বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ অপরাহ্ন

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-১০)

  • Update Time : বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫.৫৩ পিএম

ড. সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়

ইতজামনা

মায়া দেবদেবীর মধ্যে ইতজামনা হল হুনাব কুর ছেলে।মায়া দেবদেবীর প্রধান বলা হয় এই ইতজামনাকে। ইতজামনাকে সাধারণভাবে বৃদ্ধ এবং তোবড়ানো গাল হিসেবে দেখান হয়েছে। এই দেবতাকে দুটো পরিচয়ে ভাবা হয়। প্রথমটি হল সাধারণভাবে তার মাথার বৈশিষ্ট্যকে বড় করে দেখা হয়।

এছাড়া অন্য একটি পরিচয় হল আহাউ (Ahau)। দিন-আহাউ-এর অর্থ হল পিতার অভিভাবকত্ব (Patriarch)। ইনজামনার দ্বিতীয় নামটি হল তার দেবমন্দিরের প্রধান-এর পরিচয়জ্ঞাপক। এই দেবতাকে স্বর্গের রাজা বা প্রধান বলা হয় এবং এর সঙ্গে তার অন্য কৃতিত্বের পালক হল তিনি দিন ও রাতের মহারাজ।

এই দ্বিতীয় পরিচয়ের সূত্র থেকে আমরা জানতে পারি রাত-এর রাজা হওয়ার জন্য তার সূর্যের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। সূর্যের চোখ-এর মধ্যমণি ছিলেন এই ইনজামনা। এক্ষেত্রে আমরা ইনজামনার পরিচয়-এর সঙ্গে হিন্দুধর্মের মিল খুঁজে পাই। হিন্দুশাস্ত্রে ব্রহ্মার স্থান খুব উঁচুতে। পৃথিবীকে তৈরি করার দায় ও কৃতিত্ব হল এই ব্রহ্মার। এক্ষেত্রে ইনজামনা এবং ব্রহ্মার মধ্যে অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।

এরকম লোকায়ত কাহিনী প্রচলিত যে ইনজামনাই প্রথমে ইউকাতান অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানের নামকরণ করেন। এবং দেবতাদের কর্তব্য এবং মর্যাদার শ্রেণিভাগ করেন। এ প্রসঙ্গে একথা উল্লেখ করা যায় যে পুরোহিত তন্ত্র এবং দেওয়ালের লেখচিত্র প্রধানত মায়া সভ্যতার ক্লাসিক পর্বে প্রথম উন্নতি করেছিল।

চাক (Chac) বৃষ্টির দেবতা: মায়াদের লৌকিক দেবদেবীর মধ্যে চাক (Chac)-এর বিষয়টি খুব লক্ষ্যণীয়। এই দেবতার মাথা হাতির মাথার মত। এবং সেই মাথা থেকে একটি লম্বা শুঁড় বেরিয়েছে। মায়াদের ধর্মীয় বিশ্বাস, মন্দির, পূজা-অর্চনায় চাক-এর স্থান খুবই উঁচুতে। এবং চাক-এর নাম যেখানে ধর্মীয় পুস্তকে ২১৮ বার উল্লেখ করা হয়েছে আর সেখানে ইতজাম-এর নাম আমরা পেয়েছি মোট ১০৩ বার।

চাক-এর মোট চারটি রূপ দেখতে পাওয়া যায়। এবং প্রত্যেকটির সঙ্গে একটি রং নির্দিষ্ট করা আছে। এগুলি হল লাল, সাদা, কালো এবং হলুদ। ভারতবর্ষে চাক (Chac)-এর সমগোত্রীয় দেবতা হলেন গণেশ। এই পূর্বদিকের গণেশের রং লাল। লাল হওয়ার কারণ মেক্সিকোর পূর্বদিকে হল ভারতবর্ষ।

গণেশের সঙ্গে শুভকাজ, গৃহপ্রবেশ-এর সম্পর্ক আছে, এবং উল্লেখ্য যে মেক্সিকোতে চাক-এর পরেই আমাদের দেশে গণেশের প্রচলন ঘটে। এবং লক্ষ্যণীয় যে এরপর থেকেই ষষ্ঠ শতাব্দীতে গণেশ দেবতাদের মর্যাদার শ্রেণিবিন্যাসে খুব পরিচিত এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

এই জনপ্রিয়তার মুলে একটি প্রধান কারণ গণেশের চেহারা, তার বুদ্ধি এবং একটি লোকপ্রিয় ভাবমূর্তি। পরবর্তীকালে এই গণেশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল একটি বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায় গণপত্য। গণেশের সঙ্গে হিন্দুধর্ম আচারে গৃহপ্রবেশের একটি সুসম্পর্ক আছে।

মায়া জনগোষ্ঠীর চাক দেবতার মধ্যেও এই গৃহপ্রবেশের একটি অনুষঙ্গ লক্ষ্য করা যায়। মেক্সিকোর চেম অঞ্চলে একটি উৎসবের নাম হল ওকনা (Ocna)। এই ওকনা শব্দটির মায়াভাষায় অর্থ হল ঘরে প্রবেশ করা। এই উৎসব চলার সময় এই অঞ্চলের মন্দিরগুলিকে নতুন করে সাজানো হয়।

(চলবে)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-৯)

মায়া সভ্যতার ইতিহাস ( পর্ব-৯)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024