শিবলী আহম্মেদ সুজন
খুলনা জেলার অন্যতম ভয়াল নদী। শিবসার উৎপত্তি যশোহরের পাইকগাছার কাছে।পাইকগাছা থানা সদরের পশ্চিমে শিববাটির পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত শিবসা। এই নদীটির দৈর্ঘ্য ৮৫ কিলোমিটার ও গড় প্রস্থ ১৫১০ মিটার।শিবসা নদীটির মধ্যদিয়ে ছোট বড় সকল ধরনের নৌযান চলাচল করে থাকে।এর ঠিক আড়াই মাইল উত্তর রাঢুলির পূর্বদিকে কপোতাক্ষের বিশাল জলস্রোত শিবসা নাম নিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত পশুর আর কপোতাক্ষ।
দেলুটির কাছে কপোতাক্ষ ও ভাদর নদী থেকে উৎপন্ন শিবসা সাগরে প্রবাহিত হওয়ার পথে তিনমুখে বিভক্ত হয়েছে মন্দাবাড়ি, মরজাল ও হান্দুয়াস নামে। তারপর মুরঘাটায় আবার মিলিত হয়েছে। হানসুরার মাধ্যমে আড়পাঙাসিয়া নদীর সঙ্গে যুক্ত।
শিববাটি পর্যন্ত শিবসা এসেছে দক্ষিণ দিকে সোজা। তারপর পাইকগাছার কাছে হঠাৎ বাঁক নিয়েছে পূবদিকে। এরপর প্রবাহপথ আঁকাবাঁকা। এই পথরেখায় শিবসার সঙ্গে উত্তর দিক থেকে এসে যুক্ত হয়েছে হরিয়া, ঘাংরাইল, নরা, ডেলটি, হাবরখালি, বাদুড়গাছা নদী। এতগুলি নদীর জলরাশি শিবসাকে করেছে উদ্দাম। তারপর দক্ষিণমুখী শিবসার সঙ্গে গড়াইখালির কাছে পূবদিক থেকে ঢাকী ও পশ্চিমদিক থেকে মিনাজ এসে মিশেছে। একসময় মিনাজ নদীর বেশ কয়েকটি ছোট ছোট ধারা কপোতাক্ষ-শিবসার যোগসাধন করেছিল। সেসব শাখা এখন মৃত।
পশুরের শাখানদী ঢাকী মিশেছে শিবসায়। চালনার কাছে ঢাকীর নাম চুনকুড়ি। তারপর এসে মিলিত হয়েছে ভদ্রা। গড়াইখালির কাছে ঘোষখালি শিবসার সঙ্গে কপোতাক্ষের সংযোগ-সাধন করেছিল কয়রা নদী দিয়ে। ঘোষখালি এখন মৃতপ্রায়। এই সংযোগস্থলের নিচের দিকে হড্ডার খাল কয়রা হয়ে ঘোষখালিতে পড়েছে।
হড়ার পর শিবসার পশ্চিমে সুন্দরবন। পূবদিকে নলিয়ানের দক্ষিণে যেখানে ভদ্রার শাখা মিলিত হয়েছে সেখান থেকে সুন্দরবন শুরু। সুন্দরবনে শিবসার অসংখ্য শাখা। এইসব শাখা নদী সৃষ্টি করেছে অসংখ্য দ্বীপ। শাখা নদীগুলির মধ্যে আড়ুয়া শিবসা বেশ বড়। আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে শিবসা-পশরের মিলিত স্রোত কংগা বা মরজাদ নামে সাগরে পড়েছে। মরজাদের দক্ষিণে হিরণ পয়েন্ট।
শিবসা নদীর চরিত্র
আমাদের দেশে সাধারণ তিন প্রকার নদী রয়েছে।একটি পাহাড় থেকে আসা পানির দ্বারা সৃষ্ট নদী আরেকটি হচ্ছে হাওড়ের নদী এবং আরেকটি হচ্ছে সাগরপাড়ের নদী।
শিবসা একটি সাগরপাড়ের নদী।এ নদীর চরিত্র হলো এ নদীটি ছয় ঘন্টা অন্তর অন্তর জোয়ার-ভাটায় প্রভাবিত হয়ে থাকে।পাহাড় থেকে আসা পানির দ্বারা সৃষ্ট নদীর ফলে বর্ষাকালে এই নদীর পানি বেড়ে যায়। এতে করে সাগর থেকে আসা লবণ পানির পরিমাণ অনেকটাই কম থাকে।
ফারাক্কা বাঁধ থেকে পানি না আসায় গঙ্গার পানি কমে গিয়েছে।সাগর থেকে লবণ পানি প্রবাহিত হয়ে নদীতে আসার কারণে নদীর দুপাশে জন্মানো গাছপালাগুলো মারা গেছে।
শিবসা নদীটি বর্তমানে মারা যাচ্ছে।শিবসার দু’পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করে গড়ে উঠেছে জনবসতি। শিবসার বুকে জমছে পলি। নির্বিচারে মানুষ সুন্দরবনের গাছপালাগুলো কেটে ফেলছে।সরকার থেকে এগুলো লক্ষ্য করছে না। সরকারের উচিত এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করা ও সময় মত যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া।
Leave a Reply