শ্রী নিখিলনাথ রায়
মোতিঝিলের অবস্থা পূর্ব্বের ন্যায় তেমন সৌষ্ঠবশালিনী না হইলেও, ইহার বর্তমান রমণীয় দৃশ্যে মনপ্রাণ মুগ্ধ হইয়া উঠে। এক কালে যাহাতে কত ঘটনা সংঘটিত হইয়াছিল, এক্ষণে তাহার সুন্দর দৃশুটিমাত্র আমাদিগকে আকর্ষণ করিয়া থাকে। স্পেন্সার বলেন, পূর্ব্বে যে স্থানে কোন বিশেষ প্রয়োজন সংসাধিত হইত, এক্ষণে কেবল তাহা সৌন্দর্য্যাসক্তিরই পরিচায়ক ব্যতীত আর কিছুই নহে। বিধ্বস্তপ্রায় দুর্গাদি ইহার প্রকৃত দৃষ্টান্ত।
যাহা পূর্ব্বে বাসনিকেতন ও আত্মরক্ষার আশ্রয় বলিয়া নির্মিত হইয়াছিল, এক্ষণে তাহা প্রীতিভোজনের স্থানরূপে নিৰ্দ্দিষ্ট হইয়া থাকে, তাহাদের চিত্রে আমাদের উপবেশনশালা সুসজ্জিত হয় এবং তাহাদিগকে অবলম্বন- করিয়া কত কত উপকথার সৃষ্টি হইয়াছে। রাজপুতানার প্রাচীন হর্গ, দিল্লী ও আগরার প্রাচীন প্রাসাদ, গৌড়ের ভগ্নস্তূপ আমাদিগের সৌন্দৰ্য্যানুরাগের বৃদ্ধি সাধন করে মাত্র। সেইরূপ মুর্শিদাবাদের ইতিহাস- প্রসিদ্ধ প্রাচীন স্থানগুলিও তাহাদের ভগ্নাবশেষ নয়নের তৃপ্তিসাধন ও দোশ্রিত উপকথাগুলি বালকবালিকাগণের মনস্তষ্টি ব্যতীত আর কোন ব্যবহারেই আইসে না।।
শান্তিপ্রিয় নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ অনেক উদ্দেশ্য- সাধনার্থ অশ্বপদাকৃতি মোতিঝিলের তীরে স্বীয় প্রাসাদ নির্মাণ করিয়াছিলেন। আমরা এক্ষণে তাহার ভগ্নাবশেষসহ মোতিঝিলের সুন্দর দৃশ্য দেখিয়া তৃপ্ত হইয়া থাকি।বাস্তবিকই মোতিঝিল মুর্শিদাবাদের মধ্যে একটি রমণীয় দৃশ্য। যখন কেহ ইহার নিকটে উপস্থিত হন, তখনই হৃদয় স্বর্গীয় ভাবে ভরিয়া যায়।
অশ্বপদাকৃতি ঝিল সলিলভরে টল টল করিতেছে,- স্থানে স্থানে পদ্মবনে বিকসিত পদ্মগুলি সলিল হইতে মস্তক উত্তোলন- পূর্ব্বক মৃদু বয়ুেবেগে ঈষৎ সঞ্চালিত হইতেছে, নানাবিধ জলচর পক্ষী; কখন ঝিলে বসিয়া কলরব করিতেছে, কখন বা তান ছাড়িতে ছাড়িতে সুদূর অম্বরপথে মিশিয়া যাইতেছে; কোকিল, পাপিয়া প্রভৃতিরও মনোমোহকর সঙ্গীতে দিগ্বালাগণ চমকিত হইয়া উঠিতেছেন! ঝিলবেষ্টিত ভূভাগ হরিদ্বর্ণ তৃণে আচ্ছাদিত হইয়া শ্যামলতার ঢেউ খেলাইতেছে।
Leave a Reply