শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়


                                                                  কিরীটেশ্বরী।
বর্তমান মুর্শিদাবাদ নগরের প্রান্তদেশ বিধৌত করিয়া যে স্থলে প্রসন্নসলিলা ভাগীরথী প্রবাহিতা হইতেছেন, যথায় নগরস্থ সহস্রহার সৌধাদির প্রতিবিম্ব নদীবক্ষে পতিত হইয়া রমণীয়, শোভা সংবন্ধন করিতেছে, তাহারই অপর পারে ডাহাপাড়া-নামক একটি পল্লাগ্রাম অবস্থিত। ডাহাপাড়। ভাগীরথীর পশ্চিম-তীরস্থ। এককালে এই ডাহাপাড়া মুর্শিদাবাদ-রাজধানীর অন্তর্গত হইয়া, বহুসংখ্যক অট্টালিকার বিভূষিত ছিল। তৎকালে মুর্শিদাবাদ ভাগীরথীর উভয় তীরে অব- স্থিতি করিয়া, আপনার গৌরব ও সমৃদ্ধি সমগ্র জগতে ঘোষণা করিত। উক্ত ডাহাপাড়া হইতে প্রায় সার্দ্ধ ক্রোশ পশ্চিমে একটি ক্ষুদ্র পল্লী দৃষ্ট হয়; তাহার নাম কিরাটকণা। কিরীটকণা এক্ষণে জঙ্গল-পরিপূর্ণ। কিন্তু ইহার এমন একটি মোহিনী শক্তি আছে যে, তথায় উপস্থিত হইবামাত্র মনঃপ্রাণ শান্তভাবে পরিপূর্ণ হইয়া যায়, কি এক অনির্বচনীয় রসে অন্তরাত্মা আপ্লুত হইয়া উঠে! স্থানটি জঙ্গলময় হইয়াও যেন শান্তি- নিকেতন; শান্তিদেবী যেন ইহাতে চির আবাস-স্থান স্থাপন করিয়াছেন। মুর্শিদাবাদের মধ্যে এরূপ বৈরাগ্যোদ্দীপক স্থান অতিবিরল। এই স্থানে কৃতিপয় প্রাচীন মন্দির জীর্ণাবস্থায় থাকিয়া, মুর্শিদাবাদের পূর্ব্ব গৌরবের কথা স্মৃতিপথে জাগাইয়া দেয়। কিরীটকণা মুর্শিদাবাদের মধ্যে একটি প্রাচীন স্থান। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, দক্ষযজ্ঞে বিশ্বজননী পতিপ্রাণা সতী প্রাণত্যাগ করিলে, ভগবান্ ‘বিষ্ণু তাঁহার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছিন্ন- বিচ্ছিন্ন করিয়া সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডে নিক্ষেপ করিয়াছিলেন, সেই সময়ে দেবীর কিরীটের একটি কণ! এই স্থলে পতিত হয়; তজ্জন্য ইহা উপপীঠ মধ্যে গণ্য এবং ইহার অধিষ্ঠাত্রী কিরীটেশ্বরী বলিয়া এতদঞ্চলে কীর্ত্তিতা।
কিরীটেশ্বরী যেন সমস্ত মুর্শিদাবাদেরই অধিষ্ঠাত্রীস্বরূপা ছিলেন। যত দিন তাঁহার গৌরব ছিল, তত দিনই মুর্শিদাবাদের শ্রীবৃদ্ধি, অথবা মুর্শিদা-বাদের শ্রবৃদ্ধি-লয়ের সঙ্গে সঙ্গেই তিনিও এতদঞ্চল হইতে অন্তহিতা হইতে বসিয়াছেন। কিরীটকণা প্রথমাবস্থায় ঘোর জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল; কেবল একটিমাত্র সামান্য মন্দির ইহাতে ভগ্নাবস্থায় দৃষ্ট হইত 5; উহা কতদিনের নির্মিত, তাহা কাহারও জ্ঞানগোচর ছিল না। উপপীঠ ও জঙ্গলময় বলিয়া মধ্যে মধ্যে দুই একজন সন্ন্যাসী ব্রহ্মচারী তথার আগমন করিতেন; পরে ক্রমে ক্রমে মায়ের পূজার বন্দোবস্ত হয়। মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের সমসাময়িক মঙ্গলবৈষ্ণব এবং তাহার পূর্ব্বপুরুষগণ কিরীটে- শ্বরীর সেবক ছিলেন বলিয়া শ্রুত হওয়া খায়। কিন্তু যৎকালে বঙ্গাধিকারিগণ বাঙ্গলা, বিহার ও উড়িষ্যা প্রদেশত্রয়ের প্রধান কাননগো পদে প্রতিষ্ঠিত হন, সেই সময় হইতে কিরীটেশ্বরীর মহিমা চতুদ্দিকে বিস্তৃত হইয়া পড়ে এবং কিরীটকণার প্রাচীন মন্দির সংস্কৃত হইয়া বর্তমান প্রধান মন্দিরগুলিও নিৰ্ম্মিত হয়।
বঙ্গাধিকারিগণের মতে তাঁহাদের আদিপুরুষ ভগবান্ রায়, মোগল- কেশরী দিল্লীশ্বর আকবর শাহকে স্বীয় কার্য্যদক্ষতায় পরিতুষ্ট করিয়া বাঙ্গলা, বিহার ও উড়িষ্যার কাননগো পদ ও”বঙ্গাধিকারী মহাশয়” উপাধি লাভ করেন। কিন্তু ভগবান্ রায় শাহ সুজার সময়ে উক্ত পদে ‘নিযুক্ত হইয়াছিলেন বলিয়া অনুমান হয়। ভগবানের মৃত্যুর পরে তাঁহার কনিষ্ঠ ভ্রাতা বঙ্গবিনোদ রায় কাননগো পদ ও সম্রাটের নিকট হইতে অনেক লাখেরাজ ও দেবোত্তর সম্পত্তি পারিতোষিক-স্বরূপ প্রাপ্ত হন, তাহার মধ্যে কিরীটেশ্বরী “ভবানীথান” নামে লিখিত থাকে। বঙ্গবিনোদের পর ভগবানের পুত্র হরিনারায়ণ স্বীয় পিতার পদ ও সম্পত্তি প্রাপ্ত হইয়া-ছিলেন।
চলিবে………..

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024