পিয়ের পল দারাক ও ভেলাম ভান সেন্দেল
অনুবাদ : ফওজুল করিম
নীলের বাণিজ্যে আধিপত্য: স্পেন, ফ্রান্স ও বৃটেন
বিশ্ব বাণিজ্যের পণ্য দ্রব্য রূপে নীলের ইতিহাস এখনও অলিখিত।১০ সেকালে বিশ্বব্যাপী নীলের বাণিজ্যের সামগ্রিক অবয়ব কেমন ছিল তা নির্ণয় করা দুরূহ। প্রাচীনকাল থেকেই ভারত রফতানীকারী দেশ, তার রফতানী বিশেষভাবে ছিল ইউরোপে। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত ইউরোপের প্রধান সরবরাহকারী ছিল ভারত। গ্রীষ্মপ্রধান আমেরিকায় ওপনিবেশিক উৎপাদন ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হলে এই দীর্ঘ প্রতিষ্ঠিত সম্পর্কের কথা ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে। উত্তর ভারতের নীল ব্যবসা (প্রধানতঃ গুজরাট, সিন্ধু ও আগ্রা) যে ইউরোপে তার বাজার হারাতে থাকে তার আংশিক কারণ হল ভারতে উৎপন্ন নীলের সুনাম নষ্ট হয়ে যায়।
* ইউরোপ প্রধানতঃ তার সম্প্রসারিত বস্ত্রশিল্পের জন্য ১৬৫০ খ্রীঃ থেকে ১৭৮০ অবধি তাদের বিরাট নীলের চালান আনতে শুরু করে আমেরিকা থেকে। আমেরিকান অঞ্চলের মধ্যে এ ব্যাপারে আগ্রহী ছিল হাইতি (তখন পরিচিত ছিল সেন্ট ডোমিনিক হিসাবে)। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে আমেরিকা ইউরোপে ১০ লাখ কেজি নীল রফতানি করেছিল। সাউথ ক্যারোলিনা ও গুয়াতেমালা রফতানি করেছিল এর অর্দ্ধেক পরিমাণ। এ ছাড়াও রফতানি করেছিল ভেনজুয়েলা ও ব্রাজিল আর জ্যামেইকার মত ছোটো রফতানিকারীরা।”
১৮০০ শতাব্দীর দিকে নীলের বিশ্ববাজারে একাধিক্রমে তিনটি বড় বড় ঝাপটা লাগে। এর ফলে ইউরোপে নীলের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী তিনটি বড় বড় শক্তির পারস্পরিক সম্পর্ক বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। মধ্য আমেরিকার নীলের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায় স্পেন। ক্যারেবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ থেকে আনা নীলের উপর অধিপত্য হারায় ফ্রান্স। তেমনি আবার উত্তর আমেরিকা থেকে আনা নীলের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায় বৃটেন। এই সব উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে নীলের বাণিজ্যে প্রভাবশালী শক্তি হিসাবে অভ্যুদয় ঘটে বৃটেনের। বাণিজ্যিকভাবে নীল উৎপাদনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন একটি অঞ্চল- বঙ্গদেশের আবির্ভাবের ফলে বৃটেন অকস্মাৎ নীল উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি বৃহৎ শক্তি হিসাবে পরিগণিত হয়।
মানচিত্র। ১৮০০ সালের দিকে নীলের জগত
Leave a Reply