সারাক্ষণ ডেস্ক
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দুই মাসের প্রচার বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে উৎসাহিত করলেও আজ শনিবার সন্ধ্যায় এক্সিট পোল বা বুথফেরত জরিপ তাদের তীব্রভাবে আশাহত করল। দেশের যতগুলো গণমাধ্যম এই জরিপের দায়িত্ব নিয়েছিল, তাদের কেউই শাসক দল বিজেপির তৃতীয়বার সরকার গঠন নিয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় প্রকাশ করল না।
পাঁচ বছর আগে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৩০৩ আসন, তাদের নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেয়েছিল ৩৫৩। এবার মনে করা হচ্ছিল, পালাবদল না হলেও ‘ইন্ডিয়া’ জোট বিজেপিকে যথেষ্ট বেগ দেবে। আগের তুলনায় বিজেপি ও এনডিএর আসন কমে যাবে। কিন্তু অধিকাংশ সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, এনডিএ এবার আগেরবারের তুলনায় তাদের আসনসংখ্যা বাড়াতে চলেছে, যদিও তা ‘৪০০ পার’ হচ্ছে না।
সব জরিপই বিজেপি ও এনডিএ–কে ৩৫৯ থেকে ৩৯৫ আসন দিয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে দিয়েছে ১২৫ থেকে ১৬১ আসন। প্রতিটি জরিপ অনুযায়ী, বিজেপি শুধু হিন্দি–বলয়ে তার অবস্থান ধরেই রাখেনি, তারা দক্ষিণেও ডানা বিস্তার করতে চলেছে। যেমন তামিলনাড়ু ও কেরালা। এই দুই রাজ্যে বিজেপি কখনো একার ক্ষমতায় আসন জেতেনি। এবার জরিপ অনুযায়ী, বিজেপি তামিলনাড়ুতে ১ থেকে ৩টি আসন পেতে পারে, কেরালায়ও পেতে পারে ২–৩টি আসন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবার প্রবলভাবে দক্ষিণমুখী হয়েছেন। যে বিজেপি কর্ণাটক ছাড়া দাক্ষিণাত্যে হিন্দি–বলয়ের দল বলে পরিচিত ছিল, এবারের ভোটে তা ঘোচানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। জরিপের ফল অন্তত সেটাই বলছে।
তবে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আজ সন্ধ্যায় বৈঠক থেকে বেরিয়ে বুথফেরত জরিপ নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা নিশ্চিত হয়েছেন, ইন্ডিয়া জোট ২৯৫ আসনে জয়ী হবে।
কর্ণাটকে গতবার বিজেপি একা জিতেছিল ২৫ আসন। এবার বুথফেরত জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিজেপি একাই সে রাজ্যে ৪৮ শতাংশ ভোট পাচ্ছে। ২৮ আসনের মধ্যে পেতে চলেছে ২০–২২ আসন।
বিহারে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের মধ্যে কোনো টানাপড়েন ছিল না। বরং হাতে হাত ধরে আরজেডি, কংগ্রেস ও বামপন্থীরা লড়াই করেছিল। ইন্ডিয়া জোটের আশা ছিল, ৪০ আসনের এই রাজ্যে তারা অন্তত ২০টি জিততে পারবে। কিন্তু অধিকাংশ জরিপ অনুযায়ী, বিহারে ইন্ডিয়া জিততে চলেছে মাত্র ১০ থেকে ১৩টি আসন।
বিহারের মতো ‘ইন্ডিয়া’র সামান্য সাফল্য ঝাড়খন্ডে। সেখানে গতবার বিজেপি ও তার সহযোগীরা পেয়েছিল ১২টি। এবার সেখানে তারা কম করেও ৮টি আসন পেতে চলেছে বলে বুথফেরত জরিপের ধারণা। ছত্তিশগড়ের আদিবাসীরা পুরোপুরি বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ জরিপ অনুযায়ী, এই রাজ্যের ১১টি আসনের সবই বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে। গতবার বিজেপি পেয়েছিল ৯টি।
কংগ্রেসকে আশাহত করতে চলেছে মধ্যপ্রদেশ। এই রাজ্যের ২৯ আসনের মধ্যে কংগ্রেস বড়জোর একটি আসন জিততে পারে বলে জরিপের ধারণা।
গুজরাট (২৬), রাজস্থান (২৫), দিল্লি (৭), হরিয়ানা (১০), হিমাচল প্রদেশ (৪) ও উত্তরাখন্ডের (৫) সব আসন গতবার বিজেপি জিতেছিল। জরিপ অনুযায়ী, এবারও সেই ছবির বিশেষ পরিবর্তন হচ্ছে না। ব্যতিক্রম রাজস্থান। কংগ্রেস এই রাজ্যে ৫–৭টি আসন জিততে চলেছে।
এবার উত্তর প্রদেশে ৮০ আসনের মধ্যে গতবার পাওয়া ৬২ আসন বিজেপি টপকে যেতে পারে কি না, সেদিকে ছিল সবার নজর। এই রাজ্যে বিজেপি ৭০ থেকে ৭৫ আসন পেতে পারে বলে কোনো কোনো জরিপে এসেছে।
পশ্চিমবঙ্গে ভালো ফল করতে পারে বিজেপি। রাজ্যে এবার ২৩ থেকে ২৭ আসন জিতে তৃণমূল কংগ্রেসকে দ্বিতীয় স্থানে নামিয়ে দিতে চলেছে তারা। একই রকম তারা আশাবাদী ওডিশা, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্র প্রদেশ নিয়েও। জরিপ অনুযায়ী, তিন রাজ্যেই বিজেপির আশা পূর্ণ হচ্ছে। ওডিশায় তারা নিশ্চিতভাবে হতে চলেছে প্রথম দল।
তেলেঙ্গানায় বিআরএসকে চূর্ণ করে বিজেপি রাজনৈতিক পরিসর বড় করতে চলেছে। অন্ধ্র প্রদেশে তেলেগু দেশম পার্টির সঙ্গে জোট বেঁধে বিজেপি মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে।
এবারের অন্যতম ‘ব্যাটেল গ্রাউন্ড’ রাজ্য মহারাষ্ট্র। একমাত্র এই রাজ্যে এনডিএ ও ইন্ডিয়ার টক্কর জোরালো হয়েছে বলে জরিপের ধারণা। রাজ্যের ৪৮ আসন এবার এই দুই শিবিরের মধ্যে সমানভাবে ভাগাভাগি হতে চলেছে।
এবারের জরিপও বোঝাল, দেশের অধিকাংশ রাজ্যের ভোটার কেন্দ্রে শক্তপোক্ত সরকার চায়। টানা ১০ বছর শাসনের পরও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি জনগণের আস্থায় টোল পড়েনি।
এবারের ভোটে মূল নজর ছিল বিজেপি ৩০০ পার করে কি না এবং এনডিএ গতবারের মতো ৩৫০ আসনের বেশি আসন পায় কি না। অধিকাংশ জরিপ অনুযায়ী, দুটিই হওয়ার সম্ভাবনা। জরিপের সারাংশ, ৪ জুন গণনা শেষে নরেন্দ্র মোদিই শেষ হাসি হাসছেন। তৃতীয়বার ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি জওহরলাল নেহরুকে স্পর্শ করছেন।
মালয়েশিয়ায় দ্বিতীয় নিবাস গড়ার কর্মসূচি ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পের অধীনে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ।
দেশ থেকে অর্থ নিয়ে সেখানে আবাসন খাতে লগ্নি করেছেন তিনি। কিনেছেন বাড়ি। সিঙ্গাপুরে স্ত্রীর চিকিৎসা শেষে মালয়েশিয়ার ওই বাড়িতে গিয়েই আপাতত সপরিবারে বসতি গেড়েছেন।
মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকে তার অর্থ লেনদেনের সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণও আছে। দেশে-বিদেশে বেনজীরের সম্পদের অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম।
এদিকে দেশেও বেনজীরের আরও সম্পদের বিষয়ে তথ্য পাচ্ছে দুদক। সংস্থাটির কাছে অভিযোগ আছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে বিতর্কিত হয়ে দেশজুড়ে আলোচিত নাম মোতাজেরুল ইসলাম মিঠুর সঙ্গে বেনজীর আহমেদের ব্যবসা রয়েছে বলে জানা গেছে।
উত্তরাঞ্চলের দুটি জেলায় কয়েকশ বিঘা জমি কিনেছেন তারা। তার মধ্যে অন্তত তিনটি জায়গায় শত বিঘার ওপর গড়ে তোলা হয়েছে ‘নর্থ পোলট্রি খামার’। মুরগির খাদ্যের ব্যবসাও আছে তাদের। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করতে বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে উল্লিখিত তথ্য জানা গেছে।
বেনজীরের দুর্নীতি ও সম্পদের পাহাড় সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কেউ অন্যায় করলে তার শাস্তি দেশের আইন অনুযায়ী হবে। বেনজীরের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তিনি অন্যায় করেছেন, নাকি নির্দোষ, তিনি কি কর ফাঁকি দিয়েছেন, নাকি অন্যভাবে অর্থ সম্পদ গড়েছেন-তদন্ত শেষ হলেই সে অনুযায়ী বিচার করা হবে।’
তদন্ত চলমান অবস্থায় বেনজীরের দেশ ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সে দেশে আছে, নাকি বিদেশে চলে গেছে এটা আমি জানি না।’
দুদকের অনুসন্ধান ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিআইএফইউ) বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে অর্থ নিয়ে মালয়েশিয়ায় বাড়ি কেনার সুযোগ নেই। যারা সেখানে বাড়ি কিনেছেন তারা মূলত টাকা পাচার করেছেন। এক্ষেত্রে বেনজীর আহমেদও তার ব্যতিক্রম নয়।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ার স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রতনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে বেনজীর আহমেদের। তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে দেন মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক এজিএম সাব্বির।
এই ক্লাবের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ আয়ের অন্যতম কুশীলব এই সাব্বির। তার মধ্যস্থতায় রতনের মাধ্যমে বিপুল টাকা পাচার করেছেন বেনজীর আহমেদ।
এছাড়া মালয়েশিয়ার হুন্ডি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অন্যতম হুমায়ন কবিরের মাধ্যমেও বিপুল টাকা পাচার করেন বেনজীর আহমেদ। জনশক্তি রপ্তানি ব্যবসার আড়ালে মূলত জমজমাট হুন্ডি কারবার করেন হুমায়ন। কুয়ালালামপুরের সিচুয়াংসায় তার অফিস। হুমায়ন ও রতনের মাধ্যমে পাচার করা টাকায় পরিবারের থাকার জন্য একটি অত্যাধুনিক বাড়ি কিনেছেন বেনজীর। বিনিয়োগ করেছেন আবাসন খাতে।
রতন এখন ইউরোপের একটি দেশে এবং সাব্বির যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। হুমায়ন আছেন মালয়েশিয়ায়। বিএফআইইউয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বেনজীরের সম্পদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে দুদক কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, মালয়েশিয়া সরকার ২০০২ সালে ‘সেকেন্ড হোম’ কর্মসূচি চালু করে। এর আওতায় মালয়েশিয়ার ব্যাংকে নির্দিষ্ট পরিমাণ (প্রায় দুই কোটি টাকা) অর্থ জমা রেখে অন্য দেশের একজন নাগরিক দেশটিতে দীর্ঘমেয়াদি বসবাস ও অন্যান্য সুবিধা পান। তারা সেখানে বাড়ি কিনতে পারেন। বিনিয়োগ করতে পারেন ব্যবসা-বাণিজ্যে।
এই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের অনেকের মতো বেনজীর আহমেদও সেখানে বিনিয়োগ করেছেন। বেনজীরের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান শুরু হওয়ার পর গত ৪ মে তিনি সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে দেশত্যাগ করেন। সেখানে স্ত্রীর চিকিৎসা শেষে বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করতে পারেন।
জানা গেছে, দেশে-বিদেশে বেনজীরের সম্পদের তথ্য খুঁজতে গিয়ে নতুন আরও কিছু তথ্য পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বড় খোজাবাড়ি এলাকায় বিশাল পোলট্রি খামার রয়েছে। স্বাস্থ্যের বিতর্কিত ঠিকাদার মিঠুর সঙ্গে যৌথ মালিকানায় গড়ে তোলা এই খামারের নাম ‘নর্থ পোলট্রি খামার’।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নে ভিন্নজগৎ পার্কসংলগ্ন এলাকায় একই নামে রয়েছে আরেকটি খামার। এই খামার উদ্বোধনের সময় বেনজীর আহমেদ ও মিঠু উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া কিশোরগঞ্জ উপজেলার ধরেয়ার বাজার এলাকায় আরও একটি খামার রয়েছে। এসব খামারের নামে-বেনামে কয়েকশ বিঘা জমি কেনা হয়েছে বলে জানা গেছে। মিঠুর ভাই মানিক হাজি এই খামারগুলো দেখাশোনা করেন।
প্রসঙ্গত, আইজিপি থাকাকালে বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও পুলিশের অনুষ্ঠানে দুর্নীতিবিরোধী কড়া বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় থাকতেন বেনজীর আহমেদ। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর ভালোই ছিলেন তিনি।
কিন্তু গত এপ্রিল মাসে তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর তার সম্পদের অনুসন্ধানের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমনও তার সম্পদের তদন্ত করতে দুদকে আবেদন জানান। এরপর এ সংক্রান্ত তিন সদস্যের টিম গঠন করে কমিশন। এই টিমের প্রাথমিক অনুসন্ধানেই বেনজীর ও তার পরিবারের হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য নিশ্চিত হয় দুদক।
গত ২৩ ও ২৬ মে দুদকের দুই দফায় করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা বিভিন্ন সম্পত্তির দলিল, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও কোম্পানির শেয়ার জব্দের (ক্রোক) নির্দেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন। ২৩ মে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা প্রায় ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি এবং ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ ও অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের নামে এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া ২০৫ একর সম্পদের মধ্যে ১৪২ একর (৪৬৮ বিঘা) রয়েছে স্ত্রী জিসান মির্জার নামে। গত ২৬ মে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা ১১৯টি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দেন আদালত। এগুলোর মধ্যে রাজধানীর গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, সাভারের একটি জমি ছাড়াও মাদারীপুরের ১১৪টি দলিলের সম্পত্তি রয়েছে।
সেই সঙ্গে ৩৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও তার সিকিউরিটিজের (শেয়ার) টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। দুই দফা মিলিয়ে বেনজীর আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ৬২১ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া আদালতের নির্দেশে গত সোমবার পুঁজিবাজারের ইলেকট্রনিক্স শেয়ার সংরক্ষণাগার সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা সব বিও হিসাব (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) ফ্রিজ করে রাখতে নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এই আদেশ কার্যকর থাকা অবস্থায় হিসাবগুলোয় শেয়ার ও অর্থ লেনদেন করা যাবে না। আদালতের অন্যান্য আদেশও কার্যকর করা শুরু হয়েছে। আর দেশের বাইরের সম্পদ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিএফআইইউর মাধ্যমে আমেরিকা, কানাডা ও দুবাইয়ের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের ব্যাংক হিসাব, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ আছে কিনা তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম প্রকল্পে তার বিপুল বিনিয়োগের তথ্য পেয়েছে দুদক।
বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে কিছু অঞ্চলে অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর চারটি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সুরমার পানি সিটি করপোরেশনের নিচু এলাকায় ঢুকে পড়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। মহানগরের উপশহর, সুবহানিঘাট, যতরপুর, মেন্দিবাগ, কাজিরবাজার, মাছিমপুর, তালতলাসহ অনেক স্থানের মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। নতুন করে বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা আশা করছেন।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ‘ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেনি। গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলায় পানি অনেকটা কমেছে। তবে সিলেট সদর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জে পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।’
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে শুক্রবার থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। তবে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত রয়েছে। নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত না হলেও কিছু অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিটি করপোরেশনের নয়টি ওয়ার্ডসহ সদর উপজেলা, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জের ৫৯টি ইউনিয়নের ৬ লাখ ৯ হাজার ৭৩৩ জন বন্যাকবলিত হয়েছে। জেলায় ৫৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে আশ্রয় কেন্দ্রে আছেন ৩ হাজার ৩৪২ জন। জেলার আটটি উপজেলায় ৭৮১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, উজান থেকে ভাটির দিকে পানি নামতে শুরু করায় সিলেট নগর, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি লক্ষ করা যাচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে শুকনো ও রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে চারদিন ধরে ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল নেমেছে। পাশাপাশি সিলেটে ভারি বৃষ্টিও হয়। এ সময় নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা। মূলত জেলার প্রধান দুটি নদী সুরমা, কুশিয়ারাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি উপচে একের পর এক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলের খেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। অসংখ্য ঘরবাড়িও হয়েছে প্লাবিত। তবে গতকাল থেকে গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর উপজেলাসহ কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও অন্যান্য জায়গায় অপরিবর্তিত রয়েছে।
স্থানীয় সরকারের কয়েকটি পৌরসভার সাধারণ ও বিভিন্ন পদে উপনির্বাচন উপলক্ষে ঋণখেলাপিদের শনাক্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান ইতিমধ্যে নির্দেশনাটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে পাঠিয়েছেন।
এতে বলা হয়েছে, আগামী ২৬ জুন অনুষ্ঠেয় নারায়ণগঞ্জ জেলার কাঞ্চন পৌরসভার সাধারণ নির্বাচন, বরিশাল জেলার গৌরনদী পৌরসভার মেয়রের শূন্য পদ ও পাবনা জেলার ভাগুরা পৌরসভার মেয়রের শূন্য পদসহ চারটি পৌরসভার সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের শূন্য পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি অনুসারে ঋণখেলাপি ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। উল্লিখিত নির্বাচনে ঋণখেলাপি ব্যক্তিরা মনোনয়নপত্র দাখিল করলে যাতে তাদের প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য ঘোষণা করা যায়, তার জন্য আইনে নির্ধারিত সব ব্যাংক থেকে ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করা আবশ্যক।
মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন বিকাল ৪টার পর মনোনয়নপত্র দাখিলকারীদের নাম, পিতা/মাতা/স্বামীর নাম ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক স্বউদ্যোগে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে সংগ্রহ করার জন্য এবং সে আলোকে বিভিন্ন ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। এই অবস্থায় উল্লেখিত নির্বাচন উপলক্ষে ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন কিংবা তার পূর্বে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে প্রদান এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং অফিসারের দপ্তরে উপস্থিত থাকার নির্দেশনা প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
Leave a Reply