শ্রী নিখিলনাথ রায়
এইরূপে কৃতঘ্ন চক্রান্তকারিগণের ষড়যন্ত্রে, বঙ্গের শেষ স্বাধীন নবাব হতভাগ্য সিরাজের জীবনলীলার অবসান হইল।
এ স্থানে আমরা একটি কথা বলিয়া রাখি। সিরাজ মৃত্যুকালে হোসেন কুলী খাঁর মৃত্যুকে একটি ভয়ানক পাপকার্য্য মনে করিয়াছিলেন। ইহা হইতে তাঁহার প্রকৃতি কিরূপ ছিল, তাহা বুঝা যাইতেছে। জীবনের মধ্যে সেই ঘটনাটিকেই তিনি কেবল সর্ব্বাপেক্ষা ভয়াবহ বলিয়া মনে করিয়াছিলেন। নতুবা মৃত্যুকালে তাহার উল্লেখ করিতেন না। আমরা দেখাইয়াছি যে, সিরাজ স্বীয় জননীর কলঙ্কক্ষালনের জন্য আদর্শমহিলা মাতামহীর পরামর্শে উত্তেজিত হইয়া, হোসেন কুলী খাঁকে বধ করিতে আদেশ দেন।
যে ব্যক্তি নিজ জননীর পবিত্রতাপহারীর হত্যাকেও ভীষণ- পাপকার্য্য বলিয়া মনে করিতে পারে, হায়! দেশীয় ও ইংরেজ ঐতিহাসিক পুঙ্গবগণ, তাহার প্রকৃতিকে নিষ্ঠুর ও শয়তানতুল্য বলিয়া বর্ণনা করিতে তোমাদের বিবেকে কি কিঞ্চিন্মাত্র আঘাত লাগে নাই? এস্থলে সে কথার অধিক আলোচনার প্রয়োজন নাই। সিরাজের এই সৌন্দর্য্যসারভূত দেহ- বৃষ্টিকে অস্ত্রাঘাতে খণ্ড খণ্ড করিয়া, তদীয় শোণিতধারায় নূতন নবাবের অভিষেক ক্রিয়া সংসাধিত হইল। অতঃপর সিরাজের দেহ হস্তিপৃষ্ঠে সমস্ত মুর্শিদাবাদ নগরে পরিভ্রামিত হইল। নিয়তিচক্রের ভীষণ আবর্তন-দর্শনে জনসাধারণ বিস্ময়বিহবল হইয়া পড়িল!
মুতাক্ষরীনকার এই সময়ের একটি ঘটনার উল্লেখ করিয়াছেন। তিনি বলেন যে, যে স্থলে হোসেন কুলীখার হত্যাকাণ্ড সম্পাদিত হয়, সিরাজের দেহবাহী হস্তীটি কোন কারণে সেই স্থলে দণ্ডায়মান হইলে, সিরাজের দেহ হইতে নাকি তথায় দুই চারি বিন্দু রক্তপাত হইয়াছিল।
Leave a Reply