শ্রী নিখিলনাথ রায়
ইহার গর্ভে অনেক শুক্তি পাওয়া যাইত বলিয়া ইহা মোতিঝিল নামে অভিহিত হইয়া থাকে। কাশ্মীর, লাহোর প্রভৃতি স্থানেও এই নামের জলাশয় দৃষ্ট হয়। খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্য হইতে মোতিঝিলের বিবরণ মুর্শিদাবাদের ইতিহাসে দেখিতে পাওয়া যায়। যৎকালে নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ সা আমেদ জঙ্গ ইহার সুন্দর অবস্থান দেখিয়া পশ্চিম তীরে আপনার প্রাসাদাদি। নির্মাণ করেন, সেই সমর হইতে ইহার প্রকৃত বৃত্তান্ত আমরা জানিতে পারি।
কিন্তু ইতিহাসে উল্লিখিত না হইলেও খৃষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে, অথবা সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথমে ইহার পূর্ব্ব তীরে রাধামাধব মূর্তির প্রতিষ্ঠা হইয়াছিল। তদবধি এই স্থানের কথা সাধারণে অবগত আছে। সম্ভবতঃ তৎকালে মোতিঝিল ভাগীরথীর গর্ভেই অবস্থিত ছিল। আলিবন্দী খাঁ মহবংজঙ্গ মহারাষ্ট্রীয় ও আফগানদিগের দমনার্থ জীবনের অধিকাংশ সময় সমরক্ষেত্রে যাপন করিয়াছিলেন।
মৃত্যু- শয্যায় শহিত হইয়া তিনি প্রিয়তম সিরাজের নিকট এ কথা নিজমুখে ব্যক্ত করিয়া গিয়াছেন। তিনি স্পষ্টই বলিয়াছেন যে, তাঁহার জীবন যুদ্ধে ও সামরিক কৌশলেই অতিবাহিত হইয়াছে। আলিবর্দী খাঁর সমরক্ষেত্রে অবস্থানকালে তাঁহার বেগম এবং জ্যেষ্ঠ ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁর প্রতি মুর্শিদাবাদরক্ষার ভার থাকিত।
নওয়া- জেস্ মহম্মদ খাঁ ঢাকার শাসনকর্তার পদে নিযুক্ত ছিলেন; কিন্তু তাঁহাকে অধিকাংশ সময়েই মুর্শিদাবাদে বাস করিতে হইত; তাঁহার সহকারী হোসেনকুলী গাঁর প্রতি ঢাকার শাসনভার ন্যস্ত ছিল। মৃত্যুর পর রাজা রাজবল্লভ উক্ত পদে নিযুক্ত হন। হোসেনকুলী খাঁর নওয়াজেস্ মহম্মদ খাঁ অত্যন্ত বিলাসী ও আমোদপ্রিয় ছিলেন। মুর্শিদাবাদের মধ্যস্থিত স্বীয় প্রাসাদ তাঁহার সর্ব্বদা ভাল লাগিত না। এই সময়ে আলিবদ্দী খাঁ সিরাজউদ্দৌলাকে রাজ্যভার দিবেন বলিয়া প্রকাশ করিলে, তাঁহার পরিবারমধ্যে ভীষণ মনোবিবাদ উপস্থিত হয়।
Leave a Reply