শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ অপরাহ্ন

চারুলতার দূরবীন

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬.০১ পিএম

রবীন্দ্রনাথের অনেক পরের প্রজম্ম সত্যজিত রায়। কবির জম্মের ছিয়ানব্বই বছর পরে তার গল্প “নষ্টনীড়ের” নাম পাল্টে “চারুলতা” নামে ছায়াছবিটি তৈরি করেন সত্যজিত।

এই নাম পরিবর্তন ছিলো স্বাভাবিক। কারণ, রবীন্দ্রনাথের প্রজম্মে চারু ও অমলের সম্পর্ককে হয়তো নষ্ট বলেই মনে হতো। কিন্তু সত্যজিতের প্রজম্মে এসে মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা ও অনান্য রিলেশন গুলো সম্পর্কে মানুষ অনেক বেশি বাস্তব ও বিজ্ঞান নির্ভর ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে গেছে। তাই সত্যজিত সহজ ভাবে দেখতে পেয়েছেন, এই গল্পের মূল চরিত্র চারুলতা। সেখানে মানুষের জীবনে যা ঘটে,  যা যা ঘটতে পারে  – তেমনি কখনও সরল রেখায় আবার কখনও আঁকাবাঁকা গতিতে এগিয়ে চলেছে।

এই সত্যের ওপর দাঁড়িয়ে সত্যজিত হয়তো বর্জন করেছেণ নষ্টনীড় নামটি।

তবে শুধু নাম পরিবর্তন নয় গল্পের সময়কাল থেকে শুরু করে অনেক কিছু পরিবর্তন করেছেন তিনি।

তাই ছায়াছবিটি আর একটি পরিবার কেন্দ্রিক গল্পের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। পরিবার, দেশ এমনকি আর্ন্তজাতিক বিষয়কে ধারণ করেছে ছায়াছবিটি।

 সত্যজিত এই ছায়াছবিতে খুব বড় এক ইতিহাস পুরুষকে এত সংক্ষেপে অথচ এত ব্যাপক ও পরিস্কারভাবে উপস্থিত করেছেন- যা নিয়ে যে কেউ বেশ কয়েকটি নিবন্ধ লিখতে পারবেন। এবং গত প্রায় ৫৫ বছরে অনেকেই কম বেশি বিষয়টি ছুঁয়ে গেছেন।

এমনকি এই গল্পের অন্যতম চরিত্র ভূপতির একটি ডায়ালগ “ বিপিন তো বলেছে, লিবেরলদের জন্যে কালীঘাটে গিয়ে পুঁজো দিয়ে আসবে্”।

এই উপমহাদেশের গণতান্ত্রিক ও উদার গণতান্ত্রিকদের চরিত্র বোঝাতে এর থেকে আর বেশি শব্দ প্রয়োগ দরকার হয় বলে মনে হয় না। আর এই একটি ডায়ালগের ওপর ভর করেই যে কোন চিন্তাশীল রাজনৈতিক বিশ্লেষক উপমহাদেশের ডেমোক্রেসি ও লিবেরালিজম এর চরিত্র নিয়ে অনেক বড় বই লিখতে পারবেন।

সত্যজিতের পরে যদি কেউ এ ধরনের কোন ছায়াছবি করতেন তাহলে তিনি হয়তো লিবেরালিজমের পরিবর্তে কমিউনিজম বা সমাজতন্ত্র’র বিজয়ের জন্যে কালীঘাটে পুঁজো দেবার মানত করাতেন। কারণ, কট্টরপন্থী ডেমোক্রেসী হোক, লিবেরল ডেমোক্রেসি হোক আর কমিউনিজম হোক সবখানেই কালীঘাটই মূল নিয়ামক।

তবে এই সবকিছু ছাড়িয়ে যায় এ ছায়াছবিটি’র চারুলতার দূরবীনটি।

চারুলতা যে খুব বন্দী তা নয়। ইচ্ছে করেলেই যে কোন ধরনের গাড়ি চড়ে বা পালকি ডেকে সে বেরিয়ে পড়তে পারে। যেতে পারে তার ইচ্ছে মতো নদীর ধার, অন্য কারো বাড়ি বা সাগর পাড় অবধি। তাই বাইরের জগতকে না দেখতে পাবার কোন কারণ তার নেই। আর বাইরের জগতের জন্যে সে যে হাপিয়ে উঠেছে তাও নয়।

তারপরেও দেখা যাচ্ছে বারান্দা থেকে চারুলতা দূরবীন দিয়ে রাস্তা এবং বিকেলের ঝড়কেও দেখছে। দূরবীনের লেন্সে ছবিগুলো অনেক বড় হচ্ছে পর্দায় ও চোখের সামনে। এমনকি বাগানে বসেও সে তার নিজের বারান্দাকেও দেখছে দূরবীন দিয়ে। এখানেই শেষ নয়, তার প্রিয় ঠাকুরপো অর্থাৎ অমলের মূখকেও সে দেখছে দূরবীনের লেন্সের মধ্য দিয়ে।

বাস্তবে এই ছায়াছবিতে তাই এক অপার রহস্য রেখে যান সত্যজিত দূরবীন তুলে দিয়ে চারুলতার হাতে। প্রশ্ন রেখে যান, আসলে কি এ পৃথিবীতে বাড়তি লেন্সছাড়া কোন কিছুরই প্রকৃত রূপ দেখা যায়না?

কালান্তর 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024