বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-১০৫)

  • Update Time : বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

খোকা গা ছেড়ে দেবার ভঙ্গি ক’রে বললে, ‘আমি তোমার কে? আমার ওপর এতো অধিকার খাটাতে চাও কেন? আমি তোমার মুটে- মজুর নই, কোনো বোঝা নিতে পারবো না, সাফ কথা।’

‘আমি কি সত্যিই বোঝা? কি ক’রে বলতে পারলে?’

‘তুমি সিনেমায় নামো না কেন?’

বিছানার এক পাশে ব’সে থোকাকে একটা সিগ্রেট ধরিয়ে দিলো নীলাভাবী। বললে, ‘আমি বুঝতে পারছি নিজের ওপর তোমার তিলবিন্দু আস্থা নেই। সে না হয় হ’লো, এতো ভয় পাচ্ছো কেন, আমি বাঘ না ভাল্লুক, তোমাকে বুঝি গিলে খাবো?’

‘অসম্ভব কিছু নয়। নিজের ওপর আস্থা থাকলে অসময়ে এই বান্দাকে সেগুনবাগিচায় কোনো শালা দেখতো না। আমি নিশ্চয় ক’রে বলতে পারি তুমি আমাকে যাদুটোনা করেছো, পানসুপুরি ছেড়েছো, তোমার মতলব খারাপ!’

নীলাভাবীর চোখমুখ দপ্ ক’রে উঠলো একথায়। বললে, ‘মাঝে মাঝে তুমি এমন কদর্য কথা বলো! আগে তো এমন ছিলে না। এসব নোংরা ইয়ার্কি তুমি অন্য কোথাও মেরো, আমার কাছে না!’

নীলাভাবীর একথায় তেজ ছিলো। এই তেজ খোকাকে স্পর্শ করে। এই তেজ খোকাকে তার নিজের মতো ক’রে পথ দেখায়। শেকড়- বাকড়হীন এই সমস্যাকে এইখানেই এই মুহূর্তে শেষ ক’রে দিতে হবে, তাকে নেবার প্রশ্ন যেন আর কোনোদিন মাথা তুলে চাড়া না দেয়, খোকা আলো দেখতে পায়। সে ওঠে ব’সে বললে, ‘ভণিতা ছেড়ে সোজা রাস্তায় এসো, কি চাও কি তুমি, কেন এ খেলায় মেতে উঠেছো? রসাতলে নিয়ে যেতে চাও বুঝি আমাকে?’

নীলাভাবী স্তম্ভিত হ’য়ে দীর্ঘ দৃষ্টিতে খোকার দিকে তাকালো।। খোকা বললে, ‘তুমি নিজেকে শাসন করো, অশ্লীলতা বিকৃতি স্বেচ্ছাচারিতা ধ্বংস ক’রে দেবে তোমাকে, এভাবে ছত্রাখান কোরো না নিজেকে। আমি তোমার ভালো চাই, আমি তোমার বন্ধু। যদি বলো চিরকাল বন্ধু থাকবো, আমি চাইবো তোমার ভালো হোক। নিজের হাতে তোমাকে নষ্ট করবো, ভাবো কি ক’রে, আমার ভিতরে শুধু লাম্পট্যই দেখলে,–

‘কাকে ভালোমন্দ বলছো? তোমার কাছে শিখতে হবে ভালো- মন্দ?’

‘সে তোমার ইচ্ছা! আমি শুধু বলছি আমার অক্ষমতার কথা। আমি যা পারবো না আমার কাঁধে তা চাপাতে যেও না।’

‘তার মানে আমি তোমার কাছে দয়ার কাঙাল।”

‘তুমি ইচ্ছে ক’রে এইভাবে দেখছো–‘

‘কিভাবে আমার স্বেচ্ছাচারিতাকে দেখলে, বিকৃতিকে চিনলে?’

‘কথা ঘুরিয়ো না। আমি যা বলছি তুমি তা বুঝেছো। ভান কোরো না না-বোঝার। আগুন ঘাঁটাঘাঁটি কোরো না, হাত পুড়ে যাবে, মুখ ঝল্ল্সে যাবে। তুমি যে সুখ-শান্তির কথা ভাবো সারা দুনিয়া চ’ষে বেড়ালেও তা কখনো কেউ পাবে না, এ আমি জানি। শান্তি রচনা করতে হয়। নিজেকে সংযত করো, নিজেকে শাসন করো–‘

‘ চমৎকার! থামলে কেন, বলো, আরো বলো!’

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024