শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৬:৫৭ পূর্বাহ্ন

জেলখানায় নাভালনির মৃত্যু: রাশিয়ায় গণতন্ত্র হত্যা

  • Update Time : শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ৩.২৬ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

জেলে আলেক্সি নাভালনির মৃত্যুর পর পশ্চিমা নেতারা পুতিনের দিকে আঙুল তুলেছেন। রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতার মৃত্যুকে প্রেসিডেন্টের জন্য দায়ী রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধবাদী সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা আলেক্সি নাভালনির মৃত্যুর জন্য রাশিয়াকে দায়ী করছেন পশ্চিমা নেতারা।

নিজের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, রাশিয়ার কেন্দ্রে এভাবে আটক নাভালনির মৃত্যু হওয়ায় তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছেন। নাভালনির মৃত্যুতে রাশিয়ার সমালোচনায় মুখর হওয়া অন্যান্য পশ্চিমা নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তিনি এ ঘটনার জন্য ‘পুতিন ও তার গুন্ডাদের’ দায়ী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট । মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এটিকে “পুতিনের বর্বরতার আরও প্রমাণ” বলে অভিহিত করেছেন।

“কোন ভুল করবেন না, পুতিন নাভালনির মৃত্যুর জন্য দায়ী,” বাইডেন শুক্রবার হোয়াইট হাউস থেকে মন্তব্যে বলেছিলেন।

হোয়াইট হাউজে তিনি বলেছেন, “সত্যিই কী হয়েছে তা আমরা জানিনা। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নাই নাভালনির মৃত্যু পুতিন ও তার গুন্ডারা যা করেছে তার ফলাফল। রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব গল্প বলতে যাচ্ছে। কিন্তু নাভালনির মৃত্যুর জন্য পুতিনই দায়ী।”

আর্কটিক সার্কেলের প্রায় ৪০ মাইল উত্তরে একটি কারাগারে বন্দী থাকার সময় মারা যান, যেখানে তাকে একটি “বিশেষ শাসনের” অধীনে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। খর্প রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে ১৯০০ কিলোমিটার উত্তরপূর্বের একটি শহর।

রাশিয়ার ইয়েমালে-নিনিয়েৎস স্বায়ত্তশাসিত জেলার ফেডারেল কারাগার পরিষেবা এক বিবৃতিতে বলেছে, হাঁটাহাঁটি শেষ করে ফেরার পর তিনি অসুস্থবোধ করেন আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অজ্ঞান হয়ে যান, তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করা হলেও তা আর ফেরেনি।

মৃত্যুর সময় তিনি আর্কটিক সার্কেলের কারাগারে বন্দী ছিলেন। কারাসূত্রের বরাতে তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে রুশ বার্তা সংস্থাগুলো। খবর দ্য গার্ডিয়ান।

কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, আর্কটিক সার্কেলের উত্তরে পেনাল কলোনিতে কারাবাসে ছিলেন নাভালনি। শুক্রবার সেখানেই তিনি পড়ে যান এবং জ্ঞান হারান।

কারাগারের চিকিৎসকরা সেখানে এসে তাকে দেখেন এবং পরে অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়।

কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সের চিকিৎসকরা নাভালনিকে মৃত ঘোষণা করেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানায়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নাভালনি সম্ভবত পুতিনের সবচেয়ে বিখ্যাত সমালোচক ছিলেন। এক দশকের বেশি সময় ধরে তিনি রুশ ক্ষমতা কাঠামোর কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতির তথ্য ফাঁস করে আসছিলেন। এসব ঘটনার তদন্ত ভিডিও করে অনলাইনে ছাড়া হলে লাখ লাখ মানুষ দেখতেন।

ক্যারিশম্যাটিক এই নেতা ২০১৮ সালে পুতিনের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার কথা ছিল। এ জন্য নির্বাচনী প্রচার শিবিরও খুলেছিলেন। তবে তাকে সেবার ভোট করতে দেওয়া হয়নি।

২০২০ সালের আগস্টে সাইবেরিয়ার টমসক শহর থেকে উড়োজাহাজে করে মস্কোয় ফেরার পথে নাভালনিকে রুশ নার্ভ এজেন্ট ‘নোভিচক’ বিষ প্রয়োগ করা হয়। এ জন্য সরাসরি পুতিনকে দায়ী করে আসছিলেন নাভালনি। যদিও পুতিন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এরপর বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি দেশে ফিরলে মস্কো বিমানবন্দরেই তাকে গ্রেপ্তার করে রুশ কর্তৃপক্ষ। এরপর বিভিন্ন মামলায় ১৯ বছরের সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে পাঠানোর আগে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে মস্কোতে বসবাস করতেন নাভালনি।

নাভালনি এবং তার অনেক সমর্থক আশা করেছিলেন যে তিনি কারাগারের পিছনে মারা যেতে পারেন, খুব কমই ভেবেছিলেন যে এটি এত তাড়াতাড়ি হবে। মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সে বক্তৃতার সময় তার স্ত্রী ইউলিয়া বলেন, “আমি জানি না ভয়ঙ্কর খবরটি বিশ্বাস করব কিনা।”

“কিন্তু যদি এটা সত্যি হয়, তাহলে আমি চাই পুতিন, তার কর্মী, তার বন্ধুরা, তার সরকার জানুক যে তারা আমাদের দেশ, আমার পরিবার এবং আমার স্বামীর সাথে যা করেছে তার জন্য তারা শাস্তি পাবে। তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে এবং সেই দিন খুব শীঘ্রই আসবে।”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024