সারাক্ষণ ডেস্ক
হয়ত আপনি মৃদুমন্দ শীতকালের পর বসন্তের আগাম উপস্থিতির সাম্প্রতিক ধারাকে স্বাগত জানাতে পারেন, কিন্তু গরমের দিনের সংখ্যা খুব বেশি হলে আপনার বাগানের জন্য উপদ্রব ডেকে আনতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সাধারণ চারাগাছের কীটপতঙ্গ ও প্যাথোজেনের বংশবিস্তার ঘটে- এ ধারণা ব্যক্ত করেছেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটির মাইকোলজি এন্ড প্ল্যান্ট প্যাথোলজির এসোসিয়েট প্রফেসর ম্যাট ক্যাসন।
একই সময়ে অকালীন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে চরম আবহাওয়া পরিবর্তনশীল জলবায়ুর সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নেয় নি এমন চারাগাছের জন্য পীড়াদায়ক হতে পারে এবং তাদের আরও অরক্ষিত করে তুলতে পারে। “এসব পরিস্থিতি মূলত প্যাথোজেন ও কীটপতঙ্গের অনুকূলেই যায়” বলে ক্যাসন মন্তব্য করেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ, গাছপালা বৃদ্ধির মরশুম দীর্ঘতর হলে ছত্রাকের মতা প্ল্যান্ট প্যাথোজেনরা সংক্রামক বীজগুটি বেড়ে তোলার বেশি সময় পাবে। স্পাইডার মাইটের মত বাগানের কোন কোন কীটপতঙ্গও বেশি গরম পরিস্থিতিতে দ্রুততর গতিতে বংশবিস্তার করে।
“যখন আমরা রোগ নিয়ে ভাবি, তখন এটি ঘটার জন্য আমাদের তিনটি জিনিসের দরকার হয়। আমাদের দরকার এক সংবেদনশীল (পরজীবী) পরিপোষক এক বিষাক্ত প্যাথোজেন এবং এক অনুকূল পরিবেশ” বলে তিনি উল্লেখ করেন।” “ঐসব জিনিসের মধ্যে অন্তত দুইটি- সংবেদনশীল পরিপোষক এবং বিষাক্ত প্যাথোজেন- প্রায় সময়েই মাটিতে উপস্থিত থাকে। প্রকৃতপক্ষে পরিবেশে সামান্য পরিবর্তনই প্যাথোজেনকে ঐ পরিপোষকের উপর বংশবিস্তার করার সুযোগ করে দেয়।
কি আপনার বাগানকে আক্রমণ করতে পারে এবং আপনি কি করতে পারেন, তা এখানে বলা হচ্ছে। আপনার চারাগাছগুলো আক্রমণের মুখে রয়েছে কিনা তা কিভাবে বলা যায়। আপনার চারাগাছগুলো সংকটের মধ্যে পড়ে থাকতে পারে এমন লক্ষণগুলোর জন্য আপনি সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। আপনি কি কোন পতঙ্গকে প্রায়ই আশেপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন? মোল্ড (ছত্রাক) কি চারাগুলোর পাতা বা অন্যান্য অংশ ঢেকে রাখছে? আপনি কি অঙ্গমারী বা ক্ষয়রোগ অথবা চারার বিকাশ রুদ্ধ হওয়াসহ উদ্বেগজনক উপসর্গ লক্ষ্য করছেন? পাতাগুলো কি হলুদবর্ণ বা বাদামী বর্ণ ধারণ করছে অথবা নিস্তেজ হয়ে পড়ছে? কি আপনার চারাগুলোর সম্ভবত ক্ষতি করছে তা বের করতে সাহায্য পেতে ক্যাসন ইন্যাচারেলিস্ট অ্যাপ বা সামাজিক মাধ্যমগুলোর গার্ডেনিং গ্রুপগুলোর মত অনলাইন রিসোর্চকে কাজে লাগানোর সুপারিশ করেন। সেখানে আপনি ছবি আপলোড করে সমস্যাটি চিহ্নিত করতে সম্ভবত সাহায্য পেতে পারেন। স্থানীয় চারারোগ ক্লিনিকও চারাগুলোর ক্ষতি নিরূপণ করতে পারে।এখানে বাগানের কয়েকটি কীটপতঙ্গের নাম উলেখ করা হল, যেগুলো সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে ।
এফিড: এসব কীটপতঙ্গ দেখতে ক্ষুদ্র- প্রায় ২ থেকে ৪ মিলিমিটার দীর্ঘ- শরীর নাশপাতি আকারের। সেগুলো সবুজ, কালো, লাল, হলুদ, বাদামী বা ধূসর বর্ণের হতে পারে। এফিডের চারা খাওয়ার কয়েকটি লক্ষণ হল মোচড়ানো ও কোঁকড়ানো পাতা, হলদ হয়ে যাওয়া পাতা, বিকাশ-রুদ্ধ বা মৃত অঙ্কুর, এবং চারার নিকৃষ্ট মানের বিকাশ। স্পাইডার মাইট: দুই দাগযুক্ত স্পাইডার মাইটই সবচেয়ে সাধারণ ধরনের প্রজাতি। তাদের আটটি পা এবং তারা আকারে একটি বালু-কণা বা কোন পেন্সিল দিয়ে আঁকা ফুল-স্টপ চিহ্নের প্রায় সমান। আপনার কোন স্পাইডার মাইট-সৃষ্ট সমস্যা থাকতে পারে, যদি নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো আপনার চোখে পড়ে: ফ্যাকাশে বা অস্বাভাবিকভাবেই হলুদ রংয়ের পাতা; ছোট ছোট বিন্দু বা দাগ আঁকা পাতা, বা যখন পাতাগুলোর উপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা ব হলুদ দাগ রয়েছে; তামাটে বা বাদামী রং ধরছে এমন পাতা; ধূলিমলিন বা ধরতে কাঁকুড়ে লাগে এমন পাতা: নতুন গজানো চারার উপর এবং পাতাগুলোর ভিতর মাকড়সা জালের মত সূক্ষ্ম জালের বুনন।
স্কোয়াশ বাগ: সাধারণত গাঢ় ধূসর থেকে গাঢ় বাদামী রংয়ের চেপ্টা বড় আকারের এ পতঙ্গগুলো ৫/৮ ইঞ্চি দীর্ঘ। তারা সাধারণত স্কোয়াশ ও লাউকে আক্রমণ করে, কিন্তু তারা শসার মত লাউ প্রজাতির চারাগুলোকেও আক্রমণ করতে পারে। এ পতঙ্গে খাওয়ার লক্ষণগুলো হল পাতাগুলোর উপর হলুদ দাগ পড়া, যেগুলো শেষ পর্যন্ত বাদামী রং ধরে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। হর্নওয়ার্ম: এসব বড় আকারের শুঁয়োপোকার শিংয়ের মত লেজ রয়েছে এবং এগুলো টমেটো খেতে ভালবাসে। তারা পাতা চিবায় এবং চারাগুলোকে পুরোপুরি পত্রশূন্য করে দিতে পারে এবং ফলাদির গভীরে কামড় বসাতে পারে।
অদৃশ্য পতঙ্গ: যা আপনার চারাগুলোকে আক্রমণ করতে পারে তা মাটিতে দৃষ্টির বাইরে লুকিয়েও থাকতে পারে। মৃদুমন্দ শীতকালীন তাপমাত্রা প্রায়ই মাটিকে বেশি ভেজা করে। ক্যাসন একথা বলেন।.
তিনি বলেন, সাধারণত শীতকালে যখন মাটি হিমশীতল থাকে, তখন চারাগুলো সুপ্ত অবস্থায় থাকে এবং সেখানে ছত্রাকের তৎপরতা প্রায়ই কমে যায়। কিন্তু উষ্ণতর আবহাওয়ার অর্থ আরও শীতকালীন বৃষ্টিপাত মাটিকে ভিজিয়ে সম্পৃক্ত করে ফেলতে পারে। এ ভেজা মাটি প্যাথোজেন সৃষ্টির অনুকূল, যা সুপ্ত বহুবর্ষজীবী চারার শেকড়কে আক্রমণ করে আরও রোগের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এখানে আপনার মাটিতে লুকিয়ে থাকা
আক্রমণকারীদের বিষয়ে কিছু সাধারণ সমস্যার কথা বলা হল: ওয়াটার মোল্ড পাইথিয়াম ও ফাইটোফথোরা দুই ধরনের মোল্ড যারা মাটির সবখানেই আছে। তারা রুট ও ক্রাউন রট রোগ সৃষ্টি করে, যার ফলে চারার মাটির উপরে থাকা অংশগুলোর রং হলুদ হয়ে যায়, বিকাশ রুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং সজীবতা হারিয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত শেকড়গুলো নরম ও মণ্ডবৎ এবং কাঁচবৎ ও গাঢ় বাদামী পানিতে ভেজা বলে মনে হতে পারে। সাউদার্ন ব্লাইট: মাটিতে, আগাছাসহ চারাগাছে এবং প্ল্যান্ট ডাবরিসে বাস করে এমন এক ছত্রাকই এ রোগের কারণ। এ রোগের ফলে প্রাথমিকভাবে চারার নিম্ন পাতাগুলোকে জলসিক্ত মনে হয় বা কাণ্ডের নিম্ন স্তরে জলসিক্ত দাগ দেখা যায়। সংক্রমিত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই সংক্রামিত চারাগুলো প্রায়ই হলুদ বর্ণ ধারণ করে ও নির্জীব হয়ে পড়ে- বিশেষত যখন আবহাওয়া আর্দ্র ও উষ্ণ হয়। এটি ক্রাউন রট রোগেরও কারণ হতে পারে। ভার্টিসিলিয়াম উইল্ট: এটি এক মাটিবাহিত ছত্রাকজনিত রোগ যা অনেক ফল, শাক-সব্জী ও শোভাময় চারাগাছকে আক্রমণ করে থাকে। এটি চারাগাছকে শেকড়ের মাধ্যমে সংক্রমিত করে ডাইব্যাক ঘটায় এবং পাতাগুলো হলুদবর্ণ ও নির্জীব হয়ে যায়। কিভাবে আপনার চারাগাছগুলোকে বাঁচাতে হবে? আপনি কোন সমস্যাকে চিহ্নিত করার পর কাছাকাছির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্প্রসারণ কর্মসূচীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সহায়ক হতে পারে।
এসব বিশেষজ্ঞ সমন্বিত কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত নির্দেশনাসহ কিভাবে কীটপতঙ্গ ও রোগবালাইয়ের মোকাবেলা করতে হবে সেই ব্যাপারে সহায়তা প্রদান করতে পারেন। যদি আপনার কীটনাশক ও ছত্রাকনাশকের প্রয়োজন হয়, তবে তাঁরা আপনার কতখানি প্রতিষেধক ব্যবহার করা উচিত, সেই সংক্রান্ত প্রশ্নেও সহায়তা করতে পারেন। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে যদি আপনি কোন মারাত্মক কীটপতঙ্গের সম্মুখীন হন, তবে আপনার আরও ক্ষতি পরিহার করার এবং সংক্রামিত চারাটি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
স্মিথসোনিয়ান গার্ডেনসের প্রধান হোর্টিকালচারিস্ট জন সল্টিয়েল একথা বলেন। তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, আপনি বিশেষভাবে মূল্যবান নমুনার চারাগাছের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম করতে পারেন। আক্রান্ত চারাগাছগুলোকে অপসারণ করা হলে তাদের স্বাস্থ্যবান প্রতিবেশীদের রক্ষায় সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। “ঐ কীটপতঙ্গ কাছাকাছির আরেকটি চারাগাছে ছড়িয়ে যেতে পারে, যা তার এক বিকল্প পরিপোষক” বলে সল্টিয়েল উল্লেখ করেন। আপনার চারাগাছগুলোকে রক্ষা করতে হলে সক্রিয় হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেন।
সমস্যাদি এড়াতে সহায়তা পেতে আপনি কি করতে পারেন তা এখানে দেওয়া হল। ভাল এক জায়গা বেছে নিন। আপনি চারা লাগানোর আগে আপনার মাটির উর্বরতা পরীক্ষা করে নিন। আপনি যে সঠিক জায়গাতেই চারা লাগাচ্ছেন সে ব্যাপারেও আপনাকে নিশ্চিত হওয়া উচিত। সল্টিয়েল বলেন, দৃষ্টান্তস্বরূপ, বেশি ঠাণ্ডা উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে সাধারণত জন্মে থাকে এমন চারাগুলোতে আপনার বাগানের সবচেয়ে গরম অংশে লাগানো উচিত নয়। অবসন্ন চারাগুলো কীটপতঙ্গ ও রোগের বিরুদ্ধে তেমন প্রতিরোধক না হওয়ায় আপনার চারাগুলোকে যথাসম্ভব স্বাস্থ্যবান রূপে গড়ে তুলুন।
সল্টিয়েল বলেন, “কীটপতঙ্গ আসলে অবসাদগ্রস্ত চারাটিকেই বেছে নেবে; যা কিছুই ঘটুক তারা তা বুঝতে পারে। তারা সেটিকেই প্রথমে আক্রমণ করতে যাচ্ছে।” আপনার চারাগুলোকে খানিকটা জায়গা দিন। ঘেঁষাঘেঁষি কীটপতঙ্গ ও রোগের প্রাদুর্ভাবের সুযোগ করে দেয় বলে ক্যাসন মন্তব্য করেন। আগাছা নিয়ন্ত্রণও সহায়ক হতে পারে, কারণ এতে আপনার চারাগুলোর চারদিকে বায়ু চলাচল বৃদ্ধি ও আর্দ্রতা হ্রাস পায়। এর ফলে কীটপতঙ্গ ও প্যাথোজেনের বংশবিস্তার কঠিনতর হয়ে পড়ে। তিনি বলেন, আপনার বাগান রক্ষায় কোন সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণেই সমাধান নিহিত। “আমরা আমাদের বাগানগুলোর পরিবেশ সর্বোত্তম করার প্রচেষ্টায় এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সূক্ষ্ম পরিবর্তন আনছি, ফলাফলের উপর যেগুলোর গভীর প্রভাব বিস্তার করতে পারে” বলেও তাঁর মন্তব্য।
Leave a Reply