শ্রী নিখিলনাথ রায়
সভাসিংহ পশ্চিম বাঙ্গলার অনেক স্থান অধিকার করিয়া, রহিম খাঁকে নদীয়া ও মুখসুদাবাদ অধিকারের জন্য পাঠাইয়া দেয়। রহিম খাঁ মুখসুদাবাদের জায়গীরদার নিয়ামত খাঁকে নিহত করিয়া, কাশীমবাজারের ব্যবসায়িগণের অনুনয় বিনয়ে সে স্থান পরিত্যাগপূর্ব্বক ভগবানগোলা পর্যন্ত অগ্রসর হয়। ভগবানগোলার সুন্দর অবস্থান দেখিয়া রহিম খাঁ উক্ত স্থানে সৈন্য সমাবেশ করিয়া নবাবসৈন্যের বাধা দিবার জন্ম অবস্থিতি করিতেছিল। কিন্তু অবশেষে রাজমহালে নবাব ইব্রাহিম খাঁর পুত্র জবরদস্ত খাঁ কর্তৃক পরাজিত হয়।
খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে মুর্শিদাবাদ বাঙ্গলা, বিহার, উড়িষ্যার রাজধানীপদে প্রতিষ্ঠিত হইলে, ভগবানগোলার গৌরব উচ্চসীমা অধিকার করিয়াছিল। পদ্মা, ভাগীরথী, জলঙ্গী প্রভৃতি প্রধান প্রধান নদীবক্ষ দিয়া সমস্ত বঙ্গদেশের পণ্যদ্রব্য আসিয়া ভগবানগোলার বাজার পরিপূর্ণ করিয়া তুলিত। নিকটে কাশীমবাজার প্রভৃতি স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ইউরোপীয় জাতির কুঠী সংস্থাপিত থাকায়, এখানকার ক্রয়বিক্রয় বহুল- পরমাণেই সম্পন্ন হইত। তদ্ভিন্ন ভগবানগোলা বাঙ্গলার একরূপ সীমাস্তপ্রদেশে অবস্থিত থাকায়, বিহার প্রদেশের সহিত ইহার বাণিজ্য- কার্য্যের অত্যন্ত সুবিধা হইয়াছিল।
পদ্মার তীরবর্তী হওয়ায়, রাজমহাল ‘প্রভৃতি স্থানের সহিতও ইহার বিশেষ সম্বন্ধ ছিল। নবাব আলিবর্দী খাঁর সময়ে ইহার শ্রীবৃদ্ধি সর্ব্বোচ্চসীমায় উপনীত হয়। তাঁহারই রাজত্বকালে বঙ্গভূমি বারংবার মহারাষ্ট্রীয়গণকর্তৃক আক্রান্ত হয়; এজন্য ভগবান- গোলাকে বিশেষরূপে সুরক্ষিত করা হইয়াছিল। নদীতীর ব্যতীত অন্য সকলদিক পরিখা ও কাঠের প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত করা হয়। মহারাষ্ট্রীয়- গণের আক্রমণের বিশেষরূপ আশঙ্কা হইলে, সময়ে সময়ে সহস্র অশ্বারোহী ও সহস্র পদাতিক ইহার রক্ষাকার্য্যে নিযুক্ত থাকিত এবং সুবার বিশ্বস্ত, নিপুণ ও কার্যক্ষম কর্মচারিগণই ইহার রক্ষাভার গ্রহণ করিতেন।
১৭৪৩ খৃঃ অব্দে ভাস্কর পণ্ডিত ও আলিভাইএর অধীন মহারাষ্ট্রীয়গণ চারিবার ভগবানগোলা আক্রমণ করে; কিন্তু প্রত্যেক আক্রমণই প্রতিহত হওয়ায়, তাহারা কিছুই করিয়া উঠিতে পারে নাই। ১৭৪০ দুঃ অঙ্কের প্রথম ভাগে পুনর্ব্বার মহারাষ্ট্রীয়গণ ভগবানগোলা আক্রমণ করে। এই বার তাহারা নগরমধ্যে প্রবেশ করিতে সমর্থ হয় এবং বহুসংখ্যক দ্রব্য ও অর্থ লুণ্ঠন করিয়া গৃহসকল ভস্মীভূত করিয়া চলিয়া যায়। এই আক্রমণে নবাব আলিবর্দী খাঁকে বিশেষরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হইতে হইয়াছিল।
Leave a Reply