ড. আবুল মোমেন
আজকে ২৫শে মার্চ—গণহত্যা দিবস। আমি পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব নেবার পর পররাস্ট্র মন্ত্রণীলয়ের “সুগন্ধায়” যেখানে জাতির পিতা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সর্বপ্রথম দপ্তর ছিল। যে ভবনে বাংলার নির্বাচিত অবিসংবাদিত নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহহিয়া খানের সাথে বৈঠক করেন। সেই বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার পর পাকিস্তান মিলিটারী জান্তা বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের উপর গণহত্যা শুরু করে এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের ত্রিশ লাখ তাজা প্রাণ ঝরে পড়ে। সকল মুক্তিকামী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এই ভবনে “গণহত্যা কর্ণার” স্থাপন করি।
স্বনামধন্য নেতা জনাব আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, আবুল মাল আব্দুল মুহিত যৌথভাবে শত শত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিদেশী রাস্ট্রদূতদের উপস্থিতিতে এই গণহত্যা কর্ণারটি উদ্বোধন করেন।
এই গণহত্যা কর্ণারের দৃষ্টিনন্দন ভবনে (যেটা তৈরি হয়েছিল ১৯৬১ সালে দ্বিতীয় রাণী এলিজাবেথ বাংলাদেশ সফর উপলক্ষে) এখানে আরো রয়েছে বঙ্গবন্ধু সরকারের স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রথম দপ্তর, বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত টেবিল, চেয়ার, ফোনসেট, বঙ্গবন্ধু ফটো গ্যালারি, বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র বা Bangabandhu Diplomatic Center for Excellence ইত্যাদি।
আমি সিদ্ধান্ত দিয়েছিলাম যে সপ্তাহের দুদিন এই ভবনটি দেশের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্কুল থেকে তাদের শিক্ষকের গাইডেন্সে ভবনটি পরিদর্শন করবে। ফিরে গিয়ে এর উপর প্রবন্ধ-গল্প লিখবে, জাতির পিতাকে নিয়ে গবেষণা করবে। পাশাপাশি জনগণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
আজকে ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবসে বঙ্গবন্ধু কর্ণারে গিয়ে দেখলাম ভবনটি ফাঁকা। কোনো লোকজন নেই। আরো জানলাম যে, স্কুলের ছেলেমেয়েদের আর এখানে আসতে উৎসাহ দেয়া হয়না! জনগণের ও প্রবেশ নিষেধ।
এখনো আওয়ামীলীগ সরকার দেশে বলবৎ আছে। আর আওয়ামীলীগ যদি সরকারে না থাকে বিশেষ করে শেখ হাসিনা যদি সরকারে না থাকেন, (যেমনটি আজকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২৪ প্রদান অনুষ্ঠানে বলেছেন— ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এদেশে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা কঠিন ছিল— আওয়ামীলীগ সরকারে থাকা অবস্থায়ই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা বঙ্গবন্ধু কর্নারের আজকের এমন অবস্থা দেখে আমি মর্মাহত।
আমরা কি এসব বিষয়ে মনোযোগী হবো?
Leave a Reply