শ্রী নিখিলনাথ রায়
রাজা উদয়নারায়ণ
খৃষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রারম্ভে ভারতবর্ষের চতুদ্দিকে ঘোর রাজ- নৈতিক বিপ্লব উপস্থিত। বিজয়ী সম্রাট্ আরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মোগল- গৌরব-সূর্য্য ধীরে ধীরে অস্তমিত হইতে বসিয়াছে; তদীয় পুত্রগণ পরস্পর কলহে উন্মত্ত; দাক্ষিণাত্যে বীরেন্দ্রকেশরী শিবাজী যে বীরজাতির সৃষ্টি করিয়াছিলেন, সেই মহারাষ্ট্রীয়গণ বিশ্ববিস্ময়কর প্রতাপে মোগল সাম্রাজ্য- •বিধ্বস্ত করিবার জন্য ব্যগ্র; মধ্যস্থলে রাজপুতগণ রাজা রাজসিংহ- প্রভৃতির অধীনতায় পুনর্ব্বার আপনাদিগের স্বাধীনতা বদ্ধমূল করিতে > প্রয়াসী। আবার পঞ্চনদের নদীবিপ্লাবিত প্রদেশ হইতে এক ধৰ্ম্মপ্রাণ জাতির অভ্যুদয় হইতেছিল, যাহারা শিখ নামে অভিহিত হইয়া উত্তর- কালে মোগল ও ব্রিটিশ রাজত্বে সমরাগ্নি, প্রজ্বলিত করিয়াছিল; ভারতের চতুদ্দিকে ইংরেজ, ফরাসী ও অন্যান্য বৈদেশিক বণিকগণ বাণিজ্য- বিস্তারচ্ছলে রত্নপ্রসবিনী ভারতভূমিকে করতলস্থ করিবার জন্য মনে মনে সংকল্প করিতেছিলেন। এই সময় নবাব মুর্শিদকুলী খাঁ বাঙ্গলার সিংহাসনে আসীন; প্রসন্নসলিলা ভাগীরথীপ্রান্তস্থিত মুর্শিদাবাদ তাঁহার রাজধানী।
অল্পকাল হইল, তিনি নায়েব নাজিমীর ভার প্রাপ্ত হইয়াছেন। আজিম ওখান বঙ্গরাজ্যের শাসনকর্তা; তাঁহার পুত্র ফরশের নামমাত্র প্রতিনিধি হইয়া বাঙ্গলায় অবস্থিতি করিতেছিলেন। বস্তুতঃ মুর্শিদকুলী খাঁ সর্ব্বেসর্ব্বা। এতদিন কেবল দেওয়ানীর ভারমাত্র তাঁহার হস্তে থাকায়, তিনি স্বীয় প্রভুত্ব অধিকপরিমাণে বিস্তার করিতে পারেন নাই। নায়ের নাজিমী পদলাভ করিয়া ও তৎসঙ্গে সঙ্গে দেওয়ানীর ভার থাকায় তিনি বঙ্গদেশে আপন শাসননীতিপ্রচারের আরম্ভ করিলেন। সর্ব্বাপেক্ষা জমীদারগণ তাঁহার শাসনদণ্ডের কঠোরতা বিশেষরূপে অনুভব করিয়া- ছিলেন। নিজের আদেশ থাকুক, আর নাই থাকুক, তাঁহার কর্মচারি- গণের আসুরিক ব্যবহারে বাঙ্গলার জমীদারগণ মৃতপ্রায় হইয়া উঠিলেন।
ইহাদের মধ্যে নাজির আহম্মদ ও সৈয়দ রেজা খাঁ সর্ব্বপ্রধান। যাঁহার এক কপর্দক রাজস্ব বাকি পড়িত, অমনি তাঁহাকে নানাবিধ অত্যাচার ভোগ করিতে হইত। প্রচলিত ইতিহাসে দেখা যায় যে, কাহারও পাদদেশ রজ্জুবদ্ধ করিয়া তাঁহাকে লম্বিত করিয়া রাখা হইত; জমীদারগণ গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রে, শীতের প্রবল শীতে, সামান্য অপরাধীর ন্যায় নগ্নগাত্রে উন্মুক্ত স্থলে দিবারাত্র কষ্ট ভোগ করিতেন। সৈয়দ রেজা খাঁর অত্যাচারের কথা পাঠ করিলে শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠে। একটি বিস্তৃত গর্ত খনন করিয়া তাহা নানাবিধ দুর্গন্ধময় আবর্জনা দ্বারা পরিপূর্ণ করিত, পরে অপরাধী জমীদারগণকে তাহার মধ্যে নিক্ষেপ করিয়া -দীর্ঘকাল অবস্থানের জন্য আদেশ প্রদত্ত হইত! হিন্দুগণকে উপহাস করিবার জন্য, তাহার নাম ‘বৈকুণ্ঠ’ দেওয়া হইয়াছিল। এতদ্ভিন্নরাজধানী। অল্পকাল হইল, তিনি নায়েব নাজিমীর ভার প্রাপ্ত হইয়াছেন। আজিম ওখান বঙ্গরাজ্যের শাসনকর্তা; তাঁহার পুত্র ফরশের নামমাত্র প্রতিনিধি হইয়া বাঙ্গলায় অবস্থিতি করিতেছিলেন। বস্তুতঃ মুর্শিদকুলী খাঁ সর্ব্বেসর্ব্বা।
এতদিন কেবল দেওয়ানীর ভারমাত্র তাঁহার হস্তে থাকায়, তিনি স্বীয় প্রভুত্ব অধিকপরিমাণে বিস্তার করিতে পারেন নাই। নায়ের নাজিমী পদলাভ করিয়া ও তৎসঙ্গে সঙ্গে দেওয়ানীর ভার থাকায় তিনি বঙ্গদেশে আপন শাসননীতিপ্রচারের আরম্ভ করিলেন। সর্ব্বাপেক্ষা জমীদারগণ তাঁহার শাসনদণ্ডের কঠোরতা বিশেষরূপে অনুভব করিয়া- ছিলেন। নিজের আদেশ থাকুক, আর নাই থাকুক, তাঁহার কর্মচারি- গণের আসুরিক ব্যবহারে বাঙ্গলার জমীদারগণ মৃতপ্রায় হইয়া উঠিলেন। ইহাদের মধ্যে নাজির আহম্মদ ও সৈয়দ রেজা খাঁ সর্ব্বপ্রধান। যাঁহার এক কপর্দক রাজস্ব বাকি পড়িত, অমনি তাঁহাকে নানাবিধ অত্যাচার ভোগ করিতে হইত। প্রচলিত ইতিহাসে দেখা যায় যে, কাহারও পাদদেশ রজ্জুবদ্ধ করিয়া তাঁহাকে লম্বিত করিয়া রাখা হইত; জমীদারগণ গ্রীষ্মের প্রখর রৌদ্রে, শীতের প্রবল শীতে, সামান্য অপরাধীর ন্যায় নগ্নগাত্রে উন্মুক্ত স্থলে দিবারাত্র কষ্ট ভোগ করিতেন। সৈয়দ রেজা খাঁর অত্যাচারের কথা পাঠ করিলে শরীর রোমাঞ্চিত হইয়া উঠে। একটি বিস্তৃত গর্ত খনন করিয়া তাহা নানাবিধ দুর্গন্ধময় আবর্জনা দ্বারা পরিপূর্ণ করিত, পরে অপরাধী জমীদারগণকে তাহার মধ্যে নিক্ষেপ করিয়া -দীর্ঘকাল অবস্থানের জন্য আদেশ প্রদত্ত হইত! হিন্দুগণকে উপহাস করিবার জন্য, তাহার নাম ‘বৈকুণ্ঠ’ দেওয়া হইয়াছিল।
Leave a Reply