পৃথিবীর মহাকাব্য গুলির অপমানিতের চরিত্র আঁকার দিক মহাভারতই এগিয়ে। দৌপদীকে যতটা অপমান করা হয় এতটা অপমানিতের চরিত্র আর কোন মহাকাব্যে নেই।
দ্রৌপদি অগ্নি থেকে জম্ম নেয়া। অর্থ সে ভূমি। তাছাড়া নারী আর ভূমি মূলত একই। দুই-ই ধারণ ও জম্ম দেয়। দ্রৌপদির অপমানের অর্থ একটি ভূমির অপমান। ওই ভূমিতে যারা সম্মানের সঙ্গে বাস করতে চায় তাদের অপমান।
রাজা ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ। তার শত পুত্রের মধ্যে এক পুত্র ছাড়া আর সবাই তখন দুঃশাসনের পথে। পৃথিবীতে সব রাজারই একটি নিয়তি আছে- বেশি ক্ষেত্রে রাজা এক সময়ে গিয়ে অন্ধ হয়ে যায়। আর তখন তার দুঃশাসনের মতো পুত্ররা, শকুনির মত আত্মীয়রা আর তাদের সহযোগীরা যারা কিছুদিন আগে শেয়ালের মতো নিশাচর ছিলো- তারা সকলে সামনে আসে। আর তারা সকলে মিলে রাজার অন্ধত্ব নিয়ে ভূমি আর মানুষকে অপমান করা শুরু করে।
পৃথিবীতে সব থেকে ভারী অপমান। সাধারণ মাথা, শ্রদ্ধেয় শির আর বীরের শীর দাড়ার পক্ষে অপমানের ভার বয়ে চলা সব থেকে কষ্টের। কিন্তু অন্ধ রাজা, শকুনি আত্মীয় আর শিবার মতো সহচররা কখনই বুঝতে পারে না অপমানের তীব্র জালা ও জগদ্দল পাথরের মতো ভারকে।
ভূমিকে অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ্য করতে হয়, মানুষকে অনেক রোগ শোক, অনেক উত্থান- পতন সহ্য করতে হয়। হয়তো এই পথে তাকে কখনও কখনও অন্ধ রাজার অপমানও সহ্য করতে হয়।
রাজা অবশ্য তখন বুঝতে পারে না তাকে ঘিরে চলছে বস্ত্র হরণের মতো অপমান। রজশীলা নারীর মতো সব থেকে পবিত্রতম মানুষদেরকে এই অপমান সহ্য করতে হয়।
তবে অপমানের ভারে কেউ নুয়ে পড়ে না। অজুর্নের মতো হয়তো বনবাসে যায়। তবে মনে রাখা দরকার,অর্জুন বনবাসে গেলেও গান্ডীব তার হাতে। শকুনি, শিবাদের শুধু কুমতলব ছাড়া অন্য কোন শক্তি বা অস্ত্র নেই। তাই ন্যায়ের বা স্বর্গীয় অস্ত্র গান্ডীব যখন ঘুরে দাঁড়ায় তখন কুমতলবের রক্তপান করে অতি সাধারণ ভীমসেন।
এ কারণে যে কোন দেশের যে কোন রাষ্ট্র পরিচালককে অন্ধ হলেও পাশা খেলায় শুকুনি জিতেছে বলে আনন্দিত হতে নেই। বরং তাকে রক্ষা করতে হয় দ্রৌপদির বস্ত্র। রক্ষা করতে হয় ভূমি ও মানুষকে অযাচিত অপমানের হাত থেকে।
Leave a Reply