বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

যক্ষ্মা নির্মূলের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের করণীয়

  • Update Time : বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪, ১.৪১ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক 

যক্ষ্মা নির্মূলে বিশ্বব্যাপী যে লড়াই চলছে তার অগ্রভাগে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের শীর্ষ যক্ষ্মা আক্রান্ত ৩০টি দেশের মধ্যে একটি বাংলাদেশ। এই খাতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে আমাদের। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান বলছে, এই সময়কালে ৭৯ শতাংশ রোগী চিকিৎসার আওতায় এসেছেন এবং শণাক্ত হওয়া ৯৫ ভাগ যক্ষ্মা রোগীর চিকিৎসা যথাযথভাবে শেষ হয়েছে। তবে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে আনুমানিক ২২১ জন এবং প্রায় ২১ শতাংশ রোগী শনাক্তকরণের বাইরে রয়েছেন, যা আমাদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশে যক্ষ্মা নির্মূলের কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ১১ই জুন, মঙ্গলবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে ‘টু অ্যান্ড টিবি: হোয়াট উই আর ডুইং এন্ড হোয়াট ক্যান বি ডান” (যক্ষ্মা নির্মূলে আমরা কী করছি এবং আরও কী করা যেতে পারে) শীর্ষক এক পরামর্শসভা অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিপি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর (ডিজিএইচএস), স্টপ টিবি পার্টনারশিপ, দ্য গ্লোবাল ফান্ড এবং ব্র্যাক এই পরামর্শসভার আয়োজন করে।

গ্লোবাল ফান্ডের বোর্ড সদস্য এবং স্টপ টিবি পার্টনারশিপের নির্বাহী পরিচালক ডা. লুসিকা ডিটিউ বলেন, “যে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ এখনও শনাক্তকরণের বাইরে রয়ে গেছে, তাদের খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে কঠিন। কিছু সীমাবদ্ধতা এবং দুর্বলতার কারণে তারা আড়ালে থেকে যায়। এর মধ্যে রয়েছে স্বল্প আয়ের মানুষ, প্রত্যন্ত এলাকায় বসাবাসকারী মানুষ, যৌনকর্মী অথবা অভিবাসীরা। এ ছাড়া ধর্মীয় ও জাতিগত কারণেও অনেকে বাদ পড়ে যায়। এদের খুঁজে বের করতে জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে হবে। তাদের জন্য আমাদের চিকিৎসার প্রাপ্যতা নিশ্চিতে আরো স্মার্ট হতে হবে, প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ বাড়াতে হবে যা যক্ষ্মা ও অন্যান্য রোগ নির্মূলে সহায়ক হবে।”

দ্য গ্লোবাল ফান্ডের যক্ষ্মা বিভাগের প্রধান ডাঃ এলিউড ওয়ান্ডওয়ালো বলেন, “বাংলাদেশে যক্ষ্মা রোগের বিরুদ্ধে লড়াই এখন শুধু সক্ষমতা বা কৌশলের বিষয় নয়। সাফল্যের শেষ ধাপে পৌঁছাতে সঠিক চিকিৎসা ও প্রযুক্তিগত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।”

ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির (বিএইচপি) জ্যেষ্ঠ পরিচালক ড. মোঃ আকরামুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ গত দুই দশকে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, তবে এটি নির্মূল করতে পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ। যক্ষ্মা নির্মূলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং এন্ড টিবি যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সেখানে পৌঁছাতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রতিশ্রুতি, নিজস্ব অর্থায়ন এবং উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে তহবিল নিশ্চিত করা জরুরি। এটি সম্ভব হলেই আমরা যক্ষ্মার কবল থেকে প্রতিটি মানুষকে রক্ষা করতে পারবো।”

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন গ্লোবাল ফান্ডের নির্বাহী পরিচালক পিটার স্যান্ডস। এ ছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা কর্মসূচির (এনপিটি) প্রোগ্রাম ম্যানেজার ড. মোঃ জাহাঙ্গীর কবির, ইউএসএআইডি-এর সংক্রামক রোগ বিভাগের টিম লিড ডাঃ সামিনা চৌধুরী এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশের সংক্রামক রোগ বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাঃ অনুপমা হাজারিকা আলোচনায় অংশ নেন।

যক্ষ্মা রোগী ফারজানা আক্তার রোগমুক্ত হওয়ার গল্পটি তুলে ধরে বলেন, “পরীক্ষায় যখন আমার যক্ষ্মা ধরা পড়ে তখন চিন্তায় অস্থির হয়ে যাই। আমাদের এলাকার ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মীদের (কমিউনিটি হেলথ ওয়ার্কার) সাথে পরামর্শে ওষুধ খাওয়া শুরু করি। দুই মাস পর পুনরায় কফ পরীক্ষায় কোনো জীবাণু পাওয়া যায়নি। এখন আমার তিন মাসের ওষুধের কোর্সটি চলছে এবং বুঝতে পারছি, আমি আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ। আমাকে সুস্থ করে তোলার জন্য আমি সরকার ও ব্র্যাকের প্রতি কৃতজ্ঞ।”

জাতীয় যক্ষ্মা কর্মসূচি (এনটিপি):

বাংলাদেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লক্ষ্য হল যক্ষ্মা রোগ, মৃত্যুহার এবং সংক্রমণ হ্রাস করা যতক্ষণ না এটি একটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুকি হিসেবে অবস্থান করে (যক্ষ্মা মহামারী নির্মূলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বছরে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ১০ জন রোগীর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা)। ন্যাশনাল টিবি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (এনটিপি) ১৯৬৫ সাল থেকে ব্র্যাক এবং বাস্তবায়নকারী অংশীদারদের সহযোগিতায় কাজ করছে। এনটিপি নীতি, পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা, মনিটরিং এবং টিবি পরিষেবার বাস্তবায়নে কাজ করছে। অন্যদিকে ব্র্যাক এবং অন্যান্য এনজিও কনসোর্টিয়ামগুলো কাজ করছে কমিউনিটি পর্যায়ে। এনটিপি এবং ব্র্যাক হচ্ছে গ্লোবাল ফান্ডের প্রিন্সিপ্যাল রেসিপিয়েন্ট (পিআর)।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024