বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-১০৬)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

‘বলবো না কেন, তুমি আমাকে বলাচ্ছো। হেসে উড়িয়ে দিয়ে বাহাদুরি নেবার চেষ্টা ক’রো না। যেদিন তোমাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম, সেদিন তোমার ভিতর এ বিকৃতি ছিলো না; কতো স্নিগ্ধ ছিলে তুমি, আমার কাছে সেটাই ছিলো তোমার আকর্ষণ। ভেবে দ্যাখো, আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছো, কিভাবে মানসম্মান আত্মগরিমাকে জলাঞ্জলি দিতে বসেছো–‘

‘তাহলে আমি এই?’

‘হ্যাঁ, তুমি এই; তোমার সুবুদ্ধি নেই, সংযম নেই, হিতাহিতজ্ঞান

নেই, আত্মশাসন নেই, ভেবে দেখেছো কখনো এর শেষ কোথায়?’ ‘বুঝতে পারছি, খুব বেশি আশা ক’রে ফেলেছি আমি তোমার কাছে।’

‘এখন দেখছো একজন প্রতারক, এই তো?’

‘বুঝতে পারি না। তোমার মতো এতো সহজে আমার মাথায় কিছু ঢোকে না। কোনটা ভণ্ডামি আর কোনটা ভালোমানুষি সেটা তুমিই জানো। শুধু বুঝতে পারছি আমার চরিত্র নেই, চরিত্রকে হাটে-বাজারে বন্ধক দিয়েছি, লজ্জায় তোমাদের মাথা কাটা যাচ্ছে।”

‘আছে কি নেই সেটা তোমার ভাবনা। থাকলে ভালো হয়, এটাই সত্যি। তুমি একটা সামান্য মেয়েমানুষ, কিন্তু জুয়ার দান দেবার জন্যে কোমর বেঁধে লেগেছো। মানুষের সংসারে বাস করা উচিত, না ভাগাড়ে?’

‘খাতায় নাম লিখিয়েছি, এই বলতে চাও তো ?’

‘তুমি চাও না, সত্যি ক’রে বলোতো, তুমি চাও না আমি তোমার ভিতর যুঁইফুল ফোটাই?’

খোকার কথা শেষ না হতেই প্রচণ্ড একটা থাপ্পড় পড়লো তার গালে। বিছানার উপর ট’লে পড়লো খোকা। চোখে আঁচল চেপে ছুটে বেরিয়ে যেতে দেখলো সে নীলাভাবীকে!

এই ভালো,–গালে হাত বুলিয়ে আরাম পেল খোকা!

খুব ভালো হ’লো, এই চড়ের কথা জীবনভর যেন আমার মনে থাকে, মনে রাখবে তো খোকা? ভাই আমার, মনে রেখো!”

ভালোই লিখেছিলো বেলী। বেলী লিখেছিলো, তোমাকে তো পারেনি, তাই তোমার একলা বিছানাটাকে তছনছ ক’রে দিলো বেলী। একদিন এই গালে নীলাভাবীর ঠোঁটজোড়া তার সুখশয্যা রচনা ক’রে বিশ্রাম নিয়েছিলো; আমাকে পারেনি, তাই তছনছ ক’রে দিয়েছে আমার গাল।

ভালোই লিখেছিলো বেলী। বেলী লিখেছিলো, কেন লেখো, কেনই বা ধ্বংস করো; নীলাভাবীকে উস্কে দিয়েছিলাম আমিই, আবার আমিই তাতে পানি ঢেলে দিয়েছি।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024