শ্রী নিখিলনাথ রায়
আলি মহম্মদ ও লহরীমাল লিখিত হইয়াছে। নবাব-সেনাপতি লহরী- মাল সসৈন্যে বীরকিটি। গ্রামের নিকটস্থ হইলে, আলি মহম্মদও তথায় শিবির সন্নিবেশ করে। আলি মহম্মদের সৈন্যগণের উৎসাহ ও অধ্যবসায় দেখিয়া লহরীমাল অত্যন্ত চিন্তান্বিত হইলেন। তিনি উদয়চাঁদ ও আলি মহম্মদ উভয়কে উত্তমরূপে জানিতেন; উভয়ে সমরক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইলে, তাঁহার পক্ষে যে বিষম অনর্থ উপস্থিত হইবে, ইহা তিনি বিলক্ষণ রূপে বুঝিতে পারিলেন, এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের ন্যায় অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। এই সময়ে নদীয়াধিপতি মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের পিতা রঘু- রাম লহরীয়ালের সহিত উদয়চাঁদের বিরুদ্ধে রাজসাহী যাত্রা করিয়া- ছিলেন। রঘুরামের পিতা রাজা রামজীবন রাজস্ব প্রদানে অসমর্থ হওয়ায় বন্দী হইয়া মুর্শিদাবাদে অবস্থিতি করিতেছিলেন; পুত্র রঘুরামও তাঁহার সমভিব্যাহারে ছিলেন। যোদ্ধা বলিয়া রঘুরামের অত্যন্ত প্রতি- পত্তি ছিল; সাধারণে তাঁহাকে রঘুবীর বলিয়া জানিত।’ রঘুরাম নবাবের আদেশক্রমে লহরীমালের অনুবর্তী হন।
বীরকীটির নিকটে শিবিরসন্নিবেশের পর, তাহা হইতে বহুদূরে লহরীমাল পাঁচ জনমাত্র সৈনিকপুরুষের সহিত রঘুরামকে লইয়া বুদ্ধসংক্রান্ত পরামর্শ করিতেছিলেন, এমন সময় আলি মহম্মদ অসিচৰ্ম্ম- ধারণ করিয়া, অশ্বারোহণে উনিশ জন সৈন্যের সহিত তাঁহাদিগের দিকে অগ্রসর হইল। ইহাতে লহরীমাল নিরতিশয় ভীত হইলেন। তৎকালে আপনাদিগের সৈন্য দূরে অবস্থান করায়, তিনি আলি মহম্মদের সহিত বুদ্ধে প্রবৃত্ত হইতে ইচ্ছা করিলেন না। কিন্তু রঘুরাম রণবিমুখ হইতে নিষেধ করিয়া লহরীমালকে সাহস প্রদান করিতে লাগিলেন। এমন সময় আলি মহম্মদ নিকটস্থ হইলে রঘুরাম তাহার প্রতি এক তীক্ষ্ণ শুর নিক্ষেপ করেন; শর বর্ম্ম ভেদ করিয়া আলি মহম্মদের হৃদয়ে বিন্ধ হইল এবং তাহাকে তৎক্ষণাৎ ভূতলশায়ী করিল।
আলি মহম্মদ পিপা- সায় কাতর হইয়া উঠিলে, রঘুরাম তাহাকে বারি প্রদান করিয়া শুশ্রূষার্থ আপনাদিগের শিবিরে লইয়া যাইতে ইচ্ছা করিলেন; কিন্তু অচিরকাল মধ্যে আলি মহম্মদের প্রাণরায়ুর অবসান হয়। তাহার সৈন্য- গণ নেতৃবিহীন হইয়া ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়িলে, নবাবসৈন্যগণ তাহাদিগকে আক্রমণ করিল। তাহাতে একটি সামান্য যুদ্ধমাত্র হয়;- এই যুদ্ধে নবাবসৈন্যগণ তাহাদিগকে দলিত ও বিধ্বস্ত করিয়া ফেলিল। তারিখ বাঙ্গলা, রিয়াজুস্ সালাতীন ও স্টুয়ার্টের বাঙ্গলার ইতিহাসে কেবল এইমাত্র লিখিত আছে যে, রাজবাটীর নিকট মহম্মদ জানের সহিত উদয়নারায়ণের সৈন্যদিগের একটি যুদ্ধ হয়; তাহাতে গোলাম মহম্মদ নিহত হয়। এই রাজবাটী তাঁহার বীরকিটিস্থ বাসভবন, তাহার নিকট ও জগন্নাথপুরের গড়ের সম্মুখে এক পার্ব্বত্য প্রান্তরে উভয় পক্ষের। যুদ্ধ হয়। এক্ষণে সে স্থানকে মুণ্ডমালা বা মুড়মুড়ের ডাঙ্গা কহিয়া থাকে। তাহার নিকটে অদ্যাপি দগ্ধ কন্দুকাদি পাওয়া যায়। উদয়- নারায়ণের পুত্র সাহেবরাম এই যুদ্ধে বীরত্ব প্রদর্শন করিয়াছিলেন।
গোলাম মহম্মদের মৃত্যুসংবাদ রাজা উদয়নারায়ণের কর্ণগোচর। হইলে, তিনি অনন্যোপায় হইলেন। সেনাপতি ও যাবতীয় সৈন্য বিনষ্ট হইয়াছে; এরূপ অবস্থায় তিনি একাকী কি করিবেন, স্থির করিতে। পারিলেন না। একবার মনে করিলেন, যে কিছু অল্প সৈন্ত আছে, তাহা……………।
Leave a Reply