অনুবাদ : ফওজুল করিম
নীলের বিশ্ব-বাজারের বৈশিষ্ট্য ছিল আন্তঃ রাজ্য প্রতিযোগিতা। ক্যারিবীয় ও উত্তর আমেরিকার উপনিবেশে নীলচাষের ক্ষেত্রে ফরাসী ও বৃটিশরা ছিল অত্যন্ত সফল। জাভাতে ওলন্দাজদের অবস্থাও তাই।১০ ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে বিশ্বের অনেকখানে রফতানী-মানের উৎকৃষ্ট নীল উৎপাদিত হত। যেমন: ফিলিপাইন, জাভা, ভারত, মরিশাস, মিসর, সেনেগাল, ভেনজুয়েলা, ব্রাজিল, গুয়াতেমালা, হাইতি ও দক্ষিণ ক্যারোলিনা। বিশ্বে নীলের বাজার ক্রমেই অবিচ্ছিন্ন হতে লাগল এবং এই সংহত বাজারের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদী রাজ্যগুলো তুমুল প্রতিযোগিতায় মেতে উঠল।
এভাবে নীল হয়ে উঠল এক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ব পণ্য। আর, ইন্ডিগোর নীলচে রাজ্যগুলো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ল এক অখন্ড জালে। ইউরোপীয় বাজারে এমনিতেই শিল্প বিপ্লবের ফলে নীলের বিক্রী বেড়ে নিয়েছিল। ফরাসী বিপ্লবের পরে তা বেড়ে গেল অনেক। ফরাসী বিপ্লবের পরিণতি হিসাবে বিভিন্ন সেনাবাহিনীর মধ্যে যে যুদ্ধগুলো হচ্ছিল সে সব সেনা দলের ইউনিফর্ম ছিল নীল আর, তখনকার ফ্রান্সের ফ্যাশন ছিল নীল পোষাক।”
ফরাসী বিপ্লবের আগে ফ্রান্সে নীল রং-এর পোষাকের প্রচলন ছিল কম। তাই, বাংলার নীলচাষীদের ভাগ্য নির্ভর করত গুয়াতেমালায় সময় মত বৃষ্টি হয়েছে কিনা তার উপর অথবা মিসরে নীলক্ষেতে পঙ্গপালের আক্রমণের উপর। ইউরোপের ফটকাবাজারি ব্যবসায়ীদের খেয়ালখুশীর উপর নির্ভর করত বাংলার নীলচাষীদের দিনকাল।
প্যারিসে ফ্যাশন ডিজাইনাররা নীল কতটা পছন্দ করছে, ঝড়ে আটলান্টিক সাগরে জাহাজডুবি হয়েছে কিনা এবং সেই ঝড়ে হাইতি থেকে আনা নীলের শুকনো দলা গলে গেছে কিনা তার উপর নির্ভর করছে বাংলার হত দরিদ্র নীলচাষীর কপাল। নীল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বায়ন বিরাট এক সফল বাণিজ্য হিসাবে অনবদ্য, সেইসঙ্গে মানবিক বিপর্যয় হিসাবেও প্রচন্ড। ইন্ডিগো রং উৎপাদন একটি শ্রমঘন উৎপাদন প্রক্রিয়া।
Leave a Reply