মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
প্রকৃতিবিদের কাহিনী (কাহিনী-৩৭) শ্রীলঙ্কার নতুন রাষ্ট্রপতির প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে অর্থনীতি সঠিক পথে আনা ক্ষমতার ভারসাম্যর মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীকে সরাসরি রাষ্ট্রপতির অধীনে রাখা যেতে পারে –সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ- জামান চাঁদাবাজ চক্রের হাত থেকে পরিবহন সেক্টর বাঁচাতে হবে – গোলাম মোহাম্মদ কাদের অধীরের বদলে কেন শুভঙ্করের হাতে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস? মায়া সভ্যতার ইতিহাস (পর্ব-১৬) জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি গাজরের  যাদুকরী রেসিপিগুলো: নতুন নতুন স্বাদ ডাকাতি প্রতিরোধ অভিযানে তরুণ সেনা কর্মকর্তা নিহত দিশানায়েকের অভূতপূর্ব উত্থান: বিক্ষোভ থেকে প্রেসিডেন্ট

অধীরের বদলে কেন শুভঙ্করের হাতে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস?

  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৬.০৭ পিএম
অধীর চৌধুরীকে সরিয়ে শুভঙ্কর সরকারকে পশ্চিমবঙ্গের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি করা হয়েছে।

পায়েল সামন্ত ,কলকাতা

অধীর চৌধুরীর জায়গায় প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি শুভঙ্কর সরকার। কেন অধীরের বদলে দায়িত্ব রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতাকে?

লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল। তার উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে অনেক কথা শোনা যাচ্ছিল। অবশেষে সেই জল্পনায় ইতি টেনে দিয়েছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।

অধীরের বদলে শুভঙ্কর

বহরমপুরের টানা পাঁচবারের সাংসদ অধীরের বিজয়রথ এবারের লোকসভা নির্বাচনে থেমে যায়। তার আসনে জেতেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী ইউসুফ পাঠান। বামেদের সঙ্গে জোট করে মাত্র একটি আসনে জয় পায় কংগ্রেস। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীরের প্রদেশ সভাপতি পদের উপরও প্রশ্নচিহ্ন পড়ে যায়।

মাস চারেক ধরে চলা জল্পনার অবসান করে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা কে সি বেণুগোপাল প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে জানান, এআইসিসি নেতা শুভঙ্কর সরকারকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে বসানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে তাকে। অধীর চৌধুরীকে তার ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।

গত ৩০ অগস্ট এআইসিসির সম্পাদক নিয়োগ করা হয় শুভঙ্করকে। একই সঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং মেঘালয়ের বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই আরো গুরুদায়িত্ব দেয়া হলো এই কংগ্রেস কর্মীকে।

ছাত্র রাজনীতিতে শুরু 

প্রথমে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন নয়া প্রদেশ সভাপতি। ১৯৯৩ সালে ন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়ার জাতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এরপর বছর আটেক পশ্চিমবঙ্গে ছাত্র পরিষদের সভাপতি ছিলেন।

পরবর্তীকালে মূলত কেন্দ্রীয় স্তরে রাজনীতিতে দেখা গিয়েছে তাকে। শুভঙ্কর সরকার ক্রমে রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। জাতীয় স্তরে কংগ্রেসের একাধিক দায়িত্ব পালন করেছেন শুভঙ্কর। এআইসিসি নেতার পদে ছিলেন দীর্ঘদিন।

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তাকে তেমন সক্রিয় দেখা যায়নি বিগত বছরগুলিতে। তবে বার দুয়েক নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুর কেন্দ্রে লড়েন তিনি। বরাহনগরের বাসিন্দা শুভঙ্কর ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করেন নোয়াপাড়ায়। দুবারই কংগ্রেসের টিকিটে হেরে যান তিনি।

কট্টর থেকে নরম?

লোকসভা নির্বাচনের পর জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপট অনেকটাই বদলে গিয়েছে। বিজেপি শরিকদের উপর নির্ভরশীল হয়ে সরকার চালাচ্ছে কেন্দ্রে। বিপরীতে কংগ্রেস ও ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতা বাড়িয়েছে। শক্তির বিচারে সমাজবাদী পার্টির মতো তৃণমূল কংগ্রেস এই বিরোধী জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক।

কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব জাতীয় স্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলকে সঙ্গে রাখতে আগ্রহী। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের অবস্থান ছিল একেবারে বিপরীত। অধীর ও তার অনুগামীরা মমতার কট্টর সমালোচক। এর ফলে এই রাজ্যে ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে বোঝাপড়ার সম্ভাবনাই তৈরি হয়নি। অধীরপন্থীদের ইচ্ছায় গত লোকসভা নির্বাচনে বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে কেন্দ্রীয় কংগ্রেস।

নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেসের ভরাডুবি, তার উপর অধীরের পরাজয় পরিস্থিতি বদলে দেয়। অপরদিকে শুভঙ্কর সরকার নরমপন্থী নেতা হিসেবেই পরিচিত। তৃণমূলের সঙ্গে প্রবল দ্বন্দ্বের সম্পর্ক জিইয়ে রাখার পক্ষে নয় প্রদেশের যে অংশ, তার অন্যতম মুখ শুভঙ্কর।

অধীরের জায়গায় শুভঙ্করকে দায়িত্ব দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক মসৃণ করতে চাইলেন রাহুল গান্ধীরা, এমনই মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের।

সাংবাদিক প্রসূন আচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, “নিয়ম হচ্ছে, সর্বভারতীয় সভাপতি পরিবর্তন হলে নতুন করে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি গঠিত হবে। সেই হিসেবে মল্লিকার্জুন খাড়গে সভাপতি হওয়ার পর অধীর চৌধুরী অস্থায়ী ছিলেন। তাকে আবার এই পদে স্থায়ী রাখা যেত, কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্ব সেটা চাননি।”

কিন্তু কেন চাননি? প্রসূন বলেন, “ইন্ডিয়া জোটে থেকে মমতা যেভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছেন, তা কংগ্রেস সমর্থন করছে। কিন্তু অধীর চৌধুরীর তীব্র মমতা বিরোধিতা শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে অস্বস্তির কারণ। কিন্তু শুভঙ্কর সরকারের অধীর চৌধুরীর মতো জেলাভিত্তিক সংগঠন নেই। ফলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যেভাবে বলবেন, শুভঙ্কর পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসকে সেভাবেই চালাবেন।”

কার লাভ বা ক্ষতি?

প্রদেশ কংগ্রেসের একটা বড় অংশ মনে করে, রাজ্যের পরিস্থিতি অনুযায়ী এখানে দলের চলার পথ ঠিক করতে হবে।

সাবেক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, “বাংলার বাস্তব পরিস্থিতি অস্বীকার করে কোনো রাজনৈতিক অবস্থান নেয়া সম্ভব নয়। তবে এমন নয় যে আমরা কোনো দলের সঙ্গে শত্রুতা তৈরি করব। মানুষের চাহিদা অনুযায়ী দলকে পরিচালিত হতে হবে। বাংলার শাসকরা দুর্নীতির পাঁকে ডুবে আছে, সেখান থেকে বাংলাকে উদ্ধার করতে হবে। এটা মাথায় রেখে এগোতে হবে। তবে এসবের আগে বড় কাজ, ছিন্নবিচ্ছিন্ন সংগঠনকে সুসংহত করে সংগ্রামমুখি দলে পরিণত করা।”

কংগ্রেসের কাছে কি রাজ্য স্তরেও বিজেপি বিরোধিতাই মুখ্য হয়ে উঠছে?

প্রসূন বলেন, “কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রধান শত্রু বিজেপি। কিন্তু এখানে অধীর চৌধুরীর কাছে প্রধান শত্রু মমতা। এই দ্বন্দ্ব থেকে বেরোতে গেলে তো প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতিকে বেশি মমতা বিরোধী না হয়ে বিজেপি বিরোধী হতে হবে। সেই দিক থেকে শুভঙ্কর সরকার কেন্দ্রের পছন্দের।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষক, অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, “যখন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে একটানা নাগরিক আন্দোলন চলছে, তখন কংগ্রেসের নতুন প্রদেশ সভাপতি দায়িত্ব নিলেন। এখন শাসকদলের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হচ্ছে, এই সময় তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সমীকরণ বদলে গেলে তাতে কংগ্রেসের কতটা লাভ হবে, সে ব্যাপারে আমি সন্দিহান। তেমন হলে তৃণমূল আধিপত্য রাখবে কংগ্রেসের উপর। আর বাম ও কংগ্রেসের বোঝাপড়া ভেস্তে গেলে বরং বামেদের প্রতি সমর্থন বাড়তে পারে বলে আমার ধারণা।

ডিডাব্লিউ ডটকম

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024