শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:০২ পূর্বাহ্ন

সিয়ামের ছোট্ট জীবনে দীর্ঘ পথচলা

  • Update Time : রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪, ১১.৫৯ পিএম

ফয়সাল আহমেদ

আমি সিয়াম। বর্তমানে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক ভর্তি আছি। ছোট থেকে স্বপ্ন ছিলো ভর্তি হবো সরকারি মেডিকেল কলেজে, লেখাপড়া  শেষ করে অনেক বড় ডাক্তার হবো।এই স্বপ্ন নিয়েই ভর্তি হয়েছিলাম ময়মনসিংহ নটরডেম কলেজে। হয়তো ভাগ্য আমার সহায় ছিলো না কারণ এর আগে ২০১৭ সাল থেকে কোনো এক অজানা রোগে ভুগছিলাম।রোগ টা ক্রমান্বয়ে জটিল আকার ধারণ করেছিলো। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছিলাম, ঢাকাতে হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম ৬ মাস। প্রত্যেক ডাক্তার টেস্ট করানোর পর রিপোর্ট দেখে বলতো আমি অতিরিক্ত চিন্তা করি।আমার অবস্থা দেখে আম্মা প্রতিদিন কাঁদতো।বুক ধড়ফড় আরো নানান ধরনের জটিলতার জন্য আমি এসএসসি তে এক বছর পিছিয়ে পড়ি।  হারিয়ে ফেলি স্কুলের অনেক বন্ধুবান্ধবদের।

পরবর্তীতে অসুস্থতা নিয়েই ২০২০ এ এসএসসি পরিক্ষা দিলাম। বেশ ভালো ফল করেছিলাম। তার মধ্যেই আম্মার সিদ্ধান্তে ভর্তি হয়েছিলাম ময়মনসিংহ নটরডেম কলেজে। শুরু হয়েছিলো মহামারী করোনা সাথে আবার আমার সেই বিদঘুটে অসুস্থতা। এইচএসসি পরিক্ষার কিছু মাস আগে থেকে আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি সুস্থ অনুভব হচ্ছিলো। ভালোভাবেই এইচএসসি পরিক্ষা দিলাম এবারো ভালো রেজাল্ট করলাম। স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হওয়া তাই ভর্তি হয়েছিলাম মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টারে। ভর্তি যুদ্ধে সবাই নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করে- আমিও তাই করেছিলাম। মেডিকেল পরিক্ষা দিলাম রেজাল্ট হলো, চান্স পাইনি। বিষন্নতা ঘিরে ধরেছিলো একদম ভেঙে পড়েছিলাম। বিষন্নতায় প্রথমবার ঢাবি, রাবি,চবি ভর্তি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করি নি। গুচ্ছ এবং জাবি পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করেও ভালো ফলাফল করতে পারিনি। এইভাবে অনেকদিন চলে গিয়েছিলো আশেপাশের মানুষদের কথা শুনতে হতো। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম দ্বিতীয় বার পরিক্ষা দিবো এমন সময় সাহস জুগিয়েছিল আমার আম্মা ও তার সঙ্গে আমার কিছু বন্ধু। তারা সব ধরনের সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত ছিলো।

 সবারর সাপোর্ট পেয়ে দ্বিতীয় বার আবার মেডিকেলের জন্য প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করি নিজেকে ঘর বন্দী করে নিয়েছিলাম। নিজেকে বুঝাতাম বড় ধরনের  পরিশ্রমী করতে হবে। কোচিংয়ের পরিক্ষাগুলোতে ভালো করা শুরু করেছিলাম নিজের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস চলে এসেছিলো। এভাবে পরিক্ষা চলে এলো।পরিক্ষার কিছুদিন আগের সময় খুবই বাজে ভাবে গিয়েছিলো মনে হচ্ছিলো।  সব ভুলে যাচ্ছি, ঘুম হচ্ছিলো না। এভাবেই পরিক্ষার সময় চলে এলো। বেশ ভালো ভাবে পরিক্ষা দিলাম। মনে মনে ভেবে নিয়েছিলাম এইবার হয়েই যাবে। কিন্তু ভাগ্য এবার ও সহায় হয় নি। এইবার ও সুযোগ পেলাম না নাম্বার পেলাম ৬৫.৫০। ১. ২৫ জন্য হলো না। এইবার সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়লাম।মনে হয়েছিলো দ্বিতীয়বার মেডিকেল প্রিপারেশন নেওয়া আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিলো। ২০২৩ সালের মেডিকেল পরিক্ষা শেষ হওয়ার ১ মাসের মধ্যেই ঢাবি, রাবি, চবি, জাবি এক্সাম শেষ হয়ে যায়। এইটুকু সময়ের মধ্যে ভার্সিটির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করাটা আমার জন্য সহজ ছিলো না। যারা ফলে –

চবি- বাংলায় ফেল

রাবি-মেরিট ১৭১৩

জাবি- মেরিট ১৫২৭

পরিক্ষা ভালো হইলো কিন্তু ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলাম না কোথাও।

আমার জীবনের অন্য কারোর মতো এমন নয় যে প্রথম বার কোথাও চান্স হয়নি দ্বিতীয় বার অনেক ভালো জায়গায় নিজের জায়গা করে নিয়েছে। গল্পটা আরেকটু অন্যরকম।

রাবি,জাবির পর গুচ্ছ পরিক্ষার আগে আরো ৩০ দিনের মতো সময় পেলাম।  নিজেকে সম্পূর্ণ আবদ্ধ  করেছিলাম পড়াশুনায়। বিষন্নতা, কিছুটা অসুস্থতা আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ইচ্ছা নিয়ে আবার শুরু করেছিলাম। কোথাও একটা  চান্স পেয়ে মায়ের মুখের হাসিটুকু দেখার খুব ইচ্ছা ছিলো।

অবশেষে পাবলিকিয়ান হওয়ার স্বপ্ন পূরন হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। প্রথম মেরিটে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এসেছে পরবর্তীতে কি আসবে তার জন্য অপেক্ষা করছি।

আমার মতো তোমাদের অনেকের জীবনে হয়তো এমন সমস্যা নেই। অনেকের তো এর থেকে বেশি সমস্যা থাকে আবার অনেকের কম। যে যেমন অবস্থাতেই থাকো না কেনো নিজেকে কখনো ব্যর্থ ভেবো না। সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাবা সফলতা একদিন আসবেই। আমি এ আস্থায় ভর করে পথ চলি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024