শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০৮ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৮৩)

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

ভগবানগোলা

মুর্শিদাবাদ বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার কিরীটভূষিত হওয়ার বহু পূর্ব্ব হইতে, ভগবানগোলা বাঙ্গলার মধ্যে একটি প্রধান স্থান বলিয়া প্রসিদ্ধ ছিল। উত্তালতরঙ্গবাহিনী পদ্মার ক্রোড়স্থিত হওয়ায় ভগবান- গোলা প্রতিনিয়ত বাণিজ্যপোতে পরিশোভিত থাকিত।। একপার্শ্বে ভাগী- রখী, অপর পার্শ্বে জলঙ্গী, তথায় অবিরত নানাবিধ বাণিজ্যদ্রব্য আনিয়া উপস্থিত করিতেন। দেশীয়, বিদেশীয়, সকল জাতির ব্যবসায়িগণের কোলাহল অগাধসলিলা পদ্মার তরঙ্গমালার সহিত দিগদিগন্তে বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িত।

সুন্দর স্থানে অবস্থিত বলিয়া ভগবানগোলা বাঙ্গলার মধ্যে একটি প্রধান বন্দরে পরিণত হয়। নিকটে অনেকগুলি নদ নদী প্রবাহিত থাকায় নানাদেশ হইতে বাণিজ্যদ্রব্য আনীত ও নানাদেশে প্রেরিত হইবার অত্যন্ত সুবিধা ছিল। মোগলগণকর্তৃক বাঙ্গলাবিজয়ের পর হইতে, ইহার শ্রীবৃদ্ধির সূচনা হয়। তাহার পর যখন মুর্শিদাবাদ বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার রাজধানী হইয়া বাণিজ্যগৌরবে স্ফীত হইয়া উঠে, সেই সময়ে ভগবানগোলা মুর্শিদাবাদের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বন্দর বলিয়া সমগ্র জগতে বিখ্যাত হইয়া পড়ে।

যদিও কাশীমবাজার বাণিজ্যগৌরবে তাদৃশ ন্যূন ছিল না, তথাপি ভগবানগোলায় দৈনিক যেরূপ বহুবিধ দ্রবোর ক্রয়বিক্রয় হইত, কাশীমবাজারে সেরূপ হইত না। কাশীমবাজারে কেবল রেশম প্রভৃতি কয়েকটি দ্রব্যের বাণিজ্যস্থান ছিল; কিন্তু উভগবানগোলা সকলপ্রকার শক্ত, স্বত, তৈল প্রভৃতি বঙ্গদেশজাত যাবতীয় দ্রব্যের ক্রয়বিক্রয়ে প্রত্যহ কোলাহলময় থাকিত। তৎকালীন এদেশবাসী জনৈক ইংরেজ ভগবানগোলার বাজারকে তৎকালপরিজ্ঞাত সমগ্র জগতের সর্ব্বশ্রেষ্ঠ বলিয়া উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন।

পূর্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, মোগলগণকর্তৃক বাঙ্গলাবিজয়ের পর হইতেই ভগবানগোলার নাম বিস্তৃত হইতে আরন্ধ হয়। আইন আকবরী গ্রন্থে ভগবানগোলার উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়। উক্ত গ্রন্থে ভগবানগোলাকে সরকার মামুদাবাদের অন্তর্গত বলিয়া নির্দেশ করা হইয়াছে। ভগবানগোলা অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সহিত সংসৃষ্ট -বলিয়া কথিত হইয়া থাকে। খৃষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বর্দ্ধমান প্রদেশের সভাসিংহ ও পাঠান রহিম খাঁ মিলিত হইয়া বঙ্গদেশে এক বিদ্রোহের অবতরণা করে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024