শ্রী নিখিলনাথ রায়
কাশীমবাজার-নদীর সংকীর্ণতার কথা বহুদিন হইতে প্রচলিত রহিয়াছে। ১৬৬৬ খৃঃ অব্দের ফেব্রুয়ায়ী মাসে বানিয়ার ও টেভারনিয়ার স্বতীতে পঁহুছিলে, বানিয়ার জলপথে আসায় অসুবিধাবোধে স্থলপথে কাশীমবাজারে উপস্থিত হন। টেভারনিয়ার ইহাকে একটি ক্ষুদ্র খাল বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন। হেজেস্ ১৬৮৬ খৃঃ অব্দের এপ্রিল মাসে নদীয়া হইতে মহুলায় উপস্থিত হইয়া, জলপথে আসিতে না পারিয়া স্থলপথেই কাশীমবাজারে আগমন করেন। হলওয়েল্ কলিকাতা হইতে মুর্শিদাবাদে আসার সময় জলাভাবে বজরা পরিত্যাগ করিয়া একখানি ক্ষুদ্র ডিঙ্গি-নৌকার সাহায্যে মুর্শিদাবাদাভিমুখে অগ্র- সর হইতে বাধ্য হন।। বরাবর সংকীর্ণ থাকিলেও ভাগীরথীর এমন: দুর্দশা আর কখনও ঘটে নাই।
পূর্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে যে, কাশীমবাজার বহু পূর্ব্ব হইতেই নিম্ন- বঙ্গের প্রসিদ্ধ বাণিজ্য-স্থান বলিয়া ‘পাশ্চাত্যজগতে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ১৬৩২ খৃঃ অব্দে ব্রুটান-নামক জনৈক ইউরোপীয় ইহাকে রেশম ও মস- লিনের প্রধান বন্দর বলিয়া অভিহিত করিয়াছেন; তাঁহার বর্ণনায়। কাশীমবাজারে ভিন্ন ভিন্ন ইউরোপীয় জাতির কুঠীর উল্লেখ দেখা যায়। ১৬৫৮ খৃঃ অব্দে জন কেন বার্ষিক ৪০ পাউণ্ড বেতনে কাশীমবাজার ইংরেজ কুঠীর প্রথম অধ্যক্ষ এবং জব চার্নক তাঁহার সহকারী নিযুক্ত হন।
এই চার্নকই কলিকাতার প্রতিষ্ঠা: করিয়াছিলেন। ১৬৮০ খৃঃ অব্দে জব চার্ণক কাশীমবাজার কুঠীর অধ্যক্ষ নিযুক্ত হইয়াছিলেন। অব্দে নবাব সায়েস্তাখাঁর কঠোর আদেশে বাঙ্গলার অন্যান্য স্থানের ন্যায় কাশীমবাজার কুঠীও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ইহার পর ইংরেজেরা পুনর্ব্বার বাঙ্গলায় বাণিজ্য করিবার আদেশ প্রাপ্ত হইলে, কানীমবাজার কুঠীর। পুননির্মাণ হয়। সিরাজউদ্দৌলা যৎকালে কানীমবাজার কুঠী আক্রমণ করেন। তৎকালে ওয়াট্ট্স রেসিডেন্টের ও ওয়ারেন হেষ্টিংস একজন ‘সামার কর্মচারীর কার্য্য করিতেন। কাশীমবাজার পূর্ব্বে অগণ্য অট্টালিকায় পরিপূর্ণ ছিল। এইরূপ প্রবাদ আছে যে, ইহার পরস্পরসংলগ্ন গগনস্পর্শী অট্টালিকারাজির জন্য রাজপথে সূর্যালোক প্রবেশ করিতে পারিত না এবং দুই তিন ক্রোশব্যাপিনী সৌধমালার অগ্রভাগ দিয়া লোকে অনায়াসে গতায়াত করিতে পারিত। ইহার পূর্ব্ব বিবরণ এক্ষণে আরবের উপন্যাস বলিয়া বোধ হয়। কয়েকটি সমাধিক্ষেত্র- ব্যতীত ইহার পূর্ব্ব নিদর্শন কিছুই দেখিতে পাওয়া যায় না। ১৬৮৬
কাশীমবাজারের প্রাচীন কালের চিহ্নের মধ্যে একটি জৈন মন্দির মুর্শিদাবাদের জৈন মহাজনদিগের যত্নে অদ্যাপি সুরক্ষিত রহিয়াছে। এই মন্দিরকে নেমিনাথের মন্দির বলিয়া থাকে। ভিন্ন ভিন্ন ইউরোপীয় বণিকদিগের ন্যায় কানীমবাজার অনেক দেশীর মহাজনের আবাসস্থানে ও পরিপূর্ণ ছিল। যে স্থানে নেমিনাথের মন্দির অবস্থিত, তাহার নাম মহাজনটুলী। ইহার চতুদ্দিকে ভিন্ন ভিন্ন দেশীয় মহাজনগণ বাস করি- তেন। নেমিনাথের মন্দিরের সম্মুখে জগৎশেঠদিগের একটি ব্যবসায়- ‘ভবন অদ্যাপি বর্তমান রহিয়াছে।। যতদিন হইতে কাশীমবাজার
এক্ষণে কান্তবাবুর ভ্রাতার বংশীয়েরা ইহাতে বাস করিতেছেন।
কাশীনবাঙ্গারের বিস্তৃত বিবরণ মুশিদাবাদের ইতিহাসে দেই।
Leave a Reply