বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন

ব্রিটিশ রাজত্বে সুন্দরবন (পর্ব-১৬)

  • Update Time : রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪.০৫ পিএম

শশাঙ্ক মণ্ডল

দ্বিতীয় অধ্যায়

উনিশ শতকের ৪র্থ দশকে একজন নীলকর সাহেব ভৈরব নদীতে একটা বাঁধ দিলেন যার ফলে উপরের অংশ মজে গেল এবং পরবর্তীকালে দক্ষিণঅংশে তার প্রভাব পড়ল। ১৮৭২ খ্রীষ্টাব্দে যশোর খুলনার বিশাল ম্যালেরিয়া মহামারীর কারণ খুঁজতে গিয়ে ডঃ জ্যাকসন ভৈরবের অপমৃত্যুকে দায়ী করেছেন। ১৮৬২ খ্রীষ্টাব্দে লোনার্ড সাহেবের নেতৃত্বে শিবসার সাথে কপোতাক্ষ- এর মধ্যে সংযোগ সৃষ্টির জন্য খাল কাটা হল এবং নৌপরিবহণের ক্ষেত্রে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটল কিন্তু তার পরিণতিতে কপোতাক্ষের উপরের অংশে বিকৃতি দেখা দিল, এধরনের অসংখ্য জলপথ ব্রিটিশ যুগে নিম্নবঙ্গের সুন্দরবন এলাকায় মজা গাঙে পরিণত হয়েছে।

মানুষের কৃত্রিম হস্তক্ষেপ নদীরক্ষেত্রে কি সাংঘাতিক বিকৃতি ঘটাতে পারে এগুলি তার নিদর্শন। নদীর স্বাভাবিক গতিকে ক্ষুন্ন করে খাল কাটলে, নদীতে বাঁধ দিলে প্রকৃতির অভিশাপ বিভিন্নভাবে মানুষের ওপর নেমে আসে, নদীমাতৃক সুন্দরবনের মানুষ ব্রিটিশ রাজত্বে দীর্ঘকাল ধরে সেই যন্ত্রণা সহ্য করেছেন, ‘খাল কেটে কুমির আনা’ প্রবাদটি এই অভিজ্ঞতার জ্বলন্ত সাক্ষী হিসাবে আমাদের সামনে উপস্থিত এবং মানুষের অপরিণামদর্শিতাকে ধিক্কার জানানোর জন্য এই প্রবাদটির উদ্ভব। নদী-বিজ্ঞান একটি অত্যন্ত সূক্ষ্ম বিষয়-সবটা পর্যবেক্ষণ করে সর্বাঙ্গীণ পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে চরম বিকৃতি দেখা দেয়।

স্বাভাবিক জলপথ ব্যাহত হবার ফলে নানা রকম রোগ, জলাভূমি কৃষিক্ষেত্রে বিপর্যয় এবং তার পরিণতিতে জনসংখ্যা হ্রাস প্রভৃতি ঘটনা এই অঞ্চলে লক্ষ করা গেল। নদীর অপমৃত্যুর ফলে বেশ কিছু জায়গায় যে জলাভূমির সৃষ্টি হল তার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে ব্যাপকভাবে ম্যালেরিয়া ও কালাজ্বরের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা গেল। যশোর খুলনা নদীয়া জেলায় ভয়ঙ্কর মহামারীর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তা স্বীকার করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে জেলা গেজেটিয়ারগুলি লক্ষ করলে দেখা যাবে খুলনায় লোকসংখ্যা কমছে কৃষির ক্ষেত্রে অবনতি ঘটছে অপর দিকে বাখরগঞ্জ, ২৪ পরগণার ক্ষেত্রে এই বিকৃতি অপেক্ষাকৃত অনেকটা কম থাকায় লোকসংখ্যা ও কৃষি-উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাচ্ছে। (১০)

গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ অঞ্চলে বিশেষ করে সুন্দরবনের এই এলাকায় দীর্ঘকাল ধরে জলনিষ্কাশনের এক সুষম ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল গঙ্গা পদ্মার শাখানদীগুলিকে কেন্দ্র করে। নদীবিজ্ঞান স্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক নিয়মকে অবলম্বন করে একটি সুক্ষ্ম ব্যবস্থা হিসাবে গড়ে ওঠে। মানুষের কৃত্রিম হস্তক্ষেপে তা বিপর্যস্ত হলে প্রকৃতি মানুষকে সতর্ক করে দেয় বন্যা প্লাবনের মধ্যে দিয়ে। নদী পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সবসময় সামগ্রিক পরিকল্পনা কার্যকরী হয়াবিনের আংশিক পরিকল্পনা সফল হতে পারে না-নদীর ওপরের প্রবাহ এবং নিম্ন প্রবাহ দুদিকে নজর দিয়েই তা করা উচিত।

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024