বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২০ পূর্বাহ্ন

ভারতের যে ধাত্রীরা কন্যাশিশু হত্যা বন্ধ করে তাদের বাঁচানো শুরু করেন

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২.৫০ পিএম
মণিকা থাট্টের সঙ্গে ধাত্রী সিরো দেবী।

অমিতাভ পরাশর

ধাত্রী সিরো দেবী কাঁদতে কাঁদতে বুকে জড়িয়ে ধরলেন মণিকা থাট্টেকে। কুড়ির কোঠার শেষের দিকে থাকা মণিকা থাট্টে নিজের জন্মস্থানে এসেছেন। এটা ভারতের সেই শহর যেখানে শত শত শিশুর জন্মের সময় ধাত্রী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সিরো দেবী। তবে এই পুনর্মিলন কিন্তু সহজ ছিল না। সিরো দেবীর চোখের জলের পিছনে রয়েছে এক তীব্র দুঃখের কাহিনী।

মণিকা থাট্টের জন্মের ঠিক আগে সিরো দেবী এবং তার মতো বহু ধাত্রীকে সদ্যজাত কন্যাশিশু হত্যা করার জন্য নিয়মিত চাপ দেওয়া হতো।

কিন্তু প্রমাণ বলছে মণিকা থাট্টেকে বাঁচিয়েছিলেন তারাই।

আমি গত ৩০ বছর ধরে সিরো দেবীর গল্পটা অনুসরণ করছি। ১৯৯৬ সালে বিহার ভ্রমণের সময় সিরো দেবী এবং তার মতো গ্রামীণ অঞ্চলে কাজ করা আরও চারজন ধাত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম।

একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন খুঁজে বের করেছিল যে বিহারের কাটিহার জেলায় সদ্যোজাত কন্যাশিশুদের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত রয়েছেন এই ধাত্রীরা। অভিভাবকদের চাপে পড়ে নবজাতক কন্যাদের হত্যা করতে বাধ্য হয়েছিলেন তারা। ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্য মুখে দিয়ে বা সরাসরি ঘাড় মটকে তারা হত্যা করতেন সদ্যোজাত কন্যাদের।

সেই সময় যাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম আমি, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক ছিলেন হাকিয়া দেবী। জানিয়েছিলেন ১২ থেকে ১৩ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করেছেন তিনি। তারই মতো আরেকজন ধাত্রী ধর্মি দেবী স্বীকার করেছিলেন তিনি ১৫ থেকে ২০ জনকে হত্যা করেছেন।

যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল তা থেকে এটা অনুমান করাটা কঠিন যে ঠিক কতজন সদ্য জন্মানো কন্যাশিশুকে হত্যা করেছিলেন তারা।

১৯৯৫ সালে একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অবশ্য এই বিষয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। ৩০জন ধাত্রীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তৈরি ওই প্রতিবেদনের মূল্যায়ন যদি ঠিক হয় তাহলে, ৩৫ জন ধাত্রী প্রতি বছর বিহারের শুধুমাত্র একটা জেলাতেই এক হাজারেরও বেশি সদ্যোজাত কন্যাকে হত্যা করেছিলেন।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই সময় বিহারে পাঁচ লক্ষেরও বেশি ধাত্রী কর্মরত অবস্থায় ছিলেন এবং সদ্য জন্মানো শিশুসন্তানদের হত্যার ঘটনা কিন্তু শুধু বিহারেই সীমাবদ্ধ ছিল না।

হাকিয়া দেবী জানিয়েছিলেন, সদ্যোজাত কন্যাকে খুন করার নির্দেশ মানা ছাড়া ধাত্রীদের কাছে আর কোনও উপায় থাকত না।

“দরজা বন্ধ করে দিয়ে পরিবারের লোকজন আমাদের পিছনে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকত। বলত-আমাদের চার-পাঁচটা মেয়ে আছে। সমস্ত জমানো পুঁজি এদের জন্য শেষ হয়ে যাবে।”

“চারজন মেয়ের বিয়ের পণ দেওয়ার পর অনাহারে থাকতে হবে আমাদের। এইবার আরেকটা মেয়ে হয়েছে। ওকে মেরে ফেল।”

তিনি বলেন, “কার কাছে অভিযোগ করতাম? আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পুলিশের কাছে গেলে আমরা ফেঁসে যেতাম আর যদি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতাম তাহলে গ্রামবাসীরা আমাদের হুমকি দিত।”

৯০এর দশকে করা তার সাক্ষাৎকার দেখছেন অমিতাভ পরাশর।

গ্রামীণ ভারতে গর্ভবতী মহিলাদের সন্তান প্রসবের সময় ধাত্রীরা যে ভূমিকা পালন করেন সেটা নতুন নয়। এই পরম্পরা বহু পুরানো। এটা দারিদ্র্য এবং জাতপাতের কঠোর বাস্তবতায় ভারাক্রান্ত। যে ধাত্রীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম তারা ভারতীয় সমাজে প্রচলিত তথাকথিত বর্ণ ব্যবস্থার নিম্নবর্ণ থেকে আসা নারী।

গর্ভবতী নারীদের সন্তান প্রসবে সহায়তার কাজ সাধারণত এই ধাত্রীরা শিখতেন তাদের মা-দিদিমাদের কাছ থেকে। তারা এমন একটা জগতে বসবাস করতেন যেখানে ক্ষমতাবান ও তথাকথিত উচ্চবর্ণের পরিবারের আদেশ না মানা একেবারে অকল্পনীয় বিষয় ছিল।

সদ্যোজাত কন্যাশিশুকে মেরে ফেলার জন্য ধাত্রীকে একটা শাড়ি, এক বস্তা শস্য বা কিছু টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হতো। অনেক সময় আবার সেটাও জুটত না। ছেলের জন্মের সময় এক হাজার টাকা দেওয়া হতো তাদের। আর মেয়ের জন্ম হলে তার অর্ধেক টাকা।

হাকিয়া দেবী জানিয়েছিলেন এর মূলে ছিল বিয়েতে মেয়েকে পণ দেওয়ার প্রচলন। তবে ১৯৬১ সালে পণপ্রথা অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু নব্বইয়ের দশকেও পণ দেওয়া-নেওয়ার প্রথা প্রবল ছিল এবং তা আজও অব্যাহত রয়েছে।

বিয়ের পণ অনেক কিছুই হতে পারে, যেমন নগদ টাকা, গয়না, তৈজসপত্র ইত্যাদি। কিন্তু ধনী বা দরিদ্র যেই হোক না কেন, অনেক পরিবারের কাছেই পণ বিয়ের একটা শর্ত।

আর ঠিক এই কারণেই অনেকের কাছে পুত্র সন্তানের জন্ম এখনও উদযাপনের বিষয় কিন্তু কন্যা সন্তানের জন্ম আর্থিক বোঝা।

আমি যে ধাত্রীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, তাদের মধ্যে সিরো দেবী এখনও বেঁচে আছেন। একজন ছেলে আর মেয়ের মধ্যে এই বৈষম্য ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি একটা উদাহরণ দিয়েছিলেন।

খুবই অল্প বয়স থেকে ধাত্রী হিসাবে কাজ করেছেন সিরো দেবী।

তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন, “ছেলের স্থান উঁচুতে আর মেয়েদের নিচে। ছেলে বাবা-মায়ের খেয়াল রাখুক বা না রাখুক ছেলে কিন্তু সবাই চায়।”

ভারতে পুত্র সন্তানকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়, তা জাতীয় স্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়।

সাম্প্রতিকতম ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দেশে প্রতি ১,০০০ পুরুষের বিপরীতে ৯৪৩ জন নারী।

এই অনুপাত ১৯৯১ সালের আদমশুমারির চেয়ে ভালো ছিল। সেই সময় এই অনুপাত ছিল প্রতি হাজার পুরুষে ৯২৭ জন নারী।

সমাজকর্মী অনিলা কুমারী (বাম থেকে দ্বিতীয়) ১৯৯০ এর দশকে ধাত্রীদের মনোভাব পরিবর্তন করতে সক্ষম হন।

১৯৯৬ সালে যখন এই ধাত্রীদের বয়ানের চিত্রগ্রহণ শেষ করি, ততদিনে একটা নীরব পরিবর্তন শুরু হয়ে গিয়েছে। যে ধাত্রীরা আগে চুপচাপ সদ্য জন্মানো কন্যা সন্তানদের হত্যার আদেশ মেনে আসছিলেন, তারা এর বিরোধিতা করা শুরু করে দেন।

এই পরিবর্তন আনার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন অনিল কুমারী নাম এক নারী যিনি সমাজকর্মী ছিলেন। সেই সময় তিনি কাটিহারের আশেপাশের গ্রামের মহিলাদের সাহায্য করছিলেন। নবজাতক কন্যাদের হত্যার মূলে যে কারণ ছিল তার বিরুদ্ধে কাজ করা শুরু করেন তিনি।

অনিলা কুমারীর পন্থা ছিল সহজ। তিনি ধাত্রীদের জিজ্ঞেস করতেন- “আপনিও কি আপনার মেয়ের সঙ্গে একই আচরণ করবেন?”

তার এই একটা প্রশ্নই বছরের পর বছর ধরে চলে আসা এই অযৌক্তিক বিষয় এবং ‘অস্বীকার করার প্রবণতাকে’ বিদ্ধ করেছিল।

এই ধাত্রীরা আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলেন ‘কমিউনিটি গ্রুপ’ থেকে। এরপর দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই সহিংসতার চক্র একটু একটু করে বাধা পেতে থাকে।

২০০৭ সালে কথা বলার সময় সিরো দেবী আমাকে এই পরিবর্তনটা ব্যাখ্যা করেছিলেন।

সেই সময় তিনি বলেছিলেন, “এখন যদি কেউ আমাকে কেউ কন্যাশিশু হত্যা করতে বলে, আমি তাদের বলি- দেখো, বাচ্চাটাকে আমার কাছে দিয়ে দাও। আমি ওকে আনিলা ম্যাডামের কাছে নিয়ে যাব।”

ওই ধাত্রীরা অন্তত পাঁচজন নবজাতক কন্যাকে উদ্ধার করেছেন এমন পরিবার থেকে, যারা হয় ওই বাচ্চাদের মৃত অথবা পরিত্যক্ত অবস্থায় দেখতে চেয়েছিল।

উদ্ধার করা শিশুদের মধ্যে একজন বাঁচেনি কিন্তু অনিলা কুমারী বাকি চারজন মেয়েকে পাটনার একটা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় পাঠিয়ে দেন। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি তাদের দত্তক দেওয়ার ব্যবস্থা করে।

এই গল্পটি এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু আমি জানতে চেয়েছিলাম, যে সদ্যোজাত কন্যাদের দত্তকের জন্য দেওয়া হয়েছিল তারা কোথায় আছে, কী পরিস্থিতিতে রয়েছে।

পালক পিতার সঙ্গে মণিকা থাট্টে।

অনিলা কুমারীর প্রতিবেদন খুব সাবধানতার সঙ্গে তৈরি এবং সেখানে বিশদ তথ্যও ছিল। কিন্তু দত্তক নেওয়ার পর কন্যাশিশুদের জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু উল্লেখ ছিল না।

পরে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস টিমের সঙ্গে কর্মরত অবস্থায় মেধা শেখর নামে এক নারীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। নব্বইয়ের দশকে বিহারে ভ্রূণ হত্যা নিয়ে গবেষণা করছিলেন তিনি। এটা সেই সময় ছিল যখন ধাত্রীদের দ্বারা বাঁচানো শিশুদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল।

আশ্চর্যজনকভাবে, মেধা শেখর এমন একজন যুবতীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন যাকে তিনি উদ্ধার হওয়া ওই কন্যাশিশুদের মধ্যে একজন বলে মনে করতেন।

অনিলা আমাকে বলেছিলেন যে ধাত্রীদের দ্বারা উদ্ধার করা প্রত্যেক কন্যাশিশুর নামকরণের সময় কোশী নামটা জুড়ে দেওয়া হতো। বিহারের কোশী নদীর প্রতি এভাবেই তিনি শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানো হতো।

মেধা শেখরের মনে আছে, দত্তক নেওয়ার আগে মণিকার নামের সঙ্গে ‘কোশী’ যোগ করা হয়েছিল।

শিশুদের দত্তকের সঙ্গে সম্পর্কিত এজেন্সি আমাদের সেই সংক্রান্ত রেকর্ড দেখতে দেয়নি। তাই তার আসল পরিচয় জানার কোনো উপায় ছিল না।

কিন্তু মণিকা থাট্টের জন্মস্থান পাটনা, তার আনুমানিক জন্মের সময় এবং নামের আগে ‘কোশী’ যুক্ত থাকার বিষয়টি আমাদেরও সেই একই সিদ্ধান্তে পৌঁছে দেয়। এবং সেটা হলো অনিলা ও ধাত্রীদের উদ্ধার করা পাঁচজন শিশুর মধ্যে তিনি সম্ভবত একজন।

২০০০ কিলোমিটার দূরে পুনেতে যখন আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম তখন মণিকা থাট্টে বলেছিলেন তিনি ভাগ্যবান যে এমন একটা পরিবার তাকে দত্তক নিয়েছে যারা তাকে ভালোবাসে।

মণিকার থাট্টের সঙ্গে দেখা করে খুব খুশি ছিলেন অনিলা কুমারী।

তার কথায়, “এটাই আমার কাছে একটা সাধারণ হাসি-খুশি জীবনের সংজ্ঞা এবং আমি সেই জীবন উপভোগ করছি।”

তাকে যে বিহার থেকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল সেই বিষয়টা তিনি জানতেন। কিন্তু এই সংক্রান্ত আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আমরা তাকে দিতে সক্ষম হয়েছিলাম।

চলতি বছরের শুরুতে অনিলা কুমারী এবং সিরো দেবীর সঙ্গে দেখা করার জন্য বিহারের উদ্দেশে যাত্রা করেন মণিকা থাট্টে।

তিনি নিজেকে অনিলা কুমারী এবং সেই ধাত্রীদের কঠোর পরিশ্রমের ফল হিসাবে দেখছিলেন।

মণিকা থাট্টে বলেন, “পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য কেউ যেভাবে প্রস্তুতি নেয়, আমার তেমনটাই মনে হয়েছে। ওরা কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন এবং তার ফল দেখার জন্য খুবই আগ্রহী ছিলেন। আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম।”

বিবিসির চিত্রগ্রহণের সময় যে দুই কন্যাশিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাদের মধ্যে একজন।

মণিকা থাট্টের সঙ্গে দেখা করার পর অনিলা কুমারীর চোখে জল ছিল।

কিন্তু সিরো দেবীর প্রতিক্রিয়া একটু অন্যরকম ছিল। তাকে জড়িয়ে ধরে ফোঁপাচ্ছিলেন তিনি। তারপর হাত দিয়ে তার চুল আঁচড়াতে থাকেন।

সিরো দেবী বলছিলেন, “প্রাণ বাঁচাতে তোমাকে অনাথালয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। এখন আমি শান্তি পেলাম।”

কিন্তু দিন কয়েক পরে সিরো দেবীকে তার সেদিনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এই নিয়ে বিশদে প্রশ্ন করায় বাধা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “যা অতীত তা অতীতেই রয়ে গিয়েছে।”

কিন্তু যেটা অতীতে রয়ে যায়নি সেটি হলো কন্যাশিশুদের বিরুদ্ধে কিছু মানুষের পুষে রাখা কুসংস্কার।

কন্যাশিশু হত্যার খবর এখন তুলনামূলকভাবে বিরল। কিন্তু ১৯৯৪ সালে সরকার ভ্রূণ হত্যা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও লিঙ্গ-ভিত্তিক ভ্রূণ হত্যা দেখা যায়।

উত্তর ভারতের কোনও কোনও অংশে শিশুদের জন্মের সময় গাওয়া লোকগীতি ‘সোহার’ শুনলেই বোঝা যাবে যে জন্মের সময় খুশি শুধুমাত্র ছেলেদের জন্যই সংরক্ষিত ছিল। ২০২৪ সালে দাঁড়িয়েও কোনও গায়ক-গায়িকাদের গানের কথা পরিবর্তন করে মেয়েদের জন্ম উদযাপন করানোটা কঠিন কাজ।

আমরা যখন আমাদের ডকুমেন্টারির শুটিং করছিলাম, তখন কাটিহারে দুইজন নবজাতক শিশুকন্যাকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

ওই বাচ্চা মেয়েদের মধ্যে একজনকে ঝোঁপে এবং অন্যজনকে রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল।

জন্মের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়, অন্যজনকে দত্তকের জন্য পাঠানো হয়।

ওই কন্যাশিশুদের মধ্যে একজনকে দত্তক নিয়েছেন আসামের একজন দম্পতি।

মণিকা থাট্টে বিহার ছাড়ার আগে কাটিহারের স্পেশাল অ্যাডপশন সেন্টারে গিয়েছিলেন।

তিনি জানিয়েছেন কন্যা ভ্রূণ হত্যা কমলেও কন্যা সন্তানকে পরিত্যাগ করার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে, এই উপলব্ধিটা তাকে তাড়া করে বেড়ায়।

“এটা একটা চক্র … আমি কয়েক বছর আগে যেখানে ছিলাম সেখানে এখন আমার মতোই একটা মেয়ে রয়েছে।”

তবে এদের মধ্যে একটা সুখদায়ক মিলও রয়েছে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের এক দম্পতি ওই শিশুকন্যাকে দত্তক নিয়েছেন। তারা তার নাম রেখেছেন এধা, যার অর্থ সুখ।

“আমরা ওর ছবি দেখি আর স্থির করে ফেলি যে একজন শিশু যাকে একবার পরিত্যক্ত করা হয়েছে তাকে যেন দ্বিতীয়বার পরিত্যাগ না করা হয়,” বলেছিলেন তার পালক বাবা গৌরব। ভারতীয় বিমান বাহিনীর একজন কর্মকর্তা তিনি।

কয়েক সপ্তাহ অন্তর অন্তর গৌরব আমাকে এ ধার কীর্তিকলাপের একটা করে ভিডিও পাঠায়। মাঝে মাঝে সেগুলো মণিকার সঙ্গে শেয়ার করি।

এই স্টোরির জন্য অতিবাহিত ৩০ বছরের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, এটা কখনোই শুধুমাত্র অতীত ছিল না। বিষয়টা ছিল অস্বস্তিকর এক সত্যের মুখোমুখি হওয়ার। অতীতকে কখনওই পূর্বাবস্থায় ফেরানো যায় না, কিন্তু তাকে রূপান্তরিত করা যায়।

আর সেই রূপান্তরের মধ্যেই রয়েছে আশার আলো।

বিবিসি আই ইনভেস্টিগেশন

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024