছে ও রং হিসাবে নীল ব্যবহার করা হয়েছে সে সব সমাজে গভীরভাবে রেখাপাত করেছে নীলচাষ। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় উনবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বে নীলচাষের প্রধান কেন্দ্র ছিল দক্ষিণ এশিয়া। আর দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্গত বঙ্গদেশ ছিল নীলচাষের স্বর্গভূমি। উনবিংশ শতাব্দীতে বঙ্গদেশের রাজনৈতিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসে এর সুস্পষ্ট ছাপ পাওয়া যায়। বঙ্গদেশে নীলচাষ নিয়ে গবেষণা যে করা হয় নি তা কিন্তু নয়। তবে সে বিবরণ ছিল নিতান্তই একপেশে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নীলচাষের ইতিহাস থেকে বঙ্গদেশে নীলচাষের ইতিহাসকে দেখা হয়েছে একেবারে আলাদা করে স্বতন্ত্রভাবে।

আসলে বঙ্গদেশে নীলচাষ তো নীলের বিশ্বায়নের একটি অংশ মাত্র। ওই সব বিবরণ থেকে সমাজের উপর নীলচাষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক যত না জানতে পারি তার চেয়ে অনেক ভাল জানতে পারি বঙ্গদেশে নীলচাষের রাজনীতি নিয়ে কলহ ও বিবাদ বিসম্বাদের ব্যাপারে। উনবিংশ শতাব্দীর বঙ্গদেশে কি করে নীলচাষ করা হত সে সম্পর্কেই এই বইটির রচনা। বইটির দ্বিতীয় খন্ডে আছে নীলচাষ সম্পর্কে একটি অপ্রকাশিত ঐতিহাটিক দলিল। বঙ্গদেশে নীলচাষ সম্পর্কে যে বইপত্র ও দলিল দস্তাবেজ আছে তাতে এ রিপোর্টের উল্লেখ নেই। পিয়ের-পল দারাক-এর রিপোর্টটি অনুবাদ করা হয়েছে একটি ফরাসী পান্ডুলিপি থেকে। বঙ্গদেশে নীল উৎপাদনের নিখুঁত বর্ণনা আছে বইটিতে। আর বাড়তি যা আছে তা হচ্ছে: ১৮২০ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় নীল শিল্প প্রতিষ্ঠার ফরাসী অভিসন্ধি সম্পর্কে অপ্রকাশিত নতুন তথ্য।

নিচের পরিচ্ছেদগুলো (প্রথম পর্ব) দারাকের রিপোর্টের সংক্ষিপ্ত সার। বঙ্গদেশে নীল উৎপাদনের সংক্ষিপ্তসার। এতে রয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দীতে নীল উৎপাদনের আন্তর্জাতিক পটভূমি। ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে হঠাৎ কি করে নীল উৎপাদনকারী দেশ হিসাবে বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটল তার ব্যাখ্যা। এতে আরও আছে দারাকের রির্পোট প্রকাশিত হওয়ায় বৃটিশ ও ফরাসী সাম্রাজ্যের মধ্যে নীল নিয়ে শুরু হল প্রবল প্রতিযোগিতা। এর সঙ্গে আমার প্রস্তাব অনুযায়ী বঙ্গদেশে নীল চাষের একটি নতুন পরিপ্রেক্ষিত সম্পর্কিত নিবন্ধ সংযোজনঃ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে নীল উৎপাদনের দীর্ঘ বিশ্ব ইতিহাসের মধ্যে বঙ্গদেশে লাভজনকভাবে নীল উৎপাদনের (১৭৯০-১৮৬০) সময়টি আমার আলোচ্য বিষয়। এই সময় বঙ্গদেশের নীলকরদের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের নীলকরদের সম্পর্কের বিষয়টিও আমার আলোচনার অন্তর্ভুক্ত। আমরা দেখব বঙ্গদেশের নীলের সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে তা কি করে জাতীয় কাঠামোর আলোচনায় পর্যবসিত হয়। এখন প্রয়োজন হচ্ছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী প্রসারিত করে ইন্ডিগো ব্লকে বিশ্ব পটভূমিকায় সংস্থাপন করা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024