অনুবাদ : ফওজুল করিম
গ্রীক ভাষার শব্দ “ইন্ডিকন” (ভারত থেকে আমদানি করা) থেকে ইন্ডিগো শব্দটি উদ্ভূত। কেননা গ্রীকরা নীল রং আমদানী করত ভারত থেকে। শব্দ দু’টি কখনও কখনও এক সঙ্গে ব্যবহার করা হত। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, উনবিংশ শতাব্দীতে ফরাসীরা নীল-ক্ষেতের নীলকে বলত “আনিল আর প্রক্রিয়ার পর যে দ্রব্য পাওয়া যেত তাকে বলত ইন্ডিগো”।” ১৮৯৭ খ্রীষ্টাব্দে জার্মানীতে যখন কৃত্রিম নীল বা পাওয়া যেত শুরু হল তখন এই নতুন পণ্যদ্রব্যের নাম আনিল থেকে হল “আনিলাইবাজার ষোড়শ শতাব্দীর পূর্বে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে নীল উৎপাদিত হত, নীলের বাণিজ্য চলত বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে।
দুনিয়াজোড়া নীলের ব্যবসায়ে বিরাট এক পরিবর্তন এল ষোড়শ শতাব্দীতে। নীল পরিণত হল আন্তর্জাতিক পণ্য দ্রব্যে। এই অবস্থা বিদ্যমান ছিল বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত। এশিয়া আফ্রিকা ও আমেরিকার বৈদেশিক বাণিজ্য ব্যবস্থার মধ্যে ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের অনুপ্রবেশের ফলে নীলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এমন এক অবস্থার উদ্ভব হল যা বাস্তবিকই ছিল অপরিবর্তনীয়। ইউরোপীয় বাজারে অন্যান্য আরও কিছু পণ্য দ্রব্যের (বিশেষভাবে মশলা ও মিহি কাপড়) সঙ্গে নীলের দাম পড়তে লাগল। তখন নীল দক্ষিণ এশিয়া হতে আরব উপদ্বীপ ঘুরে আসত ইউরোপের বাজারে।
স্থলপথে কিংবা সাগর পথে আসার সময় মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার রাজ রাজারা নীলের উপর শুল্ক আরোপ করত। এই বাণিজ্য তখন নিয়ন্ত্রণ করত ভারতীয় আর্মেনীয় ইটালীয় ও পারস্য দেশীয় ও পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় ব্যবসায়ীরা। এশিয়া থেকে ইউরোপে আসার নতুন সামুদ্রিক বাণিজ্য পথ হল আফ্রিকা মহাদেশ প্রদক্ষিণ করে। এর ফলে পশ্চিম ইউরোপে মাল পৌছার আগে মাঝপথের মধ্যস্বত্ত্ব ভোগীদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই প্রাচ্যের পণ্য দ্রব্য আসতে লাগল বাজারে। তখন থেকে নীলের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতে লাগল পর্তুগীজ, স্পেনীয়, ওলন্দাজ ও ইংরাজ ব্যবসায়ীরা।
নীল ব্যবসায়ের নতুন আন্তর্জাতিক প্রকৃতির কারণে প্রাচীন আঞ্চলিক ব্যবসা ভেঙ্গে পড়ল এবং বিপর্যয় নেমে এল আঞ্চলিক ব্যবসায়ের উপর। এ জন্যে কম মুশকিলে পড়েনি ইউরোপ। ইউরোপে তখন ব্যবহার হত ওয়াড গাছ থেকে উৎপন্ন ইন্ডিগো। বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে আমদানী করা গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশের নীল ছিল ইউরোপীয় নীলের চেয়ে উৎকৃষ্টতর। ইউরোপের ওয়াড রক্ষার জন্য ব্যবসায়ী মহল এক শতাব্দী জুড়ে তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাদের সরকারের কাছে তদবির করে যাতে ইন্ডিগো নীল আমদানী বন্ধ করা যায়।
Leave a Reply