শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ অপরাহ্ন

ওকে গাইতে দাও (পর্ব-১৬)

  • Update Time : বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

মণীশ রায়

টিয়া দুটি ছাড়া তুষ্টির এখন বন্ধু বলতে আর কেউ নেই। বাড়ি বদলের পর অর্ঘ্য কদিন ওর মায়ের অলস মোবাইলে টেলিফোন করেছে। কিন্তু  ইচ্ছে করেই তুষ্টি সেটি ধরেনি।

ইদানীং ওর কথা বলতেও ইচ্ছে করে না কারও সাথে। মনে হয় দু-কথার পরই ওরা পড়াশুনো নিয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে শুরু করবে। ভাবতেই সব বিস্বাদ লাগে। সব ছেড়েছুড়ে মন চায় দূরে-বহুদূরে চলে যেতে। যেখানে কেউ ওকে চিনবে না। শুধুই  স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াবে বাগানে-বাগানে।

স্কুলেও  সে একা। আগে দু-চারজন ওর বন্ধু ছিল। এখন ওদের কেউ আর ওর কাছে ঘেঁষতে চায় না। যে ছাত্রীদের শিক্ষকরা পছন্দ করেন না, তারা ধীরে  ধীরে অস্পৃশ্য হতে শুরু করে শ্রেণিকক্ষে। সবাই ভাল ছাত্রী হয়ে থাকতে চায় কিংবা ভালোদের সংস্পর্শে থাকতে ভালোবাসে।  তুষ্টির সাথে ঘেঁষলে যদি বদনাম হয় সেই ভয়ে ওর ঘনিষ্ঠ বান্ধবীরাও এখন আর কাছে আসে না। শুধু টিয়া দুটো উড়ে এসে চোখের সামনে পড়লেই ওর কথা বলার সুযোগ তৈরি হয়। তাতেই ওর একাকীত্বের বিষাদ কেটে যায়। ওদের ঠোঁট আর পাখনার রং একটুক্ষণের জন্যে হলেও আনন্দ যোগায় মনে।  ওরা যখন টিঁউ টিঁউ করে নিজেদের ভেতর আনন্দে মাতোয়ারা হয় তখন ওরও ইচ্ছে করে ওদের সাথে যোগ দিতে।

টিফিন-পিরিয়ডে তুষ্টি চুপচাপ গিয়ে পুকুরটার পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কড়ইর গাছ থেকে শুকনো পাতা ঝড়ে পড়ে ওর মাথার ওপর। জলের উপর ভাসমান অজ¯্র  ঝরা পাতা।  পাড়ে-পাড়ে আগাছা আর ঝোপঝাড়। এর ভেতর একটা হা¯œাহেনা গাছ। সেখান থেকে গন্ধ ভেসে আসে ওর নাকে। হেলেঞ্চা আর কলমির দামে দুটো বুলবুলি এসে বসে ; সেখান থেকে লাফিয়ে কখনও হা¯œাহেনার ডালে কিংবা মাটিতে ফুড়–ৎ-ফাড়–ৎ করে উড়ে বেড়ায়।  তুষ্টির একাগ্র দৃষ্টি ঠিক সেদিকে।

সৃষ্টি ওকে স্কুল প্রাঙ্গনে খুঁজে না পেয়ে এখানে এসে উপস্থিত হয়। চেহারায় বিস্ময় মিশিয়ে ওকে বলে ওঠে ,‘ দিদি, তুই এখানে ? আর আমি কত খুঁজছি তোকে। জানিস, এখানে নাকি দশতলা একটা বিল্ডিং হবে।’

চমকে ফিরে তাকায় ছোটো বোনের দিকে সে। চোখেমুখে একরাশ অবিশ্বাস। পাল্টা প্রশ্ন করে সে,‘তাহলে এই পুকুরটা, এই গাছগুলো কোথায় যাবে ?’

‘সেটাও বুঝিস না, দিদি। বিল্ডিং হলে এগুলো কি থাকবে ? কেটে ফেলবে না ? ’

‘তাইলে ওই গাছটায় পাখিগুলো যে বসে আছে, ওরা কোথায় বসবে, কোথায় ঘুমাবে ?’

‘উড়ে বনে ফিরে যাবে, যেখানে ওদের বাড়ি।’ এতটুকু না টসকে উত্তর দেয় সৃষ্টি।

বোনের কথায় কিছুক্ষণ দম মেরে থাকে তুষ্টি। একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে ওর বুক চিরে। তারপর হাতের টিফিন-বাক্সের ভেতর পুরে রাখা রুটি-হালুয়া টুকু ছুঁড়ে ফেলে দেয় গাছের গোড়ায়।

সৃষ্টি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে বোনের দিকে। এরকম আচরণের কি অর্থ , সে বুঝতে পারে না। মুখে বলে ,‘ এগুলো ফেলে দিলি কেন দিদি?’

‘ওরা খাবে ?’ বলে গাছের ডালে বসে  থাকা পাখিগুলোকে দেখিয়ে দেয়।

এসময় স্কুলের ঘণ্টা বেজে ওঠে ; তাড়াতাড়ি করে ওরা দুবোন শ্রেণিকক্ষের দিকে এগিয়ে যায়। সহসা চাপা গলায় তুষ্টি বলে ওঠে,‘জানিস সৃষ্টি, এই স্কুলটা আমার আর ভাল লাগে না রে। এরা পড়া ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। ’

সৃষ্টি তখন পড়িমড়ি করে নিজের ক্লাসে ঢোকায় ব্যস্ত ; দিদির কথার পুরোটা সে বুঝতে পারে না।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024