বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন

প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-১৪)

  • Update Time : বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৪, ৮.০০ পিএম

পিওতর মান্তেইফেল

কুকুর কখন হাঁসের গন্ধ পায় না

‘ভ্যালা এক কুকুর জুটেছে আমার! দেখুন-না, ডিমে তা দিচ্ছিল হাঁসটা, অথচ তার দু’পা দূর দিয়ে কুকুরটা চলে গেল খেয়াল না করে।’

খেদ করছিল এক শিকারী। তবে বেচারা কুকুরের এতে দোষ নেই। অতি তীক্ষ্য ঘ্রাণশক্তি থাকলেও ডিমে-বসা হাঁসকে বার করা কঠিন।

পাখির গায়ে চবি’ বা ঘামের কোনো গ্ল্যান্ড নেই। শুধু একটা গ্ল্যান্ড আছে লেজের গোড়ায়, ককসিক্স, তা থেকে গন্ধময় চর্বির মতো একটা জিনিস বেরয়। গ্ল্যান্ড থেকে পাখি ঠোঁটে চর্বি খটে তা পালকে মাথায়। জলচর পাখির বেলায় এই গ্ল্যান্ডটা খুবই বিকশিত, তাই সবাই তারা অনেকখন জলে লাফালাফি করতে পারে ভেজে না একটুও। লোকে তো আর খামোকা বলে না ‘যেন হংসপৃষ্ঠে জল’।

পাখি যখন ডিমে তা দেয়, তখন পালকে চর্বি মাখায় না, ফলে গন্ধও বেরয় না তার পালক থেকে। অনেক দূর থেকে গন্ধে গন্ধে তাকে ধরার উপায় থাকে না কুকুরের। এই বৈশিষ্ট্যটা পাখিদের বাঁচায়: গন্ধ না থাকায় হিংস্র জন্তু তাদের টের পায় না। তাছাড়া, পালক চর্বি মাখা থাকলে ডিমও নির্ঘাত তৈলাক্ত হয়ে উঠত, খোলার গায়ের যেসব ছিদ্র দিয়ে বাতাসের অক্সিজেন ভেতরে প্রবেশ করে, তা যেত বন্ধ হয়ে; দিনের আলো আর দেখতে হত না ভবিষ্যৎ ছানাটিকে, মারা পড়ত।

কিন্তু ডিম ফুটে ছানা বেরনো মাত্রই হাঁস ‘সুন্দরী’ হয়ে উঠতে শুরু করে, চটপট চর্বি মাখায় নিজের পালকে। ককসিক্স থেকে খুঁটে তোলা এক বিন্দু চর্বি’ হাঁসের দুই ঠোঁটের চাপে ছড়িয়ে পড়ে, আর তার মধ্য দিয়ে, যেন তৈলাক্ত দুই রোলারের ভেতর দিয়ে সে এক-এক করে প্রতিটি পালককে টেনে নিয়ে যায়। গলা আর মাথায় চবি’ মাখায় সে সব শেষে, তৈলাক্ত পালকের গায়ে তা ঘষে।

মাংসের বাচ্চা যদি হয় ইনকিউবেটরে, তাহলে দেখা যায় যে জলে তাদের গা ভিজছে, মাঝে মাঝে ডুবেও যায়, অথচ হাঁসের তত্ত্বাবধানে থাকা বাচ্চারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাঁতরতে পারে, জল থেকে ওঠে প্রায় একেবারে শুকনো গায়ে।

তার রহস্যটা আন্দাজ করা কঠিন নয়: হাঁস-মায়ের গায়ের তাপে গরম হবার সময় ছানাদের গায়ে লাগে চর্বি মাখা পালক, ফলে তাদের রোঁয়াও তৈলাক্ত হয়ে যায়, জলে গা ভেজে না। কিন্তু ‘অনাথগুলোর’ তেল মাখার জায়গা নেই, অথচ নিজেই নিজের যথাযোগ্য ‘প্রসাধন’ করার মতো ক্ষমতা তখনো তাদের হয় নি। জলে ওদের রোঁয়া প্রায়ই ভিজে যায়, ফলে গা ভারি হয়ে তলাতে থাকে। যাঁরা কোনো রকমে ডাঙায় এসে উঠতে পারে, তারাও প্রায়ই মারা যায় ঠান্ডায়।

যা বললাম সেটা পরীক্ষার জন্যে আমরা ডিম-দেওয়া আর ডিম-না-দেওয়া কয়েকটা হাঁসের পালক ছি’ড়ে বিশ্লেষণ করি (সক্সলেট যন্ত্রে)। দেখা গেল প্রথম দলের পালক প্রায় চর্বিহীন, দ্বিতীয় দলের পালকে চর্বি প্রচুর।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024