শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন

টেকনাফে অপহৃত মাদ্রাসাছাত্র ছোয়াদ উদ্ধার: অপহরণ চক্রের সব সদস্য আটক

  • Update Time : রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪, ৪.৩০ পিএম
জাফর আলম, কক্সবাজার
কক্সবাজারের টেকনাফের ছয় বছরের মাদ্রাসাছাত্র ছোয়াদ বিন আবদুল্লাহ উদ্ধার হয়েছে। তাকে উদ্ধার করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে রোহিঙ্গাদের একটি পরিবারের অপহরণকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার তথ্য। শিশুটিকে অপহরণে জড়িত অভিযোগে ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মোহাম্মদ রাসেল বলেছেন, এই রোহিঙ্গাদের সবাই পরস্পরের আত্মীয়। গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে টেকনাফের মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা রয়েছেন নাগু ডাকাত (৫৫), তার ছেলে আনোয়ার সাদেক (২১), সাদেকের স্ত্রী হোসনে আরা (২০), নাগু ডাকাতের ভাই মোহাম্মদ হাশেম (২৭), নাগু ডাকাতের স্ত্রী আয়েশা বেগম (৩২), ওই ক্যাম্পের মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী লায়লা বেগম (৫৫), মোহাম্মদ খানের স্ত্রী উম্মে সালমা (২৪), সৈয়দুল হকের স্ত্রী খাতিজাতুল খোবরা (৩৫), নাগু ডাকাতের এক কিশোর ছেলে।
গ্রেপ্তার হয়েছে  কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের হাজিরপাড়ার পুরাতন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের মধ্যে রয়েছেন জাফর আলমের ছেলে নাসির আলম (২৮)। এছাড়া রয়েছেন মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মাইস্যাঘোনা এলাকার মনছুর আলমের ছেলে সালামত উল্লাহ সোনাইয়া (৪৫), তার ছেলে মো. আমির হোসেন (২৪), একই ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকার মৃত কালামিয়ার ছেলে জহির আহমেদ (৬৫), শামসুল আলমের ছেলে হাসমুল করিম তোহা (২০) ও তৌহিদুল ইসলাম তোহা (৩০), সামিরাঘোনা এলাকার ফরিদুল আলমের ছেলে মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ (১৯), তার বাবা ফরিদুল আলম খান (৫২)।আনোয়ার সাদেকই এই অপহরণ চক্রের প্রধান হিসেবে কাজ করে আসছিলেন বলে দাবি করেন পুলিশ কর্মকর্তা রাসেল।
অপহৃত শিশু ছোয়াদ টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর ছেলে। সে পূর্ব পানখালী এলাকার আবু হুরাইরা (রাঃ) মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। গত ৯ মার্চ দুপুরে ক্লাস শেষে মাদ্রাসা থেকে বাসায় ফেরার পথে ছোয়াদ অপহৃত হয়। তার মা নুরজাহান বেগম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে থানায় মামলা করলে পুলিশ নামে তদন্তে। ২২ দিনের মাথায় শনিবার কুমিল্লার লালমাই এলাকা থেকে ছোয়াদকে উদ্ধার করা হয়। রবিবার শিশুটি ফিরেছে তার মায়ের কাছে।
একই ঘটনায় গত ২২ দিনে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার এবং অপহরণকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরে রবিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে টেকনাফ থানায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন অতিরিক্ত এসপি মোহাম্মদ রাসেল ও টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি। দুর্ঘটনায় মায়ের মাথা ফেটে গেছে, তাই হাসপাতালে যেতে হবে, এমন ভুয়া খবর শুনিয়ে সেদিন ছোয়াদকে অটোরিকশায় তুলে নিয়েছিলেন উন্মে সালমা।
পুলিশ জানিয়েছে, এই উম্মে সালমা এক সময় ছোয়াদদের বাড়িতে কাজ করতেন, সেই সূত্রে পরিবারটির সবাই তার চেনা। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল বলেন, পরিবার সদস্য, আত্মীয়দের নিয়ে গঠিত অপহরণ চক্রের প্রধান সাদেকের পরিকল্পনায় উম্মে সালমা সৌদি প্রবাসী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নিয়েছিল। যেখানে কিছু দিন কাজ করার পর ছোয়াদের সাথে পরিচয় এবং সখ্য তৈরি করে। কিছু দিন পর উম্মে সালমা চলে গিয়ে অপহরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে।
৯ মার্চ মামলার পর পুলিশ ঘটনাস্থল ও আশপাশের সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি গ্রেপ্তারে অভিযান চালাতে থাকে। ১০ মার্চ সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে অটোরিকশাসহ চালক নাসির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।তার দেওয়া তথ্যে ১২ মার্চ টেকনাফের মোচনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উম্মে সালমাসহ আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে।এই ৫ জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়েই অপহরণকারী পুরো চক্রটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়, বলেন রাসেল।ওসি ওসমান গণি বলেন, এরপর থেকে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রাখে। অভিযানে এক-একজনকে গ্রেপ্তারের পর আরও তথ্য আসতে শুরু করে।এর মধ্যে শিশুটির নুরজাহান বেগমকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। টাকা না দিলে শিশুটিকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। তার কান্নাজড়িত কণ্ঠও শোনানো হয় মাকে।ওসি ওসমান গণি বলেন, ফলে পুলিশ অভিযানের পাশাপাশি নানা কৌশলে এগিয়ে যেতে থাকে।
অপহরণ চক্রের সদস্যরা শিশুটি নিয়ে একের পর এক স্থান পরিবর্তন শুরু করে।তিনি জানান, টেকনাফ থেকে অপহরণের পর শিশুটিকে ঈদগাঁও এলাকায় রাখা হয়। ওখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার গহীন পাহাড়ে। যেখানে পুলিশ অভিযান টের পেয়ে শিশুটি নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লার লালমাই এলাকার একটি ভাড়া বাসায়।এর মধ্যে মুক্তিপণের ৪ লাখ টাকা পৌঁছে দেওয়ার কৌশলে নিয়ে শনিবার দুপুরে কুমিল্লার লালমাই এলাকা থেকে ছোয়াদকে উদ্ধার করা হয় বলে ওসি জানান। তিনি বলেন, আনোয়ার সাদেক, শাহীন, তোহা, নাগু ডাকাত, মধু, হোসনে আরা এবং তাদের পরিবারের সদ্যস্যরা অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য।
 ২২ দিন পর ছেলেকে ফেরত পেয়ে পুলিশকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি নুরজাহান বেগম বলেন, টেকনাফে অপহরণ যে কোনওভাবেই বন্ধ হওয়া জরুরি। পুলিশের তথ্য বলছে, গত এক বছরে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১৭ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৫৯ জন স্থানীয় বাসিন্দা, বাকিরা রোহিঙ্গা নাগরিক।অপহরণের পরিবারের তথ্য বলছে, এদের মধ্যে অন্তত ৫১ জনকে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024