সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন

তানভীর মোকাম্মেলের নদীর নামে চলচ্চিত্র শিল্প মাধ্যমের সেরা ইনফরমেশান

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪, ৬.০০ পিএম
চিত্রা নদীর পারে

প্রায়ই একটা প্রশ্ন আসে, তানভীর মোকাম্মেলের প্রায় সব চলচ্চিত্রই নদীর নামে। এটা কি কোন কাকতালীয় ঘটনা? চলচ্চিত্রের নাম দেয়া কখনও কোন কাকতালীয় ঘটনা নয়। এর জন্যে যেতে হয় একটু গভীরে।

 আমাদের দেশের অনেকেই বলেন, তানভীর মোকাম্মেলের চলচ্চিত্র বা এমনি আরো কিছু চলচ্চিত্রকে ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র। সাহিত্যে’র ক্ষেত্রেও তেমনটি বলা হয়। ভিন্ন ধারার সাহিত্য।

 

রূপসা নদীর বাঁকে

 

 

চলচ্চিত্র, সাহিত্য, ছবি, গান কোনটাতে ভিন্নধারা বলে কিছু নেই। অনেকে বলেন, নিখাদ বিনোদন। বাস্তবে শস্তা বিনোদন বলে যাকে নিখাদ বিনোদন বলা হয় তা কি আসলে শিল্প?

 যেমন সুরের কোন ভাষা নেই। তারপরেও কেন এই সুর এ নিয়ে তো অনেক আলোচনা হয়েছে পৃথিবীতে। সেই সব বিস্তর আলোচনায় না গিয়ে বলা যায়, আজ অন্তত একটি সত্যে অনেকেই উপলব্দ হয়েছেন, সুর ইনফরমেশান অর্থাত্‌ তথ্য দেয়।

তথ্যই শেষ অবধি বিনোদনের ভেতরের মেরুদন্ডটি। এই মেরুদন্ড যেমন শিল্পীকে তৈরি করতে হয় তেমনি শরীরটিও তাঁকে তৈরি করতে হয়।

আমাদের এই ভারত- উপমহাদেশে ১৯৪৭ সালে সব থেকে দুর্ভাগ্য শুধু নয়, সুদূর প্রসারী এক ক্ষতধারা সৃষ্টি হয়েছে। যা অনেকে বলেন, ভারত ভাগ, আবার অনেকে বলেন পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগ।  শুধু মাটি ভাগ নয়, ধর্মের নামে মানুষকে হত্যা, উচ্ছেদ ও একটি মাইগ্রেশানের মানসিক প্রবাহ মানুষের অন্তরে তৈরি করে দেয়া। আবার পাশাপাশি বাস করা মানুষের ভালোবাসার বন্ধনগুলোকে কখনও প্রশ্নবিদ্ধ করা, কখনও ভালোবাসার মাঝখানে একটা দেয়াল তুলে দেয়া।

এই প্রশ্নবিদ্ধ মন, এই রক্তক্ষরণ, এই দেয়াল -এগুলো অনেক অন্তনির্হিত ইনফরমেশান। এই ইনফরমেশান সাধারণ সাংবাদিক, রাজনীতিক এমনকি গবেষকও দেখতে পান না। এ কেবল শিল্পী দেখতে পান। আর তাই সেটা উঠে আসে তার শিল্প মাধ্যমে।

 

নদীর নাম মধুমতী

 

বাংলাভাগের এই প্রশ্নবিদ্ধ মন, রক্তক্ষরণ, দেয়াল, অবক্ত্য ভালোবাসা সহ আরো অনেক কিছু যা উঠে আসার কথা ছিলো চলচ্চিত্র’র মত একটা বড় শিল্প মাধ্যমে। কারণ, এ মাধ্যমে, রং, শব্দ, ছবি, সুর সহ সবগুলো শিল্পের মাধ্যম কাজ করে।

বাংলা ও বাঙালির দুর্ভাগ্য হলো, এই বাংলা চলচ্চিত্র মাধ্যমটি’র যদিও শুরু মানিকগঞ্জের এক সন্তানের হাত দিয়ে- কিন্তু বাানিজ্যিক কারণে তা বন্দী হয় বেনিয়া শহর কলকাতার মানুষের হাতে। যে শহর বিদেশী বেনিয়া দিয়ে গড়ে উঠেছে, যার রক্তে ও কালচারে আছে বানিজ্য, সেখানে দেশভাগের এত বড় সুর নাড়া দেয়া সম্ভব নয়। তাকে ধারণ করার পাত্র খুঁজে পাওয়া কষ্ট।

 

তানভীর মোকাম্মেল

 

তবে পূর্ববাংলা থেকে বিতাড়িত, ঋতিক ঘটক ও রাজেন তরফদারই ১৯৪৭ এর জেনারেশন যারা ওই ধরণী দ্বিধা হওয়ার মতো ঘটনার তথ্যকে তাদের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে মানুষের কাজে পৌঁছে দিয়েছেন।  সেই ইনফরমেশান, সেই সুর যা সাধারণ চোখে দেখা যায় না। শুধু শিল্পী দেখিয়ে দিলে তখন কেউ কেউ দেখতে পায়।

তানভীর মোকাম্মেল ৪৭ এর তিন প্রজম্মের পরের। তারপরেও বলতে হয়, বাংলাদেশে তিনি একক, যার শিল্প বাংলা নামের দেশটি বা বঙ্গদেশের এবং এই ভূখন্ডের ওই প্রতিটি ক্ষরনের ইনফরমেশান নিয়ে এসেছে তার শিল্প মাধ্যম অর্থাত্‌ তার চলচ্চিত্রে।

 

কর্ণফুলীর কান্না

কর্ণফুলীর কান্না

 

আর যখনই এই ইনফরমেশান শিল্পের মাধ্যমে গায়কের মতো সুরের ধারায় তুলতে হয় – তখন প্রথমে আবিস্কার করার প্রয়োজন পড়ে শিল্পীর ইনফরমেশানের মূল চরিত্র। বাস্তবে দেশভাগের মাধ্যমে ভূমি ভাগ করা হয়েছে কিন্তু প্রবাহমান দুই সত্ত্বাকে ভাগ করা যায়নি। এবং যা কখণও ভাগ করা যায় না। বরং ভাগ করলে শুধু সেই মারা যায়না, তার চারপাশের সকলের নানান ভাবে মৃত্যু ঘটে। এই দুই সত্তার একটি সত্ত্বা মানব সত্তা, আরেকটি নদী। আর এ দুই-ই সব সময়ই  সমান জীবন্ত ও প্রবাহমান।

তানভীর মোকাম্মেল মানুষ ও মানুষের সভ্যতা গড়ে ওঠার সাথী নদীকে তাই পাশাপাশি রেখেছেন দেশভাগ নিয়ে তার একের পর এক চলচ্চিত্রে। আর সেখানে মানুষগুলো হয়ে উঠেছে যে স্রোতধারা কেন্দ্র করে তারা হাজার বছর ধরে বেড়ে উঠেছিলো সেই নদীর পাশের মানুষ।

 

 

রূপসা নদীর বাঁকে

 

 

দেশভাগের এই ক্ষরণের প্রকাশে নদী ও মানুষকে একই সূত্রে এনে তানভীর মোকাম্মেল প্রমান করেছেন, তিনি কোন সাধারণ মাপের শিল্পী নন। বরং প্রজম্ম থেকে প্রজম্ম তাকে ধীরে ধীরে বুঝবে, তেমনি তার চোখ বা শিল্পকর্ম একদিন না একদিন কোন এক প্রজম্মের কাছে সেই ইনফরমেশান পৌঁছে দেবে যেরাজনৈতিক উম্মাদনা, ক্ষমতার লোভ আর বৈশ্বির বৈশ্য স্বার্থ কত সুক্ষ্ম স্থানে ক্ষত সৃষ্টি করে , হত্যা করে কত সম্ভাবনাকে। ধ্বংস করে কত মানব সভ্যতাকে।

– কালান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024