শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:০৮ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-২)

  • Update Time : শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

শ্রী নিখিলনাথ রায়


হরিনারায়ণের পর তাঁহার পুত্র দর্পনারায়ণ উক্ত কাননগো পদ প্রাপ্ত হইয়া ঢাকায় অবস্থিতি করেন; সেই সময়ে ঢাকা বাঙ্গলার রাজধানী ছিল। দর্পনারায়ণের কার্য্যের শেষভাগে যৎকালে সম্রাট আরঙ্গজেবের পৌত্র আজিম ওখান বাঙ্গলার মসনদে। অধিষ্ঠিত থাকেন, : সেই সময়ে মুর্শিদকুলী খা আরঙ্গজেবের আদেশক্রমে বাঙ্গলার দেওয়ানী পদে নিযুক্ত হইয়া ঢাকায় আগমন করেন। নবাব আজিম ওখানের সহিত দেওয়ান মুর্শিদকুলীর মনোমালিন্ত উপস্থিত হওয়ায়, তিনি ঢাকা পরিত্যাগ করিয়া মুখসুসাবাদ বা মুখসুদাবাদে (পরে মুর্শিদাবাদ) আগমন করিলে, সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ানীসংক্রান্ত যাবতীয় কর্মচারী মুর্শিদাবাদে আসিতে বাধ্য হন; অগত্যা দর্পনারায়ণকেও আসিতে হয়। এই সময়ে জগৎশেঠ- দিগের আদিপুরুষ শেঠ মাণিকচাদও মুর্শিদাবাদে আসিয়াছিলেন। মুর্শিদাবাদের নবাব, জগৎশেঠ ও বঙ্গাধিকারিগণ মুর্শিদাবাদের প্রচীন ও সম্মাননীয় বংশ এবং উক্ত তিন বংশেরই বাঙ্গলার শাসন ও রাজস্ব- সম্বন্ধে একাধিপত্য ছিল। দর্পনারায়ণ মুর্শিদাবাদে আসিয়া ডাহাপাড়ায় স্বীয় আবাস-ভবন নির্মাণ করেন।

এই সময়ে বঙ্গাধিকারিগণ কিরীটে- শরীর নিকট অবস্থিতি করায়, তাঁহার গৌরববৃদ্ধির অনেক চেষ্টা করিতে ১. থাকেন এবং মুর্শিদাবাদ বাঙ্গলার রাজধানী ছিল বলিয়া, কিরীটেশ্বরীর প্রতি বাঙ্গালার সম্ভ্রান্তবংশীয়দিগের দৃষ্টি নিপতিত হয়। দর্পনারায়ণ কিরী- টেশ্বরীর জঙ্গল পরিষ্কার করিয়া গুপ্তমঠ নামে তাহার প্রাচীন মন্দিরটির সংস্কার এবং কিরীটেশ্বরীর বৃহৎ মন্দির, শিব ও ভৈরব মন্দির সমুদায়ের নির্মাণ করিয়াছিলেন। কিরীটেশ্বরীর মন্দিরাভ্যন্তরে কালীঘাটাদির ন্য। কোন স্পষ্ট প্রতিমূর্তি নাই; কেবল একটি উচ্চবেদী ও তাহার পশ্চাতে একখণ্ড বিশাল প্রস্তর ভিত্তির ন্যায় নানাবিধ শিল্পকার্য্যে অলঙ্কত “হইয়া, উচ্চভাবে অবস্থিতি করিতেছে; দেবীর কেবল মুখমাত্র বেদীরউপরে অঙ্কিত।

 

বেদীর নিয়ে বসিবার স্থান ও চতুঃপার্শ্বস্থ গৃহভিত্তির কতক দূর পর্যন্ত কৃষ্ণমর্ম্মর প্রস্তরমণ্ডিত; মন্দিরের সম্মুখে একটি বিস্তৃত বারাণ্ডা আছে। শিবমন্দির মধ্যে কৃষ্ণ প্রস্তরখোদিত শিবলিঙ্গ ও ভৈরব- মন্দিরে কষ্টিপ্রস্তর নির্মিত ভৈরবমূর্তি অবস্থান করিতেছে। এতদ্ভিন্ন আরও দুই একটি মন্দির ইহার নিকট জীর্ণাবস্থায় বিদ্যমান আছে। এই সমস্ত মন্দিরের নিকট দর্পনারায়ণ রায় কালীসাগর নামে একটি বৃহৎ পুষ্করিণী খনন করিয়া দেন। পুষ্করিণীটি যেমন বৃহৎ, সেইরূপ গভীরও ছিল; মন্দিরের নিকট উহা কষ্টিপ্রস্তরনির্ম্মিত সোপানাবলীর দ্বারা অলঙ্কত হয়; এক্ষণে তাহাদেরও ভগ্নাবশেষ দৃষ্ট হইয়া থাকে। পুষ্করিণী শৈবাল ও পঙ্কে পরিপূর্ণ, জলও অপেয়। দর্পনারায়ণ কিরীটে- শ্বরী-মেলার সৃষ্টি করেন।

এই মেলা উপলক্ষে নানা স্থান হইতে যাত্রীর সমাগম হইত। দোকান-পসারিতে পরিপূর্ণ হইয়া, কিরীটকণা অত্যন্ত মৌরবময়ী মূর্তি ধারণ করিত। অদ্যাপি পৌষ মাসের প্রতি মঙ্গলবারে উক্ত মেলা বসিয়া থাকে; কিন্তু এক্ষণে তাহা প্রাণহীন। বর্ষাকালে কিরীটেশ্বরী গমনের পথ কদমে পরিপূর্ণ হওয়ায়, লোকের গমনাগমনের বিলক্ষণ অসুবিধা ঘটিত; সেই অসুবিধানিবারণের জন্য দর্পনারায়ণের পুত্র শিবনারায়ণ পথের সংস্কার ও একটি সেতু নির্মাণ করিয়া দেন; তাহার চিহ্ন অদ্যাপি দৃষ্ট হইয়া থাকে; এক্ষণে তাহা জঙ্গল- পূর্ণ ও বৃক্ষাদির দ্বারা আচ্ছাদিত। শিবনারায়ণ মন্দিরাদিরও সংস্কার করিয়াছিলেন। নবাব সিরাজ উদ্দৌলার রাজত্বকাল হইতে কোম্পানীর সময় পর্যান্ত শিবনারায়ণের পুত্র লক্ষ্মীনারায়ণ কাননগো ছিলেন, তিনি

 

চলিবে…………

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024