সারাক্ষণ ডেস্ক
সরকার ঘোষিত জাতীয় বাজেটে ৬ কোটি শ্রমিকের জন্য আলাদাভাবে কোন খাত বরাদ্দ না দেয়া এবং শ্রমিকদের রেশনিং ব্যবস্থা বরাদ্দ না করায় বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের উদ্যগে আজ ২২ জুন, শনিবার, সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব, জহুর হোসেন চৌধুরী হলে সংবাদ সম্মেলন উনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন- বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি- শ্রমিক নেতা-এড.মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা- আবুল হোসেন-সভাপতি-টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, শবনম হাফিজ-সভাপতি-বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, সুলতানা আক্তার- সভাপতি- গ্রীণ বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, কে.এম মিন্টু- আইন বিষয়ক সম্পাদক- বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক টিইউসি, শ্রমিক নেতা- এফ.এম আবু সাঈদ, আবু সুফিয়ান।
লিখিত বক্তব্যে এড. মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, ৬ জুন ২০২৪ ইং তারিখ সরকার ৭ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষনা করেছে। ১৯৭২-১৯৭৩ সনে প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা, ৫৩ বছরে জাতীয় বাজেটের আর্থিক আকার বর্তমানে ১০১৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জিডিপিতে ৫.৭% এবং মাথাপিছু আয় ৩ লাখ ৬ হাজার ১৪৪ টাকা ঘোষনা করা হয়েছে। এই হিসেবে মাসিক মাথাপিছু আয় দাড়ায় ২৫,৫১২/- টাকা। কথিত মাথাপিছু আয়, জিডিপি উন্নয়ন ও সুখী, সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ শিরোনামের বাজেট শ্রমিকদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন বা অগ্রগতি ঘটায়নি। দেশ-বিদেশের মাথাপিছুর আয়ের এই খতিয়ানের গল্প প্রচার করা হলেও বাস্তবে এই হিসাব কাজির গোয়াল, খাতা কলমে আছে কিন্তু গোয়ালে গরু নাই। দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষের মাথা গোজার নিজস্ব কোন আবাসন নেই। ৫৩ বছরের তুলনায় বর্তমানে ব্যাপকভাবে বেড়েছে আয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সম্পদ ও খাদ্য বৈষম্য। শ্রমিক পরিবার জেলখানার কয়েদির চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছে। ১৯৭২ সালে কোটিপতির সংখ্যা ছিল মাত্র ৫ জন, ২০২৩ সালে ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৯ শত জন। সিন্ডিকেট ব্যবসায়িরা খাদ্য দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে বছরে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি টাকা শ্রমিকদের পকেট থেকে লুটে নিচ্ছে। এদের স্বার্থেই সরকার কালো টাকা (অপ্রর্দশিত আয়) ১৫% কর দিলেই বৈধ বা সাদা টাকা হয়ে যাওয়ার নীতিমালা গ্রহন করেছে। এর ফলে পুলিশের সাবেক আই.জি বেনজির এর মতো দূর্নীতিবাজদের মতো আরও কয়েক হাজার দূর্নীতিবাজ দূর্নীতি করতে আরও বেশী উৎসাহিত হয়ে উঠবে। জাতীয় বাজেটে শিল্প বাজেট, কৃষি বাজেট, স্বাস্থ্য বাজেট, শিক্ষা বাজেট, প্রতিরক্ষা বাজেট ইত্যাদি বাজেট থাকলেও আলাদাভাবে শ্রমিকদের জন্য কোন বাজেট বরাদ্দের খাত নেই। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় এবং প্রতিষ্ঠানে ১৪ লক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের জন্য সুযোগ সবিধা বাদে শুধু বেতন-ভাতার ব্যয় বরাদ্দ ৮১ হাজার ৫ শত ৮০ কোটি টাকা। কিন্তু বাজেটের এই টাকার অংক অথবা ১০% বরাদ্দ দিলে বাংলাদেশের গার্মেন্টস সহ ৬ কোটি শ্রমিকের স্বল্প মূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করে শ্রমজীবী মানুষকে খাদ্য নিরাপত্তার সুরক্ষা দেয়া সম্ভব। উন্নয়ন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা যতই বলা হোক না কেন বৈষম্য অসমতা নিরসন হবে না এবং ৩০ লক্ষ শহিদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শোষনহীন সমাজ প্রতিষ্ঠাও করা যাবে না। বাস্তবে এই বাজেট বানরের পিঠা বন্টন গল্পের বিবরন ছাড়া আর কিছুই না। এই বাজেট ৬ কোটি খেটে খাওয়া শ্রমিকের অভাব অনটন আরও বাড়াবে। যেহেতু এই বাজেটে শ্রমিকদের জন্য কিছুই নাই সেহেতু বাংলাদেশের ৬ কোটি শ্রমিক এই বাজেট প্রত্যাখান করছে।
আগামী ২৫ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের প্রতিটি শিল্প অঞ্চলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষনা করা হয়।
Leave a Reply