সারাক্ষণ ডেস্ক
জাপানের সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশটির মোট প্রজনন হার ১৯৪৭ সালে রেকর্ড রাখা শুরু করার পর থেকে গত বছর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। পরিসংখ্যান মতে, সন্তান জন্মদানে সক্ষম বছরগুিলির মধ্যে একজন মহিলার ধারণ করা প্রত্যাশিত সন্তান সংখ্যা ১.২০-এ নেমে এসেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বুধবার জনসংখ্যা পরিসংখ্যান ২০২৩ প্রকাশ করেছে।
১৯৯৫ সালে গড়ে ২৭.৫ বছর বয়সেই একজন নারী মা হতেন আর ২০২৩ সালে সেটি এসে ঠেকেছে ৩১.০ বছরে
এখানে মোট উর্বরতার হার বলতে একজন নারীর তার জীবদ্দশায় কতজন সন্তান জন্ম দিতে পারেন তা বোঝায়।এখানে সরকার মোট উর্বরতার হার গণনা করতে ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে প্রতিটি বয়সে মহিলাদের জন্ম দেওয়ার হারকে বুঝিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় আরো জানিয়েছে যে দেশব্যাপী এই সংখ্যা গত বছর ১.২০ তে নেমে এসেছে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ০.০৬ পয়েন্ট কম।
আঞ্চলিক হিসাব অনুসারে, রাজধানী টোকিওর জন্মহার প্রথমবারের মতো ১.০ এর নিচে নেমে এসেছে। আগের বছরের ১.০৪ থেকে কমে ০.৯৯ এ দাঁড়িয়েছে। এবং দেশটির ৪৭টি অঞ্চলের মধ্যে এটি ছিল সর্বনিম্ন। সর্বোচ্চ সংখ্যাটি ছিল ওকিনাওয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা যেখানে ১.৬০তে নেমে এসেছে। এখানে আগের বছর ছিল ১.৭০।
দেশব্যাপী, ২০২৩ সালে দেশে বসবাসকারী জাপানি নাগরিকদের মোট জন্মের সংখ্যা ছিল ৭২৭,২৭৭, যা আগের বছরের তুলনায় ৫.৬% কম। জনসংখ্যার স্বাভাবিক হ্রাস ৬.৩% বৃদ্ধি পেয়ে ৮৪৮,৬৫৯-এ পৌঁছেছে। এই হ্রাস ২০০৭ সাল থেকে গত ১৭ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে।
নিম্নমূখী উর্বরতার এই প্রবণতা মোট উর্বরতার হারে স্পষ্টভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে গত পাঁচ দশক ধরে। তবে যদিও উর্বরতা ২০০০ এর পরে কিছুটা বেড়েছে কিন্তু ২০১৬ সাল থেকে এটি ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে।
জাপানের জনসংখ্যা আগামী দশকগুলিতে দ্রুত হ্রাস পাবে বলে মনে হচ্ছে, যা অর্থনীতি এবং সমাজের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। যদিও শুধু জাপানই জনসংখ্যাগত নিম্নহারের সমস্যায় একা ভুগছেনা।
এশিয়ার বড় অর্থনীতির কিছু দেশে জন্মহার কমে যাওয়াটা অন্যতম উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই প্রবণতা বদলাতে দেশগুলোর সরকার কয়েক শ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে।
সিঙ্গাপুরে ২০২২ সালে উর্বরতার হার ছিল ১.০।২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসে সরকার ঘোষণা করেছে প্রথমবারের মতো ১.০-এর নিচে ০.৯৭-এ নেমে এসেছে ৷ দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থাও জানায় যে গত বছর তাদের উর্বরতার হার ছিল ০.৭২ যেখানে ২০২২ সালে ছিল ০.৭৮ ৷
আবার কিছু ধনীক অর্থনীতির দেশগুলিও জনসংখ্যার ক্রমহ্রাসমান সমস্যার সম্মুখীন। এমনকি ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যা অধ্যুষিত চায়নাতেও গত দুই বছর ধরে জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
দেশে জন্মহার বাড়াতে এবার অভিভাবকদের আর্থিক প্রণোদনা বাড়াল জাপানের সরকার। আগামী ২০২৩ সাল থেকে প্রত্যেক সদ্যোজাত সন্তানের জন্য অভিভাবকদের এককালীন ৫ লাখ ইয়েন (৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫০২ টাকা) দেওয়া হবে।
একটি দেশের জনসংখ্যা স্থিতিশীলতার জন্য ২.১% উর্বরতা হার প্রয়োজন।
জাপান সরকার জন্মহারের নিম্নমুখীতা রোধ করার জন্যে শিশুদের লালন-পালনকারী পরিবারগুলিতে সহায়তা প্যাকেজ চালু করছে ৷ পাশাপাশি , প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা শিশু সম্পর্কিত নীতিমালাগুলিকে তত্ত্বাবধানের জন্য গত বছর শিশু ও পরিবার সংস্থা গঠন করেছেন।
বুধবার, দেশের সংসদ ডায়েটে একটি সংশোধিত আইন পাস করেছে । এই আইনে পরিবারগুলির জন্য আর্থিক সহায়তা জোরদার , শিশু ভাতা বাড়ানো, সন্তান জন্মদান এবং উচ্চ শিক্ষার সাথে সম্পর্কিত আর্থিক বোঝা হ্রাস করা যুক্ত হয়েছে।
নবজাতকের সংখ্যা হ্রাসের মূল কারণ
বিবাহের হার হ্রাস এবং সন্তান জন্মদানের বয়সেও নারীদের বিয়ে না করে থাকাকে শিশু জন্মহারের সংখ্যা হ্রাসের মূল কারণ হিসাবে দেখা গেছে।
বুধবার প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালে প্রতি ১,০০০ জনে বিবাহের সংখ্যা ছিল ৩.৯ যা আগের বছরের ৪.১ থেকে কম। এটি একটি রেকর্ড। ১৯৯৫ সালে গড়ে ২৭.৫ বছর বয়সেই একজন নারী মা হতেন আর ২০২৩ সালে সেটি এসে ঠেকেছে ৩১.০ বছরে ।
Leave a Reply