সারাক্ষণ ডেস্ক
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী দলগুলো বড় সাফল্য পেয়েছে। কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর এই সাফল্য ইউরোপের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথে অনিশ্চয়তা যোগ করেছে।
চার দিনের এই নির্বাচন গতকাল রোববার শেষ হয়। নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২১টি দেশের ভোটাররা ভোট দেন। ভোটারের সংখ্যা ৩৫ কোটি।
ফ্রান্সে মেরিন লে পেনের ন্যাশনাল র্যালি পার্টি ভোটে এমন পরিমাণে আধিপত্য বিস্তার করেছে যে ম্যাখোঁ অবিলম্বে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার যুদ্ধ নিয়ে ইসরাইলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় মতবিরোধ চরম আকার ধারণ করেছে। এর জেরে পদত্যাগ করেছেন মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ। রোববার তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন। গাজা যুদ্ধের মধ্যে তার এ পদত্যাগকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। খবর আলজাজিরা ও সিএনএনের।
বেনি গ্যান্টজ বলেন, নেতানিয়াহু আমাদের প্রকৃত বিজয়ের দিকে অগ্রসর হতে বাধা দিচ্ছেন। এ কারণেই আমরা আজ জরুরি সরকার ছেড়ে যাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, এমন একটি নির্বাচন হওয়া উচিত যা এমন একটি সরকার গঠন করবে- যে সরকার জনগণের আস্থা অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। আমি নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানাই, সবার মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করুন।
নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধের তদারকি করার জন্য গত বছর জরুরি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। তিন সদস্যের এ মন্ত্রিসভায় বেনি গ্যান্টজ অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ইসরাইলি রাজনীতিতে তাকে নেতানিয়াহুর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়।
টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে জরুরি সরকার ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন বেনি গ্যান্টজ। তখন তিনি বলেন, নেতানিয়াহু গাজা যুদ্ধ পরবর্তী পরিকল্পনা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হলে তিনি তার সরকার ছেড়ে যাবেন। গত শনিবারই গ্যান্টজ পদত্যাগ করবেন বলে ধারণা করা হয়েছিল। তবে ওইদিন ইসরাইলি বাহিনী এক অভিযানে গাজায় হামাসের হাতে বন্দি চার জিম্মিকে উদ্ধার করলে পদত্যাগের ঘোষণা স্থগিত করেন তিনি। ওইদিন বন্দি উদ্ধারের নামে ইসরাইর যে হামলা চালিয়েছে তাতে ২৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
চীনের ঋণে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। জি টু জি (সরকার টু সরকার) পদ্ধতিতে হওয়ায় এ প্রকল্পে কোনো প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। এ পদ্ধতিতে অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ও ঠিকাদার নির্ধারণ করে থাকে সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার। সে নিয়ম মেনেই ঢাকা-আশুলিয়া প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে এক্সিম ব্যাংক অব চায়না। আর কাজটি পেয়েছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি করপোরেশন (সিএমসি)।
এ পর্যন্ত সব ঠিক থাকলেও ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়নে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান এপিক সলিউশন। ২০১৭ সালে যখন প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দেয়া হয়, তখন সিএমসি ও এপিক সলিউশন একটি চুক্তি করে। আর সে চুক্তি অনুযায়ী, এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সিএমসিকে পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করবে এপিক সলিউশন। বিনিময়ে এপিক সলিউশন কমিশন পাবে নির্মাণকাজের চুক্তিমূল্যের ৬ শতাংশ।
জি টু জি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নাধীন বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে এভাবে তৃতীয় পক্ষের আবির্ভাবকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ও সেতু বিভাগের একাধিক কর্মকর্তাও জানিয়েছেন, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে তৃতীয় পক্ষকে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়ার ক্ষেত্রে খোদ সেতু বিভাগেরই সাবেক এক সচিবের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন খাতে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়াও পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল (কর্ণফুলী টানেল) প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে জি টু জি পদ্ধতিতে, চীনের অর্থায়নে। সরকরি ভাষ্যমতে, ভূরাজনৈতিক বিচারে বাংলাদেশের অন্যতম মিত্র দেশ চীন। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরের পর কৌশলগত সম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশের অবকাঠামো, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে চীনের বিনিয়োগে গৃহীত প্রকল্পগুলোয় ঠিকাদারের কাজ প্রধানত চীনা সংস্থাগুলোই পেয়ে থাকে। আবার অন্যান্য দেশের অর্থায়নে গৃহীত প্রকল্পেও দেখা যায় চীনা ঠিকাদারদের আধিপত্য। আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের মতো এসব প্রকল্পেও এমন অস্বাভাবিক ঘটনা থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
যোগাযোগ অবকাঠামো বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জি টু জি প্রকল্প আমাদের দেশে অনেক হয়েছে। এখনো চলমান আছে। কোথাও কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে তৃতীয় পক্ষের প্রবেশ—এ ধরনের নজির আমার চোখে পড়েনি। আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে তৃতীয় পক্ষের আবির্ভাব কোন পর্যায়ে হয়েছে, তা যাচাই-বাছাই করে দেখার দরকার আছে। আমি মনে করি এ ঘটনার সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত।’ এক্ষেত্রে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষকে আরো সতর্ক হতে হবে, তা না হলে নির্মাণকাজ শুরুর পর নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক হাদিউজ্জামানের মন্তব্যের প্রতিফলন এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে। ‘কাজ পাইয়ে দিতে সহায়তা করা’ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান এপিক সলিউশনকে এখন পর্যন্ত কমিশনের ১ টাকাও দেয়নি সিএমসি। এর জেরে বাংলাদেশের আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে এপিক সলিউশন। বিষয়টি বর্তমানে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, এজেন্ট ও ঠিকাদারের মধ্যকার এ দ্বন্দ্বের কারণে বিঘ্নিত হতে পারে চলমান নির্মাণকাজই।
ঢাকার বিমানবন্দর থেকে আব্দুল্লাহপুর-বাইপাইল-আশুলিয়া হয়ে সাভার ইপিজেড পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাইয়ে একনেকে অনুমোদিত হয়। বর্তমানে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক্সিম ব্যাংক অব চায়নার ঋণ ১০ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা।
বণিক বার্তার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, প্রকল্পটি অনুমোদনের কম-বেশি পাঁচ মাস পর (২০১৭ সালের ১১ নভেম্বর) ঠিকাদার সিএমসি ও বাংলাদেশের এপিক সলিউশনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটি হয় থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে। আর সে চুক্তি অনুযায়ী, আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের কাজ পেতে সিএমসিকে সহযোগিতা করবে এপিক সলিউশন। এর বিনিময়ে চুক্তিমূল্যের ৬ শতাংশ কমিশন পাবে প্রতিষ্ঠানটি। ডাউন পেমেন্ট অর্থাৎ চুক্তিমূল্যের টাকা সিএমসি যখন পাবে, তার ৩০ দিনের মধ্যেই এপিক সলিউশনকে কমিশন দিয়ে দেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এপিক সলিউশন নামের বাংলাদেশী এ প্রতিষ্ঠানটির মালিক শাহেদ রহমান বশির। এর কার্যালয় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে। সেতু বিভাগ ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, সেতু বিভাগের সাবেক একজন সচিবের সহায়তা নিয়ে চীনের ঠিকাদার সিএমসিকে আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের কাজ পাইয়ে দিয়েছে এপিক সলিউশন।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাজ পাওয়ার পর থেকেই এপিক সলিউশনকে উপেক্ষা করতে শুরু করে ঠিকাদার সিএমসি। ২০২২ সালের এপ্রিলে এ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। চুক্তির সময় এপিক সলিউশনের কোনো কর্মকর্তাকেই সঙ্গে রাখেনি চীনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় চীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ১১ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার কোটি টাকা ছাড় হয়েছে এখন পর্যন্ত। এ মাসেই আরো ১০০ কোটি টাকার মতো অর্থ ছাড় হবে। কিন্তু এজেন্টের সঙ্গে ঠিকাদারের দ্বন্দ্বের বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ানোর কারণে প্রকল্প পরিচালনায় সমস্যা হতে পারে, যা এটিকে দীর্ঘায়িত করবে বলেই আমরা আশঙ্কা করছি।’
সড়ক-মহাসড়ক, সেতু, রেলপথ কিংবা উড়ালসড়ক—বাংলাদেশে এ জাতীয় অবকাঠামোর নির্মাণ ব্যয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নির্মাণ ব্যয়ের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অবকাঠামোও নির্মিত হয়েছে বাংলাদেশে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে নির্মাণ ব্যয় বেশি হওয়ার পেছনে আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ের মতো ‘অস্বাভাবিক’ ঘটনাগুলো বিশেষভাবে ভূমিকা রেখে চলেছে।
জি টু জি পদ্ধতিতে বাস্তবায়নাধীন আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে কোনো তৃতীয় পক্ষের প্রবেশের সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জি টু জি আওতার প্রকল্পে তৃতীয় পক্ষ থাকার কোনো সুযোগ নেই। সেটা যদি হয়ে থাকে, তাহলে এখানে নিশ্চয় কোনো অশুভ পাঁয়তারা কাজ করেছে। কারা অশুভ পাঁয়তারা করছে সেটা বিচারিক প্রক্রিয়া বা তদন্তের মাধ্যমে উন্মোচন করা উচিত। এখানে যেহেতু একটা চাইনিজ কোম্পানি আছে এবং বাংলাদেশও আছে—আমি মনে করি উভয় পক্ষের দায় আছে।’
অন্য যেকোনো দেশের বিনিয়োগ প্রকল্পের তুলনায় চীনের বিনিয়োগ প্রকল্পে দুর্নীতির প্রবণতা বেশি বলেও মন্তব্য করেছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেকোনো দেশের জি টু জি বা যেকোনো দেশের বিনিয়োগ আর্থিক সহায়তার ক্ষেত্রে যে রকম দুর্নীতির প্রবণতা, চীনের ক্ষেত্রে এটা তুলনামূলক বেশি। এখানে যদি অশুভ কিছু হয়ে থাকে, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
মার্কিন থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠান আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (এইআই) এক হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে চীন থেকে মোট বিনিয়োগ এসেছে ৭০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এসেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে, যার পরিমাণ ৩২৭ কোটি ডলার। ধাতু (নির্মাণসংশ্লিষ্ট) সরবরাহ খাতে দেশটির বিনিয়োগ ২১৩ কোটি, পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ১১০ কোটি ডলার। এছাড়া আর্থিক খাতে ১৬ কোটি ও অন্যান্য খাতে ৪১ কোটি ডলারের মতো বিনিয়োগ রয়েছে দেশটির। অথচ বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ঠিকাদারি কাজ পেয়েছে বিনিয়োগের তিন গুণেরও বেশি, প্রায় ২ হাজার ৩০০ ডলার। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেই চীনা ঠিকাদারদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি জোরালো। এছাড়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পগুলোয়ও চীনা ঠিকাদারদেরই আধিপত্য। এর বাইরে প্রযুক্তি, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতের প্রকল্পেও চীনা ঠিকাদারদের জোরালো উপস্থিতি রয়েছে।
এইআইয়ের চায়না গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট ট্র্যাকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে চীনা ঠিকাদারদের কাজের ব্যাপ্তি ৯০২ কোটি ডলার। পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৮৩২ কোটি ডলারের কাজ পেয়েছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। আবাসন, কৃষি, প্রযুক্তি ও ইউটিলিটি খাতে এর পরিমাণ যথাক্রমে ২৩৬, ১২৮, ১১৩ ও ১০৪ কোটি ডলার।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইউরোপীয় নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থীদের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর আকস্মিক এক ঘোষণায় ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিয়েছেন। ৩০ জুন ও ৭ জুলাই দুই দফায় দেশটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এমন ভাষণের এক ঘণ্টার মধ্যে ম্যাক্রোঁ জাতির উদ্দেশে ঘোষণা দেন, তিনি ফ্রান্সের নিম্নকক্ষ ভেঙে দেবেন এবং পার্লামেন্ট নির্বাচন দেবেন। ৩০ জুন প্রথম দফা এবং ৭ জুলাই দ্বিতীয় দফা ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যাক্রোঁর মেয়াদ আরও তিন বছর বাকি। তিনি বলেন, আমার সিদ্ধান্তটি গুরুতর। কিন্তু এর মাধ্যমে আমাদের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা, সার্বভৌম জনগণের মতামত প্রকাশের বিষয়টির প্রতিফলন ঘটলো। এটিকে আমি জাতির জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা বলে মনে করি।
ম্যাক্রোঁর বলেন, আমি আপনাদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে আপনাদের সংসদীয় ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই আমি আজ সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভেঙে দিচ্ছি। আমার প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের নিজেদের ওপর আস্থা রাখুন। ফরাসি জনগণ সবচেয়ে ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
ফরাসি ব্যবস্থার অধীনে, নিম্নকক্ষে জাতীয় পরিষদের ৫৭৭ জন সদস্য নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য পৃথক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ সংসদীয় নির্বাচনে ম্যাক্রোঁর রেনেসাঁ পার্টিসহ এনসেম্বল জোট একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে পিছিয়ে পড়ে এবং অন্য কোথাও থেকে সহায়তা চাইতে বাধ্য হয়।
এদিকে, ম্যাক্রোঁর ঘোষণার পর ২০১৭ এবং ২০২২ সালে ফরাসি রাষ্ট্রপতি পদে ম্যাক্রোঁর বিরুদ্ধে হেরে যাওয়া মেরিন লে পেন আগাম নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই নেত্রী বর্তমানে উগ্র ডানপন্থী আরএনের পার্লামেন্টারি নেতা।
তিনি বলেন, ফ্রান্স যদি আমাদের ওপর আস্থা রাখে তাহলে আমরা ক্ষমতায় আসতে প্রস্তুত। আমরা দেশ পুনর্গঠনে প্রস্তুত, ফরাসিদের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত, গণঅভিবাসন বন্ধ করতে প্রস্তুত, ফরাসিদের ক্রয় ক্ষমতাকে অগ্রাধিকার দিতে প্রস্তুত, দেশের পুনর্গঠন শুরু করতে প্রস্তুত।
ফ্রান্সের অতীত ইতিহাসে সবশেষ ১৯৯৭ সালে কোনো রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছিলেন, যার ফলে জ্যাক শিরাক তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছিলেন এবং লিওনেল জসপিনের অধীনে সমাজতন্ত্রীদের ক্ষমতায় নিয়ে এসেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের মধ্য দিয়ে ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘উভয় দেশ বিদ্যমান বহুমুখী সম্পর্ক বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।’
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তার দেশে একটি বার্ন ইউনিট নির্মাণ এবং এক বছরের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ভুটান বাংলাদেশের হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কেননা ভুটান ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দেয়।
তিনি বলেন, আমরা ভুটানকে সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
তিনি কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেওয়া জায়গার যথার্থ ব্যবহারের ওপর জোর দেন এবং আশা করেন ভুটান সেখানে শিল্প গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে ভুটানের বিনিয়োগ চেয়েছেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র কন্যা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তার সাম্প্রতিক ভুটান সফরের কথা উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এবং প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খানসহ অন্যরা বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
অবকাঠামো ও পরিবহন মন্ত্রী চন্দ্র বাহাদুর গুরুং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেরিং, ভারতে ভুটানের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল ভি. নামগিয়েল, মন্ত্রিপরিষদ সচিব কেসাং ডেকি এবং পররাষ্ট্রসচিব পেমা চোডেন ভুটানের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply