মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন।
মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে।
তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু।
তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক
‘মেয়ে নিয়ে যেতে এসেছো, মেয়ে নিয়ে যাবে; বাজে কথা বললে
অসুবিধেয় পড়বে বলে দিলাম খোকা তেড়ে উঠলো।
‘আমি আমার মেয়েকে বলছি, আপনি গায়ে মাখছেন কেন?’ ঘৌত ঘোঁত ক’রে উঠলো লোকটা, ‘ওটা একটা কুত্তি, কুত্তিটাকে এইবার চেন দিয়ে বাঁধবো, ওর রস মেরে গুড় করবো ফৌশ ফোঁশ ক’রে কান্না শুরু করলো ময়না। শেষ পর্যন্ত দু’দিন পরে তার যাওয়া সাব্যস্ত হ’লো। রজু মুখ কালো ক’রে বললে, ‘এখন উপায় ?’
‘সেল্ফ-হেলপ।’
‘নিজে তো ব’লেই খালাস!’
‘কেন, ঠিকে ঝি আর লেবুকে দিয়ে চলবে না?’
‘ঠিকে ঝি তো ক’দিন থেকে ঝক্কি শুরু করেছে, ও নাকি আর কাজ করবে না, দেশে যাবে। এতদিন আমরা ফাঁকি দিয়ে ইচ্ছেমতো ঠকিয়েছি ওদের, মানুষ ব’লে গ্রাহাই করিনি, কাজে এলেই প্যান প্যান ক’রে এইসব তোলে-‘ ‘এক কাজ করা যাক বরং’ খোকা হাসতে হাসতে বললে, ‘আয় দু’জনে মিলে আমাদের আগা মোহাম্মদের কাছে একটা জয়েন্ট পিটিশান করি, কামের লোকের খুব অভাব, তোমার ওই দস্তানাগ গাওয়া কিছু বুর্গতি-টুগতি এদেশে পাঠাও।’
কিছুটা আনমনা হ’য়ে চিন্তাক্লিষ্ট মুখে রঞ্জু বললে, ‘কি সব অলক্ষুণে কাণ্ড কারখানা শুরু হয়েছে বলতো, একরত্তিও ভালো লাগছে না আমার।’ ‘তোদের কলেজের মেয়েরা পাকাঠির গোছা হাতে নিয়ে সমানে রাস্তায় রাস্তায় ডান-বাম ডান-বাম ক’রে বেড়াচ্ছে, খবর রাখিস?’
‘দুর, আমার ও’সব ভালো লাগে না!’
কলেজে যে ফাটাফাটি চলছে রঞ্জু তা জানে। কলেজে যাওয়া বন্ধ ক’রে দিয়েছে সে; ক্লাস হয় না, স্রেফ মিটিং আর মিছিল।
‘যা না, ঘুরে আয়, নিদেনপক্ষে ঝাঁকে ঝাঁকে ছোকরা তো দেখা হবে’ রঞ্জ বললে, ‘এই একটু আগেই তো পাড়ার কয়েকজন ডাকতে এসেছিলো। ওরা হেঁটে কলেজে গেল। বহু মেয়ে ট্রেনিং নিচ্ছে!’
‘তোদের আবার টেনিং লাগে নাকি! তোরা তো পেটে থাকতেই হাফেজ ব’নে যাস।”
Leave a Reply