ডা. জাহেদ পারভেজ
চুল ত্বকেরই একটি বিশেষ অংশ। মাথার চুল ঝরে দিন দিন টাক পড়ে যাচ্ছে বা চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে, এমন লোকের সংখ্যা অনেক। প্রতিদিন ১০০টির বেশি চুল পড়লে মাথা ফাঁকা হতে শুরু করে। বিশেষজ্ঞরা এর বিভিন্ন কারণের কথা বলে থাকেন।
কারণ: চুল পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে মানসিক অশান্তি, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা, অপুষ্টি, অবৈজ্ঞানিক উপায়ে ডায়েট ইত্যাদি। এ ছাড়া জ্বর, লিভার ও কিডনির অসুখ, কেমোথেরাপি নেওয়ার পরের রক্তস্বল্পতা, কিছু ওষুধ, যেমন ইনডোমেথাসিন, জেন্টামাইসিন ইত্যাদির কারণেও চুল অতিমাত্রায় পড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া খুশকি, উকুন, শুষ্কতা ও চটচটে মাথার ত্বকও চুলের শত্রু।
তরুণ প্রজন্মের খাদ্যাভ্যাস ও ঘুমের অনিয়ম চুল পড়ার কারণ হিসেবে গণ্য হয়। তা ছাড়া বর্তমানে পড়াশোনাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকে মানসিক চাপে থাকে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে এবং মানসিক চাপ বেশি থাকলে চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। সকালে নাশতা না করা, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড খাওয়ার অভ্যাস, সবজি ও ফলমূল এড়িয়ে চলা ইত্যাদি কারণে অপুষ্টি তৈরি হয় শরীরে। এ জন্যও চুল পড়ে। খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের অনিয়ম ছাড়া আরও অনেক কারণেই চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যা বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়ও চুল পড়ে।
চুল পড়ার আরেকটি ধরন হলো ‘অ্যালোপেশিয়া এরিয়েটা’। এ ক্ষেত্রে মাথার এক বা একাধিক জায়গায় ১ থেকে ৫ সেন্টিমিটার এলাকার চুল একসঙ্গে খালি হয়ে যেতে থাকে। যেকোনো বয়সের নারী-পুরুষনির্বিশেষে সবাই এই রোগের শিকার হতে পারেন। এমনকি এটি শিশুদেরও হতে পারে। প্রতি পাঁচজন অ্যালোপেশিয়া রোগীর মধ্যে একজনের পরিবারের অন্য সদস্যের এই সমস্যা আছে। বিভিন্ন কারণে এই রোগ হতে পারে।
এ ছাড়া জিনগত কারণে চুল পড়তে পারে। বংশের কারও চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা থাকলে উত্তরাধিকার সূত্রে টাক মাথা পেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মাথার পাশের চুলগুলো না পড়লেও মাঝের চুল পড়ে যেতে থাকে। আবার অনেক সময় এই বংশপরম্পরা আপনাকে দিয়েই শুরু হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে চুল ধরে রাখা যায়। তবে তা পুরোপুরি সারানো যায় না।
চিকিৎসা: চুল পড়া রোধে এর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। আর চুলের পুষ্টি আসে হেয়ার বালবের শিরা-উপশিরা থেকে। তাই চুলের পুষ্টি সঞ্চালন করতে হলে হেয়ার ফলিকলের নিচে, ত্বকের গভীরে হেয়ার বালবে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে হবে।
রোগীভেদে চিকিৎসক খাওয়ার ওষুধ, চুল ঝরা বন্ধের লোশন, শ্যাম্পু ইত্যাদি প্রেসক্রাইব করে থাকেন। আধুনিক চিকিৎসা হচ্ছে মেসোথেরাপি ও পিআরপি। এ ধরনের আধুনিক চিকিৎসা করতে বেশ কয়েকটি সেশন ও সময় লাগে। অ্যান্ড্রোজেনিক অ্যালোপেশিয়া বা বংশগত টাকের জন্য এটি একটি কার্যকরী চিকিৎসা। চুলের চিকিৎসা দীর্ঘ মেয়াদে নিতে হয়। তাই ধৈর্য প্রয়োজন এবং লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন কাম্য।
লেখক: সহ অধ্যাপক ডাঃ জাহেদ পারভেজ চম যৌন এলার্জি ও চুল রোগ বিশেষজ্ঞ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ চেম্বার ডাঃ জায়েদ হেয়ার এন্ড স্কিন সেন্টার গ্রীণ রোড পানহপথ ১৫/১এইচ সাবামুন টাওয়ার ৬ তলা ঢাকা
Leave a Reply