বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন

জীবন আমার বোন (পর্ব-১০৮)

  • Update Time : শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২.০০ পিএম

মাহমুদুল হককে বাদ দিয়ে বাংলা উপন্যাসকে ভাবা ভুল হবে। বাংলাদেশে কেন মাহমুদুল হক বহু পঠিত নয় বা তাঁকে নিয়ে কম আলোচনা হয় এ সত্যিই এক প্রশ্ন। 

মাহমুদুল হকের সাহিত্য নিসন্দেহে স্থান নিয়েছে চিরায়ত সাহিত্যের সারিতে। 

তার উপন্যাস জীবন আমার বোন শুধু সময়ের চিত্র নয়, ইতিহাসকে গল্পের মধ্যে দিয়ে আনা নয় সেখানে রয়ে গেছে আরো অনেক কিছু। 

তরুণ প্রজম্মের পাঠকের কাজে তাই তুলে দেয়া হলো মাহমুদুল হকের এই অনবদ্য উপন্যাস জীবন আমার বোন। আর আগের প্রজম্ম নিশ্চয়ই নতুন করে আরেকবার গ্রহন করুক এক অমৃত সাহিত্য। – সম্পাদক

মাহমুদুল হক

খোকার দৃষ্টি এড়ায় না, খুব ঠাণ্ডা মাথায় বোড়ের জাল বিস্তার ক’রে অসাধারণ নিপুণতায় আক্রমণের পরিকল্পনা ফেঁদে চলেছে ভদ্রলোক। খোকাও শক্ত দেয়াল তুলে দিলো এক এক ক’রে। রাজাকে দুর্গের অভ্যন্তরে সুরক্ষিত রেখে শত্রুপুরীতে ঘা দেবার জন্যে হাতির রাস্তা পরিষ্কার ক’রে ফেললো। প্রথমে সংঘর্ষটাকে কেন্দ্রস্থলে সীমাবদ্ধ রাখার উদ্যোগ নিলেও অজ্ঞাত কোনো কারণে তা বাতিল ক’রে একপাশ থেকে একটা বোড়ে ঠেলে দিলো রাজীব ভাই খোকার হাতির পথে, খোকা মনে মনে হাসলো, সে জানে বোড়েটা বিষাক্ত নীলাভাবীর চেয়েও। সে লোভ সংবরণ করলে। এবারে একটা কালো ঘোড়া সামনে দিলো; বিধ্বংসী টোপ, খোকা লোভ সংবরণ করলে এবারও। সে লক্ষ্য করে, এই টোপ না গেলার ফলে রাজীব ভাইয়ের সমস্ত খুঁটির অবস্থান ঢিলে হ’য়ে পড়েছে। ইচ্ছেমতো খোকা এখন রাজাকে ন্যাংটো ক’রে নাচাতে পারে, কান ধ’রে টেনে আনতে পারে। না, উচিত হবে না, খোকা মত বদলে ফেললে। উচিত হবে না রাজীব ভাইকে হারানো। যেমন ক’রেই হোক জিতিয়ে দিতে হবে ভদ্রলোককে। যথেষ্ট মার খাচ্ছে বেচারা ভিতরে ভিতরে, খুব করুণ মনে হ’লো খোকার। শেষ পর্যন্ত এ খেলায় সে ইচ্ছে ক’রেই জিতিয়ে দিলো রাজীব ভাইকে।

‘এটা শেষ গেম। তুমি কিন্তু তেমন মনোযোগ দিয়ে খেলছো না। এ গেমটা তোমার ছিলো!’

জেতার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই খোকার। চোখে ধুলো দেবার জন্যে কিছুক্ষণ সে আস্ফালন করলো। বিচ্ছিন্নভাবে এধারে-ওধারে ব্যর্থ আক্রমণই চালালো; জোরালো পরিকল্পনা না থাকায় তার সবক’টি আক্রমণই অতি সহজে প্রতিহত ক’রে ধীরে ধীরে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে রাজীব ভাই। অব্যাহত চাপের মুখে ক্রমাগত পিছু হটতে থাকে খোকা।

ঠিক এই সময় নিঃশব্দে আলো নিভে গেল। চট ক’রে জানালার পাশে স’রে এলো খোকা। ইলেকট্রিসিটি ফেল করেছে, গোটা শহরেই নেমেছে প্রেতায়িত অন্ধকার।

‘কি ব্যাপার?’ কান পাতার চেষ্টা ক’রে রাজীব ভাই বললে, ‘শ্লোগান শুনতে পাচ্ছো?’

একদল তরুণ হুটোপুটি ক’রে ছুটতে ছুটতে রাজীব ভাইদের পাশের বাড়িতে ঢোকে।

*কি ব্যাপার?” প্রতিবেশীদের একজনকে ডেকে জিগ্যেশ করালে রাজীব ভাই। ‘ট্রাক কি টাক আর্মি নামছে রাস্তায়।’

‘কি সর্বনাশ।’ খোকা ভেঙে প’ড়ে বললে, ‘এখন উপায়। ঘরে ফিরবো কি ক’রে?’

‘ব্যস্ত হ’য়ো না, আগে ব্যাপারটা বুঝতে দাও–

সামনের রাস্তায় বেরিয়ে একজন তরুণের মুখ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সম্ভবমতো যাবতীয় পরিস্থিতির কথা জেনে নিতে থাকে রাজীব ভাই। খোকা মরিয়া হ’য়ে বললে, ‘যেতে আমাকে হবেই, যে ক’রেই –‘

হোক, ঘরে রঞ্জু একা ‘অসম্ভব!’ রাজীব ভাই খোকার একটা হাত ধ’রে বললে, ‘যাবে কি ক’রে? খুব ভুল হ’য়ে গিয়েছে, আমার উচিত হয়নি তোমাকে এভাবে ধ’রে রাখা। এখন সমস্ত রাস্তাঘাট বন্ধ। রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড। চারদিকে খণ্ড যুদ্ধ শুরু হ’য়ে গিয়েছে। ওরা বলছে সৈন্যরা সমস্ত ছাত্রাবাস আর পুলিশ লাইন ট্যাঙ্ক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে।’

‘কিন্তু রঞ্জ–‘

অচৈতন্যপ্রায় খোকা থপ ক’রে ব’সে পড়ে মেঝের ওপর, চোখে অন্ধকার দেখে সে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024