এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে দিনমজুর লোকেশ উরাংয়ের অভাবের সংসার।
পুকুর-ঝিল, হাওর-বিলে কুঁচিয়া মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালাতেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিরতিংগা চা বাগানের লোকেশ উরাং।
এক মেয়ে প্রীতি উড়াংকে পাঠিয়েছিলেন রাজধানী ঢাকাতে, গৃহকর্মীর কাজে।
তবে ফিরলেন পরে , তবে লাশ হয়ে।
আক্ষেপের সুরে লোকেশ উরাং বলেন, ৪ সন্তানদের মধ্যে একজন আগেই মারা গেছে। অভাব আর টানাটানির সংসার। সেই অভাব ঘুচাতেই শিশু প্রীতি উরাংকে ঢাকা পাঠিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন এক ছেলে ও এক মেয়ে আছে। আমি দিনমজুর, আমার অভাবে সংসার।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রীতি রাজধানীতে ডেইলি স্টার পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক দম্পতির বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতো। ৬ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় শিশু গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের ৯ তলা থেকে পড়ে রহস্যজনক মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় মিরতিংগা চা বাগানসহ মৌলভীবাজার জেলার সর্বত্র চলছে মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন।
প্রীতির মা নমিতা উরাং বলেন, ‘ঢাকায় মেয়েকে দেওয়ার জন্য আমাদের ১০ হাজার টাকা দিয়েছিল। আমরা টাকা আনি নাই। বলেছিলাম টাকাগুলো থাকুক। মেয়ের বিয়াশাদিতে টাকাগুলো একসঙ্গে লাগাব। এটাই আমার মনের ইচ্ছা ছিল। পরে তো মেয়ে মারা যাওয়ার পর ৫ হাজার টাকা দিয়েছিল।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি বলেন, ‘এই পরিবারটাকে আমি ভালোভাবে জানি। লোকেশ উরাংরা মোট ৪ ভাই। মাত্র এক ভাই চা বাগানের স্থায়ী শ্রমিক। আর ৩ ভাইয়ের সংসার চলে টানাপোড়েনে। এই তিন ভাইয়ের মধ্যে লোকেশের অবস্থা আরও করুন।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কমলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী বলেন, ‘প্রীতির মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রভাবশালীরা সবসময়ই চা বাগানের সহজ-সরল মানুষদের সরলতার সুযোগ নিয়ে থাকেন। আর এই সরলতার সুযোগেই বাবা তার মেয়েকে হারিয়েছেন। প্রীতির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আমরা জানতে চাই।’
বাদী তুলনায় বিবাদী অত্যন্ত প্রভাবশালী। সেজন্য উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ছাড়া এই সত্য উদঘাটন করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করে রাম ভজন কৈরী।
উল্লেখ্য, জেলার কমলগঞ্জ উপজেলা মিরতিংগা চা বাগানে বসবাসকারী প্রীতি উড়াংয়ের বাবা লোকেশ উরাং বাদী হয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় ৩০৪ এ (ক) ধারায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন।
তথ্য: ইউএনবি
Leave a Reply