সারাক্ষণ ডেস্ক
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা থেকে মিয়ানমারের শাসনকে রক্ষা করলেও বর্তমানে চায়না,বার্মিজ জেনারেলদের পরিপূর্ণ কূটনীতিক কূটনৈতিক সমর্থন দিতে অস্বীকার করেছে, এমন তথ্যই উঠে এসেছে, নিউ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের রিপোর্ট অনুযায়ী।
“মিয়ানমার শাসনের প্রতি চীনের অসন্তোষের মাত্রা তীব্র হয়ে উঠেছে উত্তর শান রাজ্যের সীমান্তে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের একটি প্রধান অভিযানের প্রতিক্রিয়া থেকে।
মিয়ানমারের সামরিক শাসকের এবং বেইজিংয়ের মধ্যে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে সামরিক সরকারের সে দেশের জন বাহিনীর সঙ্গে একের পর এক পরাজয়ের পর। থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স, অর্থাত্ তিনটি জাতিগত সেনাবাহিনীর, যথা মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তা’অং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ), গত অক্টোবরে চীনের সীমান্তবর্তী শান রাজ্যে সামরিক সরকারের বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন ১০২৭ নামে একটি যৌথ অভিযান চালিয়েছিল।
থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স মিয়ানমারের বিস্তৃত সীমান্ত এলাকা থেকে শাসক বাহিনীকে বের করে দিয়েছে, জেনারেলদের লাভজনক সীমান্ত বাণিজ্য আয় থেকে বঞ্চিত করেছে। মিন অং হ্লাইং এবং তার বাহিনী, যাকে সরকারীভাবে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল (এসএসি) বলা হয়, তারাও মূল ভূখন্ডে এখন সামরিক সরকারের বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
“অপারেশন ১০২৭ বেইজিংয়ের অনুমোদন ছাড়া সম্ভব হতো না। যুদ্ধের অধিকাংশই সীমান্তের পাশেই ঘটেছিল। চায়না দীর্ঘ দিন ধরে এই অঞ্চলে মিয়ানমারে শরনার্থী’র ঢল নিয়ে উদ্বিগ্ন শুধু নয় এটা তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ঘটছিলো। তাই এলাকাকে শান্ত করার বিষয়ে চায়নার আগ্রহ ছিলো বলে ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী শান রাজ্য-চীন সীমান্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত বাণিজ্য দ্বার, মুসকে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখবে কি না তা অস্পষ্ট বলে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে। মুস হল এসএসি’র অধিকারে থাকা একমাত্র বড় অবস্থান, যা থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স বাহিনীর ঘিরে রেখেছে। এর ফলে অপারেশন ১০২৭ চলাকালীন যে বর্ডার বানিজ্য বন্ধ হয়ে গেছে তা পুনরায় শুরু করা একটি জটিল হবে।
এই মূল্যায়ন এমন এক সময়ে আসে যখন চীন মিয়ানমারের জটিল সঙ্কটে সবচেয়ে প্রভাবশালী বিদেশী সমর্থক পাশাপাশি গণতন্ত্র আন্দোলনকে সমর্থনকারী যুক্তরাষ্ট্র, জাপান এবং অন্যান্য শক্তিগুলির জন্য বড় বাধা । তাছাড়া চায়নার উল্লেখযোগ্য ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে যেহেতু বেইজিং উত্তর মিয়ানমারে তার প্রভাব শক্তিশালী করেছে এবং ইউনানকে গভীর-সমুদ্র বন্দর এবং সড়ক ও রেল যোগাযোগ দিয়ে ভারত মহাসাগরের সাথে সংযোগ করার পরিকল্পনা করেছে।
ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে ১লাখেরও বেশি লোক যারা মূলত চায়নিজ তারা মিয়ানমারকে তাদের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছিলো। চায়নার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সামরিক সরকার তাদের নিরাপদে চলে যেতে দিয়েছে। এটাও থ্রি ব্রাদার্স এলায়েন্সকে অপারেশন করার সহায়তার একটি কারণ হতে পারে।
অপারেশন পরে, চায়না সামরিক শাসকদের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করেছে বলে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে।
চায়না সরকারের ঘনিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষাবিদরা আইসিজিকে বলেছেন, অভিযানগুলি শাসকের সাথে বেইজিংয়ের সম্পর্কে আরও চাপ সৃষ্টি করেছে। যা মূলত দীর্ঘ মেয়াদি সম্পর্কের ঘাটতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের সামরিক সরকারের ওপর চায়নার এ অসন্তুষ্টি আর্ন্তজাতিক বিশ্বের বিশেষ জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিলের জন্যে একটি ঐক্যমত হবারও সুযোগ করে দিয়েছে।
ওই রিপোর্ট আরো বলা হয়েছে, চায়নার এই অসন্তোষকে একটি ভালো দিক হিসেবে দেখে পশ্চিমরা এখন ডায়ালগের মাধ্যমে এমনকি জাতিসংঘের সিকিউরিটি কাউন্সিলও বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে নতুন কোন সমাধানের পথ খুঁজতে পারে।
Leave a Reply