বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২১ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৫৭)

  • Update Time : বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়

এই, প্রাক্ক- ‘তিক অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করিবার জন্য সম্মুখভাগে পরিখা খনন’ করিয়া মীর কাশেমের সৈন্যগণ নির্ভীকচিত্তে অবস্থান করিতেছিল। তাহারা মনে করিয়া উঠিতে পারে নাই যে, যে স্থানে দেবতাও সহসা প্রবেশ করিতে পারেন না, সেই স্থানে ইংরেজ সৈন্য আনায়াসে প্রবেশ লাভ করিতে সমর্থ হইবে। কিন্তু তাহারা জানিত না যে, ইংরেজচাতুরীর নিকট দৈব শক্তিও প্রতিহত হইয়া যায়। কেবল তাহাদের এই বিশ্বাসের জন্য সতর্কতার অভাবে ইংরেজসৈন্য রাত্রিযোগে নবাবসেনা শিবিরে প্রবেশ করিয়া, গোলাবর্ষণে তাহাদিগকে বিধ্বস্ত করিয়া ফেলে এবং কামানধ্বনিতে উধুয়ার পর্বতশ্রেণী বিকল্পিত করিয়া জাহ্নবীহৃদয়ে মহাতরঙ্গের সৃষ্টি করিয়া তুলে।

মীর কাশেমের স্বাধীনচিত্ততার জন্য বৃদ্ধিতা মুসলমান-রাজলক্ষ্মীর যে অস্ফুট জ্যোতিঃ বাঙ্গলার ভাগ্যাকাশে পুনর্ব্বার ঈষৎ বিকাশিত হইতেছিল, উধুয়ানালায় তাহা চিরদিনের জন্য তমসাচ্ছন্ন হইয়া যায়। ইংরেজও নিঃসন্দিগ্ধভাবে বাঙ্গলার একচ্ছত্রতা লাভ করেন। পলাশী হইতে তাঁহাদের যে শক্তিপ্রবাহ বঙ্গদেশে প্রবাহিত হইতেছিল, মীর কাশেম কর্তৃক সময়ে সময়ে ঈষৎ প্রতিহত হওয়ায়, উধুত্তানালায় তাঁহারা তাহার পথ অবাধ করিয়া তুলিয়াছিলেন। আজিও উধুয়ানালা ও তাহার নিকটস্থ পাহাড়শ্রেণী দণ্ডায়মান থাকিয়া মীর কাশেমের গৌরব-বলি ও ইংরেজ-বিজয়ের ঘোষণা করিয়া সকলের চিত্ত আকর্ষণ করিতেছে।

উধুয়ানালা রাজমহল হইতে প্রায় ৩ ক্রোশ দক্ষিণপূর্ব্ব। রাজমহল এক সময়ে বাঙ্গলার রাজধানীপদে প্রতিষ্ঠিত ছিল। বাঙ্গলার প্রাচীন রাজধানী গৌড় মহামারীতে বিনষ্ট হওয়ায়, কিছুকাল টাঁড়ায় রাজধানী স্থাপিত হয়। পরে ১৪৯২ খৃঃ অব্দে রাজা মানসিংহ রাজমহলে রাজধানী স্থাপন করেন। লোকে পূর্ব্বে রাজমহলকে আগমহল বলিত। মানসিংহই আগমহলকে রাজমহলে পরিণত করেন। ‘মানসিংহ রাজমহলে আপন বাসনিকেতন ও একটি দেরালয় নির্মাণ করিহা তাহা সুরক্ষিত করিতে চেষ্টা পাইয়াছিলেন।

ফতেজঙ্গ নামে বিহারের মুসলমান শাসনকর্তা তৎকালে রাজমহলে থাকিতেন; তিনি সম্রাট আকবরকে লিখিয়া পাঠান যে, মানসিংহ দেবালয় স্থাপন করিয়া কাফের-ধর্মপ্রচার ও বাসনিকেতন সুরক্ষিত করিয়া স্বয়ং স্বাতন্ত্র্য অবলম্বনের চেষ্টা করিতেছেন। মানসিংহ এই সংবাদ অবগত হইয়া, রাজমহলকে আকবরনগরে ও দেবালয়টিকে একটি প্রকাণ্ড জুম্মা মঞ্জেদে পরিণত করিয়া ফেলেন। পরে স্বীয় উপাসনার জন্য একটি ক্ষুদ্রায়তন মন্দির নির্মাণ করেন। কথিত আছে যে, এই জন্য মানসিংহ পরে ফতেজঙ্গের সহিত কৌশলপূর্ব্বক বিবাদ বাধাইয়া, তাঁহার বাটী পর্যন্ত সুড়ঙ্গ খননপূর্ব্বক বারুদের দ্বারা পূর্ণ করিয়া উক্ত বাটী উড়াইয়া দেন।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024