বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-৮৬)

  • Update Time : শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

‘ভগবানগোলার সহিত আর একটি বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনার সম্বন্ধ আছে। পলাশীর রণক্ষেত্রে পরাজিত হইয়া হতভাগ্য সিরাজ যখন প্রিয়তমা মহিষী লুৎফউন্নেসার সহিত মুর্শিদাবাদ পরিত্যাগ করিয়া পলায়ন করিবার চেষ্টা করেন, সেই সময়ে তিনি প্রথমে ভগবানগোলায় আসিয়া উপস্থিত হন। । ভগবানগোলায় প্রায়ই নবাবের নৌকার বন্দোবস্ত থাকিত। তিনি নৌকারোহণে ভগবানগোলা পরিত্যাগ করিয়া রাজমহালাভিমুখে গমন করিলে, মালদহের নিকট মীরজাফরের অনুচরবর্ণ কর্তৃক যুত হইয়া মুর্শিদাবাদে নীত হন। পরে তথায় তাঁহার ২৫ক ভূমিবিযুটিত হয়। যে দিন ভগবানগোলা সিরাজকে চিরবিহার দিয়াছিল, সেই দিন হইতে সিরাদের সঙ্গে সঙ্গে তাহারও সৌভাগ্য-রবি অন্তমিত হইতে আরত হয়।

বর্তমান সময়ে ভগবানগোলার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। ইহার পূর্ব্ব বাণিজ্যগৌরবের চিহ্নমাত্রও নাই। পদ্মা যেন মনোহঃখে ইহাকে নিজ ক্রোড় হইতে নিক্ষিপ্ত করিয়া দূরে প্রস্থান করিয়াছেন এবং আর একটি নূতন ভগবানগোলার সৃষ্টি হইয়াছে। অষ্টাদশ শতাব্দীর সেই প্রসিদ্ধ বাণিজ্যস্থান এক্ষণে পুরাতন ভগবানগোলা নামে অভিহিত হইতেছে। নুতন ভগবানগোলাকে কখন কখন লোকে আলাতলীও বলিয়া থাকে। পুরাতন ভগবানগোলা হইতে নূতন ভগবানগোলা প্রায় সার্দ্ধ দুই ক্রোশ দূরে অবস্থিত।

ভগবানগোলার গৌরব নষ্ট হইলেও অনেক দিন পর্য্যন্ত ইহা একটি মনোহর স্থান বলিয়া প্রসিদ্ধ ছিল। বিশপ হীবার ১৮২৪ খৃঃ অব্দের ২রা আগষ্ট ভগবানগোলায় উপস্থিত হইয়া ইহার রমণীয়তায় মুগ্ধ হইয়াছিলেন। তিনি ভগবানগোলাসম্বন্ধে এইরূপ বর্ণনা করিয়াছেন:- *একটি বিশাল শ্যামল প্রান্তরোপরি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরিচ্ছন্ন মৃৎকুটারগুলি ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত ভাবে রহিয়াছে। নদী হইতে কিছু দূরে একটি শ্যাম তৃণাচ্ছাদিত বাঁধ প্রান্তরের প্রাচীররূপে অবস্থিত। আম্র, বংশ, খর্জুর ও স্থানে স্থানে মনোহর বটবৃক্ষ বাঁধটির ধারে ধারে শোভা পাইতেছে। প্রান্তর গো, মহিষ ও বালকবালিকাগণে পরিপূর্ণ। তীরের নিকট নদীবক্ষে কতকগুলি তরণীও ভাসিতেছে।

কোন কোন উন্মুক্ত কুটীর হইতে নানাবিধ যন্ত্রের বিভিন্নপ্রকার বাস্তধ্বনি চারি দিক্ মুখর করিয়া তুলিতেছে। আনন্দময়, উৎসাহময়, কোলাহলময় স্থানটি দেখিলে বাস্তবিক মন প্রফুল্ল হইয়া উঠে।” নূতন ভগবানগোলা পূর্ব্বে বিহার প্রভৃতি স্থানের নীলের আড্ডা বলিয়া প্রসিদ্ধ ছিল।। কিন্তু এক্ষণে সে ব্যবসায়ও মন্দীভূত হওয়ায়, ইহা এক খানি সামান্য গ্রাম বলিয়া পরিচয় দিতেছে। প্রায় প্রতি বৎসরেই ভীষণ বন্ধাস্রোতে ভগবানগোলার কুটারগুলি ভাসমান হইয়া ক্রমে ইহাকে জনমানবহীন মরুভূমি করিয়া তুলিতেছে। এখনও ভগবান- গোলার নাম শুনা যাইতেছে; কালসহকারে সম্ভবতঃ, অনস্ত বিস্মৃতিগর্ভে চিরদিনের জন্য তাহার স্থান হইবে!

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024