শ্রী নিখিলনাথ রায়
তাঁহার প্রণয়পাত্র মীর নজর আলি অতি অল্পসংখ্যক সৈন্য লইয়া মোতিঝিলে অবস্থিতি করিতেছিলেন; তাঁহারই কুপরামর্শে ঘসেটী সিরাজকে বাধা দিতে কৃতসঙ্কল্লা হন। সিরাজের সৈন্যগণ মোতি- ঝিল আক্রমণ করিলে, নজর আলি অনন্তোপায় হইয়া সিরাজের: বৈস্তাধ্যক্ষ দোস্ত মহম্মদ খাঁ ও রহিম খাঁকে অনেক উপহার প্রদান করিয়া, উপস্থিত বিপদ হইতে নিষ্কৃতি লাভ করেন। পরে যাবতীয় সম্পত্তিসহ ঘসেটা বেগম স্বত হইয়া সিরাজের নিকট উপস্থিত হইলে, সিরাজ তাঁহাকে বন্দী-অবস্থায় থাকিতে অনুমতি প্রদান করেন। তদবধি মোতিঝিল সিরাজের হস্তগত হয়।
লং, হণ্টার প্রভৃতি ভ্রমক্রমে লিখিয়াছেন যে, মোতিঝিলের প্রাসাদ সিরাজ উদ্দৌলা কর্তৃক নির্ম্মিত হয়। পরন্তু সিরাজের প্রাসাদের নাম হীরাঝিলের প্রাসাদ, তাহাকে মনসুরগঞ্জের প্রাসাদও বলিত। বোধ হয় তাঁহারা হীরাঝিল ও মোতিঝিল একই ভাবিয়া এইরূপ ভ্রম করিয়া থাকিবেন। বাস্তবিক হীরাঝিলের ও মোতিঝিলের প্রাসাদ দুইটি স্বতন্ত্র। মোতিঝিল ভাগীরথীর পূর্ব্ব তাঁরে এবং হীরাঝিল পশ্চিম তীরে অবস্থিত ছিল। হীরাঝিলের প্রাসাদ অনেক দিন হইল, ধ্বংসকবলে পতিত হইয়াছে, হীরাঝিলও ভাগীরথীগর্ভে মিশিয়া গিয়াছে।
তাঁহারা আবার মোরাদবাগ ও মোতিঝিলকেও এক বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন। ইহাও তাঁহাদের ভ্রম। বেভারিজ প্রথমে উক্ত ভ্রমে পতিত হইয়াছিলেন; পরে স্বীয় ভ্রম সংশোধন করিয়া লন। মোরাদবাগও ভাগীরথীর পশ্চিম তীরে এবং হীরাঝিলের নিকট অবস্থিত ছিল। পর প্রবন্ধে হীরাঝিল ও মোরাদবাগের বিবরণ লিখিত হইতেছে। মোতিঝিলের তীরস্থ ভূভাগ তিন দিকে সলিলবেষ্টিত হওয়ায় অত্যন্তঃ সুরক্ষিত ছিল।
১৭৬০ খৃঃ অব্দের ২৪শে জুলাই মীর কাসেমের সৈন্ত- গণ ইংরেজদিগের হস্ত হইতে মুর্শিদাবাদ রক্ষার জন্ম মোতিঝিলে শিবির সন্নিবেশ করে; কিন্তু মেজর আডাসের অধীন ইংরেজসৈন্তকর্তৃক তাহারা পরাজিত হইলে নগরাধ্যক্ষ সৈয়দ মহম্মদ খাঁ সুতীতে পলায়ন করেন। ইংরেজেরা মুর্শিদাবাদ অধিকার করিয়া মীর জাফরকে পুনর্ব্বার সিংহাসন প্রদান করেন। ইংরেজরাজত্বের প্রারম্ভে মোতি- ঝিলের প্রাসাদে প্রতি বৎসর পুণ্যাহ সম্পন্ন হইত। ইংরেজদিগের দেওয়ানী গ্রহণের পর, ১৭৩৬ খৃঃ।
Leave a Reply