সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৪:৫১ পূর্বাহ্ন

সিনেটে টিকটকের বিক্রি বা নিষেধাজ্ঞা বিল: এরপরে কী হবে?

  • Update Time : শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ৪.৪৯ পিএম

সারাক্ষণ ডেস্ক

 

টিকটককে হয় তার চীনা অভিভাবক বাইটড্যান্সের (টিকটকের মূল প্রতিষ্ঠান) সাথে সম্পর্ক শেষ করতে  হবে বা আমেরিকাতে কাজ করা নিষিদ্ধ করতে হবে। আর তাদের বাধ্য করার জন্য মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে  ইউএস. হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভে একটি বিল পাস হতে যাচ্ছে।

 

সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন  নিজের পুনর্নির্বাচনের সংক্ষিপ্ত ভিডিও প্ল্যাটফর্মে বলেছেন যে, সিনেটে পাস হলে তিনি সেখানে সাথে সাথে স্বাক্ষর করবেন। ওই বিলে টিকটক এবং বাইটড্যান্সের তৈরি যে কোনও “উত্তরসূরি অ্যাপ্লিকেশন” অর্থাৎ এর মাধ্যমে তৈরি করা হবে এমন এ্যাপস নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। যদি না গ্রুপটি অন্য প্ল্যাটফর্মে তার শেয়ার বিক্রি করে দেয়।

কিন্তু বিলটি প্রেসিডেন্টর ডেস্কে পৌঁছাবে কিনা তা টিকটকের উপর ঝুলন্ত অনেক প্রশ্নের মধ্যে একটি !

 

আইনি বাধা

 

সিনেটর মারিয়া ক্যান্টওয়েল, বামে, এবং সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার টিকটক নিষিদ্ধ করার জন্য যে কোনও বিল সিনেটে আসার আগে টিকটকে জনসাধারণের শুনানির আহ্বান জানিয়েছেন।

 

সিনেট বাণিজ্য কমিটির সভাপতি মারিয়া ক্যান্টওয়েল এবং গোয়েন্দা কমিটির সভাপতি মার্ক ওয়ার্নার সিনেটে কোনও টিকটক বিল আসার আগে এই বিষয়ে গণশুনানির আহ্বান জানিয়েছেন। টিকটক সম্পর্কে একটি রুদ্ধদ্বার গোয়েন্দা ব্রিফিংয়ের পর ক্যান্টওয়েল সাংবাদিকদের বলেন,
“আমি মনে করি, এটা ঠিক করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিষ্ঠানে, আমরা এমন লোকেদের দিয়ে পূর্ণ যারা শুধু তাদের জিনিসগুলোর প্রচার করতে চায়। কিন্তু সেসব বিষয়গুলো  আমাদের জন্য তেমন প্রয়োজনীয় নয়। আর এর প্রভাবও নেই।”

অন্যান্য সিনেটররা  বিল প্রস্তাব করার  বিষয়ে ধারণা দিয়েছেন। সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা চাক শুমার এখনও শুনানি বা ভোটের প্রতিশ্রুতি দেননি। কংগ্রেস দুই সপ্তাহের ইস্টার অবকাশের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কারণে উভয় ফ্রন্টে অগ্রগতি থেমে রয়েছে।

 

 

জো বাইডেন পুনর্নির্বাচনের প্রচারের কাজে সম্প্রতি তরুণদের আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তাই একটি টিকটক অ্যাকাউন্ট চালু করেছেন।

আইন সংস্থা হল এস্টিলের সাইবারসিকিউরিটি এবং ডেটা প্রাইভেসি অংশীদার এবং ওকলাহোমা হাউস অফ রিপ্রেজেনটেটিভের প্রাক্তন সদস্য কলিন ওয়াক বলেন, “আমি বুঝতে পেরেছি যে সিনেট থেকে অন্তত কিছু চাপ আসছে। কিন্তু আমি মনে করি, বছরের শেষের দিকে আমরা কিছু একটা করতে পারব। ”

ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান উভয়ই কিছু আইনপ্রণেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা ধারণা করছেন যে, বিলটি সরকারের ওভাররিচ, প্রথম সংশোধনী অধিকার লঙ্ঘন বা মুক্ত বাজারে সমস্যা করতে পারে।

যদি সিনেট পরিবর্তন বিষয়ে একটি বিল পাস করে, তবে দুটি চেম্বারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি সম্মেলন কমিটিকে মত পার্থক্যের সমন্বয় করতে হবে এবং একটি একীভূত সংস্করণে সম্মত হতে হবে। যা চূড়ান্ত ভোটের জন্য প্রতিটি চেম্বারে আবার ফিরে যাবে।

বিল পাসে বাধা হতে পারেন ট্রাম্প

 

ইউরেশিয়া গ্রুপের থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ভূ-প্রযুক্তির পরিচালক জিয়াওমেং লু-এর মতে, উভয় কক্ষের মাধ্যমে একটি বিল পেতে সম্ভবত কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তিনি বলেন, “বিভিন্ন সংস্করণের আনুষ্ঠানিক সম্মেলনের অসুবিধা বিবেচনা করা উচিত। প্রস্তাবটি এগিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে সম্ভাব্য উপায় হল যে এই শরতের সময়ে জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইন পাস করা ।”

তিনি আরও বলেন, সিনেট সম্ভবত কিছু আইনি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বিলের ভাষা আরও কঠোর করবে। কিন্তু টিকটকের একজন খুব কাছের মিত্র রয়েছে। তিনি হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে, ট্রাম্প ২০২০ সালে সংস্থাটির বিষয়ে দুটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছিলেন। একটি আমেরিকায় টিকটক নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু সেই বছর তা ফেডারেল বিচারকদের মাধ্যমে আটকে দেয়া হয়েছিল এবং ২০২১ সালে বাইডেন তা বাতিল করেছিল।

 

 

অন্যটির জন্য বাইটড্যান্সকে তার আমেরিকার সম্পদ বিক্রি করতে হবে। এছাড়া সব  আমেরিকান ব্যবহারকারীর তথ্য মুছে ফেলতে হবে। এই আদেশের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী বিনিয়োগ কমিটি দিয়ে টিকটকের বিরুদ্ধে অনেক বছর তদন্ত করা হয়।

সিএফআইইউএস গত বছর বাইটড্যান্সকে টিকটকের অংশীদারিত্ব বিক্রি করতে বলেছিল। কিন্তু তারপর থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

লু বলেন, “আমি মনে করি রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট দুই পক্ষেরই কিছু লোক চিন্তিত যে এটি তাদের তরুণ ভোটারদের উপর কী প্রভাব ফেলবে। শুধু এই নির্বাচনের সময় নয়, পরের নির্বাচনী সময় এর প্রভাব পড়বে।

কারণ অনেক কিশোর টিকটক ব্যবহারকারীর রয়েছেন যাদের এবার ভোট দেয়ার মতো বয়স হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আর এটাই এই ইস্যুতে সিনেটের ধীর গতির একটি কারণও হতে পারে ।

 

লু আরো বলেন, ‘ট্রাম্প যদি তার নির্বাচন প্রচারের দাতা এবং নির্বাচনী চাপের মুখোমুখি না হন তাহলে নিষেধাজ্ঞাকে সমর্থন করার মূল অবস্থানে ফিরে যেতে পারেন। যদি কোনও বিল অবশেষে আইনে স্বাক্ষর হয়, তবে টিকটক আবার আদালতে লড়াই করবে ।’

লু বলেন,”প্রযুক্তিগতভাবে, বাইটড্যান্সকে এই প্রযুক্তি বিক্রি করার আগে বাণিজ্যমন্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে। আর এখানেই চীনের বক্তব্য আসে। টিকটক এর মধ্যেই সম্ভাব্য আদালক লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করার জন্য আইন সংস্থাগুলিকে যুক্ত করেছে। ”

বড় বাধা হতে পারে চীন

ভিডিও বার্তায় টিকটকের প্রধান নির্বাহী শৌ চিউ বলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে মিলে তৈরি করা এই অসাধারণ প্ল্যাটফর্মকে রক্ষা করতে আমরা আমাদের আইনি অধিকার প্রয়োগসহ  সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাব।

বেইজিং বারবার বলেছে যে, তারা টিকটকের জোরপূর্বক বিক্রির “দৃঢ় বিরোধিতা” করে । ২০২০ সালে, চীন সরকার তার রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় তথ্য বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগতসুপারিশ অ্যালগরিদমসহ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করেছে।

ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড্যান ইভস বলেন, ” বাইটড্যান্স থেকে অ্যালগরিদমটি আলাদা করা একটি খুব কঠিন প্রক্রিয়া হবে। যা আমেরিকার নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে অনেক যাচাই-বাছাই করা হবে। এই সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে, চীন বা বাইটড্যান্স আমাদের দৃষ্টিতে কোনও আমেরকিার প্রযুক্তি সংস্থার কাছে সোর্স কোডটি বিক্রি করার অনুমতি দেবে না। যা কোনও সম্ভাব্য কৌশলগত ক্রেতার জন্য এটিকে একটি স্পাইডারওয়েব ইস্যু করে তোলে।”
যদি আমেরকিার টিকটক নিষিদ্ধ করে বা জোর করে বিক্রি করে দেয় তবে বেইজিং প্রতিশোধ নেবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে মিশ্র মতামত । ”

 

বেইজিং-এ বাইটড্যান্সের প্রধান অফিস

সাইবার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,  আমরা চীন সরকারের কাছ থেকে যা দেখতে পাব তা হল অ্যাপলের মতো আমেরিকান সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ।

আর এ বিষয়ে লু বলেন, ‘তারা যদি টেসলা বা অ্যাপল ধরনের কোম্পানি বেছে নেয়, যারা দীর্ঘ সময় ধরে চীনের বন্ধু ছিল, তাহলে এমন এক সময়ে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কারণ চীন অর্থনৈতিক সমস্যার সাথে লড়াই করছে। আমি মনে করি, এটাই তাদের সমস্যা। ”

 

অ্যাপলের সিইও টিম কুক গত সপ্তাহে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত এই বছরের চায়না ডেভেলপমেন্ট ফোরামে অন্যতম উল্লেখযোগ্য অতিথি ছিলেন। কুক বলেন, আমি চীনের বাজার সম্পর্কে আশাবাদী। চীনে আইফোন বিক্রয় কমে যাওয়ার পরেও সংস্থাটি তার সফরের সময় সাংহাইতে আরেকটি খুচরা দোকান খুলেছে।

প্রযুক্তিগত বাধা

ওয়েডবুশের ইভস অনুমান করেছে যে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটির মূল্য প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার হবে। তাই এতো দামি কোম্পানি যে কেউ চাইলেই কিনতে পারবে না। তবে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটার মতো যে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা টিকটককে কেনার  সামর্থ্য রাখে। তবে তাদেরকেও পরে অবিশ্বাসের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে। এছাড়াও রয়েছে প্রযুক্তিগত সমস্যা।

যদি বিলটি, আইনে পাস হয় এবং বাইটড্যান্স বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বিক্রির উইন্ডো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে প্ল্যাটফর্মে দেশব্যাপী নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে। আমেরিকার সব অ্যাপ স্টোর এবং ইন্টারনেট সরবরাহকারীদের অ্যাপটিকে সমর্থন করা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া থখন টিকটকে ব্যবহারকারীদের অ্যাক্সেস সীমাবদ্ধ করতে হবে।

নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সাইবারসিকিউরিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও নির্বাহী পরিচালক ডেভিড চফনেস বলেন, “অ্যাপ স্টোর চেক করা সহজ। কিন্তু আমেরিকার  হাজার হাজার নেটওয়ার্ক যারা দেয়,তাদের উপর সার্ভিলেন্স করা প্রায় অসম্ভব!তাই আমি মনে করি আইনটি পাস হলেও তা অমান্য করার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। ”

তিনি আরও বলেন, টিকটক ব্যবহারকারীরা প্রাথমিকভাবে জেন জেড, প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত জনতাত্ত্বিক এবং সম্ভবত ভিপিএন ব্যবহারের মতো বিধিনিষেধগুলো বাইপাস করার উপায় খুঁজে পেতে পারেন।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024