সাবেরা তাবাসসুম
যে-কথা শুরুর
কুসুম হতেই প্রাণের উদ্বোধন। আমাদের প্রাণ যখন কুসুমিত, যুদ্ধ তার দামামা বাজিয়ে শতচ্ছিন্ন আকাশ-মাটি-জল-বায়ু উপহার দিয়ে গেছে। তবু বেঁচে থাকা অবশিষ্ট মানুষেরা প্রাণকে আগলে রেখেছেন। বোধ জন্মাতে জন্মাতে প্রথম শোনা কঠিন শব্দ মনে করতে পারি ব্ল্যাক আউট, ক্যু, মার্শাল ল’। ঘনঘন বিদ্যুৎ যাওয়া আর অনেকক্ষণ পরে আসা বুঝতে শিখি এরপর। পাশাপাশি প্রথম আউট বই পড়ায় হাতেখড়ি, মনে আছে। বড়দের জন্যে আনা আলমগীর কবিরের চিত্রনাট্যে আর ঢাকা থেকে মামাদের পাঠানো তিন গোয়েন্দার বইয়ে। অভাব কী, বুঝি না। দুর্ভিক্ষ, বন্যা- এই শব্দগুলো কানে আসে। ‘৮৮-র বন্যায় তিনদিন লাগিয়ে ঢাকা থেকে দামুড়হুদায় পৌঁছানোকে অ্যাডভেঞ্চার মনে হয়। একটা নিরাপদ বেষ্টনীর মধ্যে বড় হতে থাকি। বদলি ব্যাপারটা বুঝে গেছি ততদিনে। নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে আনন্দ আর বেদনা নিয়ে থাকা। শব্দগুলো ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। কিছুই পুরোপুরি ঠাহর করে উঠি না। কিন্তু বড় হতে থাকি। আব্বা-আম্মার ফিসফিস, বাজারে জিনিসের দাম আগুন। তিন ভাইবোন মিলে বেশ গোল গোল ব্যাঁকাত্যাড়া বড় হওয়া যাকে বলে, হয়েছি। গ্রাম, মফস্বল, জেলা শহর, রাজধানী- এই করে করে, আব্বা-আম্মা-দাদুর নিষ্ঠাবচন শুনে আর না-শুনে আমরা বদলে যেতে থাকি, আমি বদলে যেতে থাকি। তেতাল্লিশ বছর পরে সেসব ভাবতে বসলে পুরোটা নতুন নতুন লাগে। দেখার চোখ আর মন পালটে গেছে বলেই।
আমাদের জন্ম হয়েছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে রাজনৈতিক ডামাডোলে এক দিশেহারা পরিস্থিতিতে। আমরা বেড়ে উঠছিলাম হদ্দ গ্রামে, মফস্বলে, আধা শহরে, শহরে। ব্ল্যাক আউট, ভাঙা পথ, ভাঙা বাজার, ক্ষত-বিক্ষত যুদ্ধ-স্মৃতি, সাথে অনাগত আশার সম্ভার। আমাদের পূর্বপ্রজন্মের লড়াকু এবং পরাজিত মানুষেরা দিকনির্দেশনা পাবার অপেক্ষা করছিলেন। ঠিকমতো গুছিয়ে ওঠার আগে, যুদ্ধের ক্ষত চিহ্নিত করে শুশ্রূযা নেবার আগে নেতা ও নেতৃত্বহীন হওয়ার প্রবল আঘাত আবার এলোমেলো করে দেয় জীবনচেতনা। স্বৈরশাসনের দীর্ঘ ইতিহাস এবং গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার ভঙ্গুর দশার ভেতর দিয়ে আমাদের চেতনা বিকশিত হচ্ছিল অপূর্ণতা নিয়ে। সেটা পরিবার কাঠামোয়, শিক্ষায়, স্বাস্থ্যে, অর্থনীতিতে, প্রশাসনে, সমাজমানস গঠনে, শিল্পে এবং সংস্কৃতিতে। এই অপূর্ণতা কখনো মহত্তর কিছুর সন্ধানে কাউকে কাউকে ব্যাপৃত করেছে, কাউকে ঠেলেছে নীতিহীন নৈরাজ্যে। এর ভেতর দিয়ে, এর পাশাপাশি প্রকৃতির নিয়মে বেড়ে উঠছিলাম আমরা। আমাদের গ্রামে, মফস্বলে, আধা শহরে, শহরে।
বাংলাদেশ নামে ভূখণ্ড, যার জন্ম হয়েছে ৫০ বছর আগে, নানা প্রেক্ষাপটে নানা পরিবর্তিত ইতিহাস ও ঐতিহ্য ঘিরে রেখেছে তার ভূবৈচিত্র্য, মানুষ ও তার সংস্কৃতি। আর্যদের আগমন ও শাসন, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আগমন, মুসলিম শাসক ও সুফি সাধকদের প্রভাব এবং ঔপনিবেশিক শাসনের কারণে নানা মাত্রা লাভ করেছে এ-অঞ্চলের মানুষের বিশ্বাস, রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান, জীবনচর্যা তথা সংস্কৃতি। কাজেই স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিকাশ কোনো একক ও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়, সেটা মনে রাখা জরুরি। বাংলাদেশের সংস্কৃতির গ্রামীণ ও শহুরে প্রেক্ষাপটে বিকাশ এবং পারস্পরিক বিনিময় সে-কারণে বহুমাত্রিক বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে যা এই পরিসরে প্রযোজ্য নয়। স্বভাবতই আলোচনার বিস্তার তাই গুটিয়ে আনতে হয় দু-একটি বিষয়ে।
গত ৫০ বছরে আমাদের গ্রামের নগর হয়ে ওঠার যে-ইতিহাস তা মূলত ঔপনিবেশিক আমল ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ঘাত- প্রতিঘাতের কাঠামোকে অনুসরণ করে। এর ফলে একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে এমন যে, ঔপনিবেশিক আমলের আগে এই অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্য বলে যে কোনো কিছুর অস্তিত্ব ছিল সেটা মনে না করা বা স্বীকার না করা স্বাভাবিক। বলা যায়, আধা সামন্তবাদের বৈশিষ্ট্য নিয়ে পুঁজিবাদী চাল-চলনের সাথে মানিয়ে নেয়ার সাংঘর্ষিক চেষ্টায় রত আমাদের ‘নগর সংস্কৃতি’ সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আর আমাদের চেতনার মতোই অপূর্ণ বিকাশের ভেতর রয়েছে গ্রাম ও গ্রামীণ সংস্কৃতি। গ্রাম আমাদের হাজার হাজার বছরের ইতিহাস ধারণ করে আছে। রূপ বদলের নানা বাঁকে তা নতুন মাত্রা যোগ করে যেমনি, তেমনি পুরনো স্বরও ধ্বনিত হয় কালের আবর্তনে। তার মাঝেই আমরা চিনে নিই আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য- সংস্কৃতি পরম্পরা। এসবের মিথস্ক্রিয়ায় এক-একটি জাতি পরিবর্তিত হয়, সমৃদ্ধ হয়। তবে বাংলাদেশে এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি বাঁক রাষ্ট্রের রাজনীতি, অর্থনীতি ও
সমাজনীতির বিকাশ ও তার বিরুদ্ধ শক্তির সংঘর্ষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত বলে একটু বেশি রকমের চড়াই-উত্রাইয়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে নিশ্চিতভাবেই। যে- কারণে নগরের সুস্থ বিকাশ বাংলাদেশে যেমন সম্ভব হয়নি, তেমনি গ্রামীণ সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও পরম্পরার সংরক্ষণ ও সঞ্জীবন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে নানা পর্যায়ে।
বাংলাদেশে যুদ্ধপরবর্তী নগর গড়ে উঠেছে যতটা না ‘অর্গানিক’ উপায়ে তার চেয়ে অনেক বেশি জোর-জবরদস্তির ভেতরে গ্রামকে ভেঙেচুরে। এই ভাঙাগড়ায় ইতিহাসের আদল বদলে যায়। বদলে যায় সংস্কৃতি। বাংলাদেশ নামে যে ভূখণ্ড ৫০ বছর আগে জন্মেছে তার ঐতিহ্যের বয়স হাজার হাজার বছরের। যদিও এ-কথা আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে যে, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কোনো এক রকমের চেহারা নেই। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের গতিপ্রকৃতি একরকমের নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঐতিহ্য কখনো রক্ষণশীল, কখনো গতিশীল। আর ইতিহাস বরাবরই লেখা হয়েছে ক্ষমতাধরের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। তা শাসক শ্রেণী অর্থে বা পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধ অর্থেই হোক। সমস্তটা মিলে সংস্কৃতির বিকাশ বহুমাত্রিক এবং জটিল। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিকাশের প্রক্রিয়া গ্রাম থেকে নগর হয়ে ওঠার মতোই অপরিকল্পিত এবং জোর-জবরদস্তির। বেড়ে উঠতে উঠতে এই সবকিছুর সাথে আমাদের খানিকটা করে দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। কখনো কখনো আমরা এর ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছি। কখনো বলয় ছেড়ে বেরিয়ে আসার পর দূর থেকে প্রত্যক্ষও করেছি।
গ্রাম ও নগর সংস্কৃতি নিয়ে কিছু বলবার আগে সংস্কৃতি সম্পর্কে কয়েকটি সাধারণ কথা পষ্ট করা জরুরি। সংস্কৃতির লৌকিক বা জনপ্রিয় অর্থ এবং বিজ্ঞানসম্মত অর্থ স্বভাবতই ভিন্ন। নৃবিজ্ঞানের ভাষায় পৃথিবীর জীবন-প্রতিবেশে মানুষের সৃষ্টি করা যা- কিছু সে-সবই সংস্কৃতি। আরেক রকম করে বলা যায়, মানুষের আবির্ভাবের পর হতে যে ইকুইপমেন্ট মানুষ তৈরি করেছে, করে চলেছে, সেটা ব্যবহারের জ্ঞান হচ্ছে কালচার বা সংস্কৃতি। আর এই সংস্কৃতিকে দুটো সাধারণ ভাগ দিয়ে বোঝা যায়। প্রথমত, বস্তুগত সংস্কৃতি (বেঁচে থাকার নানাবিধ কৌশল উদ্ভাবন ও তার প্রসার) এবং দ্বিতীয়ত অবস্তুগত সংস্কৃতি (সাহিত্য, সংগীত, সৌন্দর্য কল্পনায় চিত্র, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, নৃত্য, নাটক ইত্যদি)। এই ভাগগুলো আলাদা বা বিচ্ছিন্ন নয়, বরং একটি অপরটিকে প্রভাবিত করে চলে প্রতি মুহূর্তে। এদের মাঝে ভাষা স্বভাবতই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। প্রকৃতির উপাদানকে মানুষ মানবীয় ব্যবহারের নিমিত্তে বদলে ফেলে তার সংস্কৃতির অংশ করে চলেছে। যে-কারণে পাথর কখনো মানুষের অস্ত্র, কখনো ভাস্কর্যের উপকরণ। সংস্কৃতির প্রকৃতি হলো, এটি পরিবর্তনশীল। এ-অঞ্চলের সংস্কৃতিও নানা প্রেক্ষাপটে বদলেছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ছিল মূলত কৃষিভিত্তিক। স্বাধীনতা-পরবর্তী নানা রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, নতুন নতুন পেশার উদ্ভব, অজ্ঞানতায় অনুকরণ এবং নগর সংস্কৃতির বেখাপ্পা রকমের বিস্তারে এর দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। এই বদলে যাওয়া ক্ষেত্রগুলোকে প্রবলভাবে দেখতে পাই ব্যক্তির চেতনা ও আচরণগত পরিবর্তনে, পরিবার কাঠামো ও ব্যবস্থাপনায়, ভাষার পরিবর্তনে, শিখন প্রক্রিয়ায় এবং সামাজিক আচরণ ও পারস্পরিক সম্পর্কে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিবর্তন, শিক্ষাগত পরিবর্তন, অর্থনৈতিক পরিবর্তন, পরিবেশগত পরিবর্তন, সামাজিক পরিবর্তন এবং প্রযুক্তিগত পরিবর্তন এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এ-সকল কেতাবি কথা কম-বেশি সকলেই জানেন। যেটা জানাতে চাই, আমাদের বেড়ে ওঠার দু-একটি অভিজ্ঞতায় এই বদলের স্বাদ।
আমাদের বেড়ে ওঠা ও বদলে যাওয়া চোখ
‘গ্রাম-সংস্কৃতি’র উদ্ভব মূলত ‘গ্রাম-নগরে’র সাদা-কালো বিভাজনের সূত্র ধরে। যে- বিভাজনটি ঔপনিবেশিক শাসনপ্রক্রিয়ার সূত্রকে অনুসরণ করে কার্যকর করা হয়েছে। যাতে নিহিত ‘সভ্য-অসভ্য’, ‘উন্নত-অনুন্নত’, ‘সক্রিয়-নিষ্ক্রিয়’, ‘ইনফেরিয়র- সুপিরিয়র’, ‘সেন্টার-পেরিফেরি’ নামক ক্ষমতাসূচক। এর দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে নির্দেশিত আমাদের চেতনা, আচরণ ও কর্মকাণ্ড। এর গণ্ডি থেকে বেরিয়ে নিজস্ব জ্ঞান-জাগতিক-পাটাতন তৈরিতে কাজ করেছেন বা করছেন যারা তারা সংখ্যায় খুব বেশি নন। গ্রাম ও নগর কে কাকে কতটা প্রভাবিত করেছে সেটা খতিয়ে দেখছেন নিশ্চয়ই গবেষকগণ। তবে ব্যক্তির অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ হলে তা কোনো না কোনো ইতিহাসের অংশ হয়ে রয়ে যায়। ধরে নেয়া যায় সে-কারণে এই লেখার সামান্য প্রয়াস।
শহর বা নগর স্বয়ম্ভূস্থ নয়। গ্রামের মানুষের নানারকম অবদান রয়েছে নগর গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ক্রিয়াশীল থাকার নানা পর্যায়ে। তবু ওই ক্ষমতা কাঠামোর বাইরে জনসাধারণের ভাবনা খুব একটা এগোয় না। একটা নমুনা দেয়া যাক। আমরা যখন সদ্য গ্রাম ভেঙে মফস্বলীয় পরিসরে বেড়ে উঠছি, স্কুলে নতুন সহপাঠী এলে, বিশেষত চাকরিসূত্রে শহর থেকে এলে, বেশ একটু দূরত্বের চোখে মেপেছি। আমরা বলতাম, টাউনের মেয়ে বা ছেলে। তার পোশাক-আশাক, হাতঘড়ি, রাশিয়ান বই পড়া কেতা আমাদের মুগ্ধ করত, সমীহ জাগাত। আমরা ভাবতাম, আহা, আমারও অমন যদি হতো/ থাকত! রাজধানী থেকে আত্মীয়স্বজন এলে, মনে আছে, পোশাকের গন্ধ নিতে ঘুরঘুর করতাম পেছন পেছন। যেন তা বিশেষ কিছুরও অধিক। সহপাঠীদের বলতে গর্ব বোধ করতাম আমাদের কেউ ঢাকায় থাকে। শহর বা নগর মানে দূরের কিছু, মোহের কিছু, আমার থেকে উঁচু কিছু। আমাদের মফস্বলের পথগুলো তখন কেবল লাল লাল খোয়া বিছানো, গ্রামের পথগুলো কাদায় ডোবা। সন্ধ্যা গড়িয়ে এলে বিজলি বাতির চেয়ে হারিকেন-কুপিতেই ভরসা বেশি। কৈশোরে নগর বা শহরকে ঘিরে ‘শহরের মতো’ হওয়ার এক ধরনের ফ্যান্টাসি নিয়ে আমরা অনেকেই বেড়ে উঠছিলাম। এই ‘আমরা’ থেকে ‘ওরা’ হওয়ার চেষ্টা।
বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতায় ভাষার বদলের উল্লেখ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা যে ‘সুপিরিয়র- ইনফিরিয়র’ ক্ষমতাকাঠামো গ্রাম-নগরকে বোঝার ক্ষেত্রে প্রভাবক হয়ে দাঁড়ায় সেটি ভাষার বদলের ক্ষেত্রেও কার্যকর। আর এর বদল প্রকটভাবে প্রকাশ পেয়েছে দৈনন্দিন যোগাযোগ থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগে। গ্রামের ভাষা বলে ভাষার কোনো একটা সার্বিক চেহারা থাকে না। শহর বা নগরের ক্ষেত্রেও তাই। এক-এক অঞ্চলের ভাষার উদ্ভব, বিকাশ ও বদলের ধরন এক-এক রকম। তেমনি জাতীয় পর্যায়ের ভাষা এবং দৈনন্দিন জীবনে পারস্পরিক সম্পর্কে চর্চিত যে-ভাষা তার সাথে পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। মান ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষার পার্থক্য যেমন। তবে শহর বা নগরের সকলে মান ভাষায় কথা বলে তা ভাবলে ভুল হবে। ধরা যাক, শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের লোক স্কুল-কলেজ বা অফিসে যে-ভাষায় কথা বলে, বাড়ির সকল সদস্য মিলে সেই একই ভাষায় কথা নাও বলতে পারে। শহরে নিম্ন আয়ের যারা আছেন তাদের কথ্য ভাষাও মান ভাষা নয়। আমি যেটা লক্ষ্য করেছি, দৈনন্দিন জীবনে ভাষা-ব্যবহারে যে-শিষ্টাচার সেটি জাতি, শ্রেণী, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বিশেষে গত ৫০ বছরে কমেছে বই বাড়েনি। সেটা কাউকে সম্বোধন বা সম্ভাষণ করা থেকে শুরু করে আলাপচারিতার ধরন, ফোড়ন কাটা, আক্রমণ করা পর্যন্ত বলা যেতে পারে। কাকে, কোথায়, কীভাবে সম্বোধন করছি; আবেগের বহিঃপ্রকাশ কেমন ভাষায় হবে, সামাজিক যোগাযোগের মূল সুর কী- এসবের ভেতর কোথাও বড় রকমের ফাঁক তৈরি হয়েছে। একধরনের ‘হীনমন্যতা বোধ’ থেকে ‘জাতে ওঠা’র ব্যাপার যেন। এটা নগর বা গ্রামের ক্ষেত্রে সমান প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে কে কাকে প্রভাবিত করেছে সেটার চেয়েও জরুরি কোন প্রক্রিয়ায় বিষয়গুলো বদলে গেছে সেদিকে নজর দেয়া।
মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশের পরিবর্তন একটা বড় কারণ, আমার মনে হয়েছে। শহরের মধ্যবিত্ত বলতে যে গড়পড়তা ইমেজ ছিল তার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল শিক্ষা ও চাকরির সঙ্গে। নব্বই দশকের মাঝামাঝি এর বদলটা চোখে পড়ে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির বাহার দেখে। আমরা দেখলাম মধ্যবিত্ত শ্রেণী গাড়ি চড়ে। বেশ জাঁকালো ব্যবসায়ীও হয়। বিয়ের শপিং করে কলকাতা-বোম্বেতে। ছেলেমেয়েদের ইংলিশ মিডিয়াম বা কিন্ডারগার্টেনে পড়ায়। খাদ্যে, পোশাকে, আবাসনে, চিকিৎসাসেবা নেয়ায়, শিক্ষায় এবং অবকাশ যাপন ও বিনোদনে চটজলদি বদলগুলো চোখে পড়তে থাকল। বেশ মিলেমিশে ঠেলে-গুঁতিয়ে বাংলা মাধ্যমে সরকারি/ বেসরকারি স্কুল/কলেজে পড়া আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চাপ ও প্রস্তুতি নিয়ে আমাদের মতো ব্যস্ত হচ্ছিল না অনেকেই। এর পাশাপাশি পাঠাভ্যাসের চর্চা ব্যাহত হওয়ার একটা ধাক্কাও টের পেলাম। পাড়া বা মহল্লার যে-সংস্কৃতি ছিল সেটিও ব্যাহত হয়েছে নানা দিক থেকে। আর সে-কারণে পাড়ার পাঠাগার, পাড়ার নাটকের দল আর সাংস্কৃতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড থেমে গেছে ধীরে ধীরে। যেহেতু শিক্ষা ক্রমশ বাণিজ্যমুখী হয়েছে আর এর সাধারণ প্রবণতা হলো মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, সে-কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে যে-বিস্তীর্ণ পরিসর তার সাথে যোগাযোগ কমে গেল। এই প্রবণতার ঢেউ গ্রামে এসেও লাগল, শিক্ষার লক্ষ্য গেল পালটে। শিখন প্রক্রিয়ায় ধস নেমেছে বলেই পাঠ্যপুস্তকের বাইরে সাহিত্য-সংস্কৃতি- ক্রীড়ায় যুক্ত হওয়ার প্রবণতা কমে গেল শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের ভেতর। কাজেই পাড়া-মহল্লার শিখন প্রক্রিয়ার পরিসর সীমিত হয়েছে বারবার। কথা বলতে পারার, প্রশ্ন করার সক্ষমতা কমে এসেছে ধীরে ধীরে। কোনোটাই ভালো করে না জেনে মান ও আঞ্চলিক ভাষার যথেচ্ছ মিশ্রণে, ক্রিয়াপদের বেধড়ক ভাঙচুরে ভাষার একটা জগাখিচুড়ি চেহারা দাঁড়ালো নগরে ও গ্রামে। হতে পারে এটা ভাষার পরিবর্তনের ইতিহাসের কোনো একটি ধাপ। কিন্তু তারপরও এই বিবর্তিত এলোমেলো রূপটি এখনকার সত্য।
ভাষার সাথে সাথে, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের ফলেও এই জাতির শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানসিক বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রেও বড়সড় বদল এসেছে। একটা নমুনা দিই। শিশুকালে আমরা অনেকেই গান, নাচ, ছবি আঁকা, আবৃত্তি, বিশেষ খেলা শিখতাম। আমাদের বাবা-মায়েরা শেখাতেন স্বাভাবিক সাংস্কৃতিক বিকাশের কথা ভেবে। সকলেই ভাবতেন না, তার ছেলে বা মেয়ে ‘স্টার’ বনে যাবে, ‘সেলিব্রেটি’ হবে, ‘কিছু হয়ে’ দেখাবে। এই সকল মুনাফা লাভের বিষয়ে চট করে জড়িয়ে যাওয়া ও লেগে থাকার পর্ব তখনো তৈরি হয়নি। বাণিজ্য আর বহুজাতিক কোম্পানির বাজার ধীরে ধীরে সেই প্রবণতা তৈরি করে দিল। মধ্যবিত্তের মানসিকতা নতুন করে ‘পরিসরের রাজনীতি’র শিকার হলো। ‘স্মল-লার্জ’-এর ধারণা ছেঁকে ধরল প্রজন্মের পর প্রজন্মকে। ‘প্রান্ত’ থেকে ‘কেন্দ্র’ এরা। এই কেন্দ্রে যাওয়ার বাসনায় আকুল হলো এবার দু-একটা উৎসবের দিকে চোখ ফেরানো যেতে পারে। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সর্বজনীন উৎসবটি পয়লা বৈশাখ। তবে শ্রেণী, ধর্ম ও প্রেক্ষাপট ভেদে তাৎপর্য ও উদ্যাপনের ধরন ভিন্ন। গ্রামীণ অর্থনীতি ও ব্যক্তিপর্যায়ের উদ্যোগ, ক্ষুদ্র-মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হালখাতার গুরুত্বকে ঘিরে পয়লা বৈশাখ যে অর্থে তাৎপর্যময়, নগরজীবনের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ও এলিট শ্রেণীর কাছে বর্ষবরণ ও পান্তা-ইলিশের বৈশাখী উদ্যাপন সেই তাৎপর্য বহন করে না। বৈশাখী মেলায় কদমা-বাতাসা, মুরালি, নকুল দানা, নৈমিত্তিক তৈজস, শখের অলংকার, যাত্রাপালা আর নাগরদোলার আয়োজন গ্রামীণ সংস্কৃতির আবহমান ঐতিহ্য। রঙিন তিনকোনা কাগজ দড়িতে বেঁধে বাঁশের খুঁটিতে লাগিয়ে সাজানো মেলার বাউন্ডারি। রাতে নারী-পুরুষ-শিশু দর্শক উপভোগ করত যাত্রাপালা। গ্রামীণ এই আবহের সাথে আশির দশকের শেষের দিকে ঢাকার রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণে জনসমাগমকে ঘিরে কোনো কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে ইলিশ-পান্তা খাওয়ার উদ্ভাবন একেবারেই সংগতিপূর্ণ নয়। অথচ ক্রমে সেটিই এলিট মধ্যবিত্ত এবং গণমাধ্যমের প্রচার ও প্ররোচনায় বাংলাদেশের বাঙালি ঐতিহ্য হিসেবে দাঁড়িয়ে গেল। একটি প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভেতর বাঙালির চেতনা ও সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে ছায়ানটের বর্ষবরণের অগ্রণী ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু অপর যে- সকল সংগঠন এই সমাবেশকে ঘিরে আশির দশকের শেষ দিকে আবহমান খাদ্য- সংস্কৃতিতে উদ্ভটত্ব যোগ করল, তাকে সাদরে মেনে নেয়ার কোনো কারণ দেখি না। মা-খালাদের কাছে শুনেছি, বাংলা নববর্ষে সম্পন্ন সকলের গৃহে দুটো ভালো-মন্দ খাবারের আয়োজন হতো। আবার সাধারণ খাবারের চলও ছিল। বাড়িতে অতিথি এলে নারকেল দুধের পোলাও, চিংড়ি, ইলিশ, মুরগি/ গরু/ খাসির মাংস রান্না হতো। সাথে দই-মিষ্টি ও মৌসুমি ফল। পাস্তা খাওয়ার যে-রেওয়াজ সেটি কৃষিভিত্তিক পরিবারের রোজকার বিষয়। তবে এর বিশেষ প্রথা রয়েছে বৈশাখ মাসের নয়, আশ্বিন-কার্তিক মাসের। সেই পাস্তা খাওয়া হয় মরিচ পোড়া আর নুন সহযোগে। কেউ কেউ এর সাথে দু-তিন পদ যোগ করে নেয়। এ-বিষয়ে যে পদ্য- প্রবাদ প্রচলিত সেটির উল্লেখ করা যেতে পারে-
‘আশ্বিনে রান্দে কার্তিকে খায়
যে যে বর মাগে, সে সে বর পায়।’
অর্থাৎ আশ্বিন মাসের রান্না করা ভাত কার্তিক মাসে খেতে হয়। তাহলেই যার যার চাওয়া পূরণ হবে। এই প্রথা পয়লা বৈশাখের সাথে সম্পৃক্ত নয়। গ্রামের পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের সাথে শহুরে পান্তা-খাওয়া প্রথার কোনো সমন্বয় যে ঘটেনি তা বলাই বাহুল্য। তবে মফস্বল ও জেলা শহরগুলোয় পান্তা-ইলিশের উদযাপনের হিড়িক পড়ে যায় ঠিকই। আমাদের সবেমাত্র তরুণবেলায় সেই হিড়িকে আমরাও
মজেছিলাম খানিকটা। বাজার আর মিডিয়ার আওতা থেকে দূরে থাকা এই পরিসরে কঠিন, বলতে হবে। এই প্রসঙ্গে বলি, আতিথেয়তার ধরনে গ্রামে কিছু সাধারণ প্রবণতার বদলও চোখে পড়ে। সেই যে, ‘ইনফিরিয়র-সুপিরিয়রে’র ভূত চেপে আছে। বাংলাদেশের গ্রামগুলোয় অতিথিকে শুরুতে সাধারণত লেবুর শরবত, ভাব পানীয় হিসেবে দেয়ার চল ছিল। তবে এসব পানীয়র বদলে এসেছে ট্যাং ও অন্যান্য কোমল পানীয়। নানা রকম পিঠার জায়গা করে নিয়েছে নুডলস, চিপস। বলা যায়, গ্রামে নগর সংস্কৃতি নয়, প্রবেশ করেছে বহুজাতিক কোম্পানির বাজার। শহুরে উৎসবের কোনো নমুনা গ্রামের ঐতিহ্যকে ইতিবাচক দিক থেকে খুব প্রভাবিত করেছে এমনটা সবক্ষেত্রে বলা যায় না। নেতিবাচক চাপের ছবিটাই মনে আসে আগে। গ্রামে সাধারণ মানুষের পয়লা বৈশাখের খাবার আয়োজন আজো শাক- সবজি, মাছ-মাংস দই-চিড়া ফল। শহুরে সংস্কৃতির ট্রেডমার্ক হিসেবে যে পান্তা- ইলিশের ইমেজ তৈরি হয়েছে সেটা ফলত গ্রামে কার্যকর হয়নি। তবে সফল হয়েছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর স্পন্সরশিপ, ‘গ্রাম থেকে লাইমলাইটে আসা’র প্রবণতাকে পুঁজি করে নিজেকে বদলে ফেলা, সফল করার জন্যে নানা রকমের ‘মূলমন্ত্র’। অন্যদিকে নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থকে সফল করতে, সংস্কৃতির নতুন প্রবণতা তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পাশে থাকছে গণমাধ্যম।
আমাদের সংকট আমাদের উতরে যাওয়া
দেখে মনে হয়, এসব বদল স্বাভাবিক। তবে স্মৃতি হাতড়ালে আর ইতিহাসের পাঠ নিলে শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে আসে। আমাদের ভয় ক্ষমতা, সম্পদ ও ভোগ্যপণ্যের অসম বণ্টনকে, যা অরাজকতা শোষণ জিইয়ে রাখে। যার প্রকোপ বাড়ছে বই কমছে না। আমাদের ভয় পেছন দিকে হাঁটার। ঔদার্য্য ফেলে সংকীর্ণ পথে যাওয়ার। মোট কথা একটি রাষ্ট্রের ‘পলিটিক্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ আর ‘সেন্স অফ ইউনিটি’র সুসমন্বয় না ঘটলে যে যে বিপর্যয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয় আমরা ঠিক তার ভেতর দিয়েই চলেছি। ভয় এখানেই, কারণ আমাদের সংস্কৃতি চর্চায় এর ছাপ পড়েছে। শিক্ষায়, সহবতে, ভাষায়, বাজার ব্যবস্থায়, উৎসবে আমরা বদলের সাক্ষী। এসব দেখে-শুনে মনে হতে পারে কবিগুরুর বাণী হয়তো চিরায়ত ‘ভালো মানুষ নই গো মোরা ভালো মানুষ নই গুণের মধ্যে ওই আমাদের, গুণের মধ্যে ওই।’ তবে ভালো-মন্দ দিয়ে এ-পরিস্থিতি বুঝতে যাওয়াটা ঠিক কাজের নয়। নিয়ত পরিবর্তনশীল সংস্কৃতির আপেক্ষিকতাকে বুঝতে পারলে দায়- মুক্তি ঘটে খানিকটা। ধরা যাক, জ্ঞাতি সম্পর্কের নব রূপায়ণ। শহুরে প্রেক্ষাপটে দেখেছি আমরা শ্রমিক শ্রেণীর ভেতর। আমাদের যে-সকল নাগরিক বস্তিবাসী আছেন, তারা নিজেদের ভেতর একটা ‘ওয়াইডার কিনশিপ নেটওয়ার্ক’ তৈরি
করেছেন নিজেদের বেঁচে থাকার কৌশল হিসেবে। যে-কারণে গৃহপরিচারিকা ফ্ল্যাটবাড়িতে সেবা দিতে এলে তার সন্তানটি পাশের ঝুপড়ি ঘরের মানুষদের তত্ত্বাবধানে থাকতে পারছে। এই সম্পর্ক ফ্ল্যাটবাসীদের সুরক্ষিত দেয়াল ভেদ করে তৈরি করা সম্ভব হয় না। কারণ এই প্রকট নগর মানুষকে বিচ্ছিন্ন হতে প্ররোচিত করেছে আর আমরা তা হয়েছিও। তবে মজার ব্যাপার হলো, সেই শিক্ষিত নাগরিকের দেয়ালে ঝোলে নকশিকাঁথা, খাবার টেবিলে মাটির তৈজস, উৎসবে পরিপাটি পোশাকে ‘নির্মিত-বাঙালিত্ব’র জয়গান। এই ‘ছদ্ম একাত্মবোধ’ পুঁজিবাদ ও বাজারের দান, বলাই বাহুল্য। তারপরও গ্রাম ও নগর যার যার উদ্ভাবনী দিক নিয়ে একে অপরের সাথে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করে চলেছে। কোনো একটা বা দুটো ফ্যাক্টরকে বিশ্লেষণ না করে জীবনযাপনের এই সংস্কৃতিকে ‘সার্বিক’ জায়গা থেকে বোঝা জরুরি। বছর পঞ্চাশ হতে চলেছে। নানা চড়াই-উৎরাইয়ের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে এবং যাচ্ছেও বাংলাদেশের কয়েকটি প্রজন্ম। যারা সদ্য স্বাধীন দেশের রক্তস্নানের ভেতর, ক্ষতের ভেতরে জন্মেছে, তাদের নিরাশার ধরন ভিন্ন। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, দুর্নীতি, দুর্যোগ, মহামারি, পরাশক্তি লড়াই করছে মানুষ, হার স্বীকার করে নিচ্ছে মানুষ। তবু শুভ বোধ, উদ্যম নিয়ে এগিয়ে আসে এদেরই কেউ কেউ। নিজস্ব ‘জ্ঞানজাগতিক পাটাতন’ তৈরিতে কাজ করছেন কেউ কেউ। আমরা জানি ‘এক ভাষা এক সংস্কৃতি’ বলে কিছু নেই। আমরা বৈচিত্র্যকে ধারণ করে আছি। গ্রাম বলি, পাহাড় বলি বা নগরই বলি, সংস্কৃতি লালন করতে পারাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের কমতিগুলোর দিকে সতর্ক নজর রেখে নতুন উদ্যোগ নেবার কথা ভাবা যেতে পারে যাতে গ্রাম-নগর সম্পর্ক, পারস্পরিক বিনিময় আর জোর-জবরদস্তির না থাকে। রাষ্ট্রীয় পর্যায় হোক, ব্যক্তিগত পর্যায় হোক, আমাদের ভাবনা ও শিখন প্রক্রিয়া বেঁচে উঠলে একটা ‘অর্গানিক’ স্বতঃস্ফূর্ত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। আমাদের সংস্কৃতির বিকাশে সেদিকে আমরা নজর দিতে পারি। ৫০ বছর! ৫০ বছর আমাদের কাছে সে-প্রত্যাশা করতেই পারে।
লেখক পরিচিতি: সাবেরা তাবাসসুম
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নৃবিজ্ঞানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন প্রায় দশ বছর। কবিতার সাথে তাঁর আজন্ম সখ্য। প্রথম বই প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। সম্প্রতি মজে আছেন গুলজারের হিন্দি কবিতা ও আমেরিকান কবি শ্যারন ওল্ডসের কবিতার অনুবাদে। প্রকাশিত মৌলিক গ্রন্থের সংখ্যা তেরো ও অনূদিত গ্রন্থের সংখ্যা একটি। সবগুলোই কবিতার।
Leave a Reply