মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০৩ অপরাহ্ন

যন্ত্রনার সঙ্গে মেলানোর মতো গানের ভাষা পাচ্ছে কি তরুণ প্রজম্ম?

  • Update Time : শনিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৪, ৫.৫৮ পিএম

বঙ্গভঙ্গ রোধ ও বাঙালির মিলনের জন্যে রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে কোন এক আকস্মিক ঝড়ের মতোই যেন বাউল, কীর্তন , ভাটিয়ালি সহ হাজার বছরের গানের ভাষাগুলো বদলে গেলো। আমি কোথায় গেলে  পাবো তারে, হয়ে গেলো আমার সোনার বাংলা। আমরা একলা নিতাই হয়ে গেলো, একলা চলোরে।

ভাষাগুলোর সঙ্গে সঙ্গে সুরেরও হলো কিছুটা পরিব‍‍র্তন। যা মিশে গেলো মাতৃভূমি আর ওই মাটির সকল সন্তানের সঙ্গে সময়টাকে বুকে ও শরীরে মেখে।

বঙ্গভঙ্গ রোধ হয়েছিলো। কিন্তু বাংলা কেটে ছিড়ে কত যে খন্ড হলো। সে যন্ত্রনাও গেথে যেতে লাগলো গানের ভাষার সঙ্গে।

তবে বড় ঢেউটি এসে লাগলো ধর্মের নামে বাংলার যে অংশ পাকিস্তান হয়েছিলো সেখানে। শুরুতেই সেখানে যে ভাষায় মাঝি নৌকা চালানো গান গায়, চাষী গায় লাঙল চালানো গান আর গাড়োয়ান গায় গরু বা মহিষের গাড়ি চালালোর গান- সেই ভাষার ওপর আঘাত এলো। সে আঘাতে রক্তপাত ছিলো।

সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেলো, সেই মাঝি, কৃষক বা গাড়োয়ানের গলার উদাস সুরের গানের ভাষা। সুর তার কিছুটা বদলে গেলেও শব্দ হয়ে উঠলো সৈনিকের মতো।

এমন কি শহরের শিক্ষিত গীতিকার আব্দুল লতিফের শব্দ নয়, শব্দ বদলে গেলো বাগেরহাটের কৃষক গীতিকারের। গ্রামের মাঠে ও পথে সে গেয়ে উঠলো, ওরে ও বাঙালি, ঢাকা শহর রক্তে রাঙাইলি।

সময় এগিয়ে যেতে লাগলো, সময় বদলে যেতে লাগেলো, গানের ভাষাও বদলে যেতে লাগলো। শেষ অবধি গিয়ে তা ঠেকলো, আমাদের সংগ্রাম চলবেই , জনতার সংগ্রাম চলবেই- নোঙর তোল তোল, সংগ্রামী আজ মহাজনতা, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে।

পাঁচ খন্ডে বিভক্ত বাংলার মোটামুটি বড় আরেকটি যে অংশটি ছিলো, সেখানেও এলো রুদ্র চোখ, সত্তরের দশকে তরুনের বেকারত্ব, সেন্ট্রাল পুলিশের রাজত্ব। ভালো তরুণকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে পুলিশ বাস থেকে। কখনও বা পড়ার টেবিল থেকে বাবা মায়ের সামনে থেকে হাত বেধে নিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের রাজত্ব কমলেও বেকারত্ব, ইদুঁর দৌঁড় এগুলো আর কমে না। গানের কথাও সুর সময়ে সঙ্গে বদলে গেলো। যিনি ঠিক সুর দিয়ে শুধু গান নয় অন্য একটা ইনফরমেশান দেন তখন সুদুর আমেরিকায়, সেই বব ডিলানের সুর সহ তারই মত নাগরিক ও রাষ্ট্রের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ অনেক শিল্পির কথার মতো, বাংলার ওই অংশে বদলে গেলো গানের ভাষা। গানের ভাষা থেকে সে জোর ইনফরমেশান হয়ে উঠলো, রিকসা চালাচ্ছে যে ছেলেটি, ফাঁদ পেতেছে গাছের ছায়া ও রোদের দ্বন্ধ বা চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি সত্য। শুধু সেখানেই যেন শেষ নয়, নারী কণ্ঠের পেলবতার বদলে নারীর কন্ঠে সময়ের দাবী যেন খুঁজছিলো পুরুষের একটু কর্কশতা। সেটাই হতে লাগলো জনপ্রিয়।

আর এই যে বাংলা নোঙর তুলে নতুন ঘাটে এলো, তার ওপর দিয়ে বয়ে চলে গেলো পদ্মা ও মেঘনার অনেক জল। কিন্তু গানের ভাষা, কেমন যেন বার বার ঘুরে ফিরে সেই পল্লীর নরমগান গুলো একটু উচ্চ গলায় এসে সামনে দাঁড়াচ্ছে, নতুন যন্ত্রের সঙ্গে। ভালোবাসার গান তাও সেই পল্লীর সবুজ বনের ভাষা নিয়ে   এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে ইটের বস্তির শহরে।

তরুণরা তাই মুখ গুগছে পশ্চিমা থেকে দক্ষিনপূর্ব এশিয় গানে। না সেখানে তারা সবটুকু পাচ্ছে না। অথচ তরুণের চারপাশে বাতাসে এখন অনেক ধুলোবালি, দিনটি তার আটকে থাকে অন্যরকম খাঁচায়, যে খাঁচা সে চিনতে চাইলেও চিনতে পারে না। চাকরি না বিদেশ না অন্য কোন কিছু এ নিয়ে সে দ্বিধান্বিত। তার সামনে আবার কখনো কখনো হঠ্যাত্‌ একটি শেয়াল এসে চমত্‌কার হাসি দিয়ে যাচ্ছে, অথচ তা দেখেও  তার বলার কিছু নেই। বরং দেখতে হচ্ছে শেয়ালের রাজকীয় হেঁটে যাওয়া। তবে তারপরেও গানের ভাষা বদলাচ্ছে না- পাচ্ছে না খুঁজে সেই ভাষা। যে ভাষায় সে অন্তত তার নিজের যন্ত্রনাটুকু মেলাতে পারে।

 

– কালান্তর

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024