মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৬ অপরাহ্ন

ঘুমাতে পারছেন না? কতগুলো আশ্চর্যজনক টিপ আপনাকে সাহায্য করতে পারে

  • Update Time : সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০২৪, ২.৩৮ পিএম

অনিদ্রা হলো একটি ঘুমের ব্যাধি যাতে মানুষের ঘুমে সমস্যা হয়। অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে ঘুমিয়ে পড়তে বা ইচ্ছামত ঘুমাতে অসুবিধা হয়। এক্ষেত্রে সাধারণত দিনের বেলায় ঘুম, কম শক্তি, খিটখিটে, এবং বিষণ্ণ মেজাজ পরিলক্ষিত হয়।

যাদের ঘুমাতে সমস্যা হয় তাদের জন্য আমরা কয়েকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা উপস্থাপন করছি । প্রথমত, এই শরতের শুরুর দিকে ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ কার্ডিওলজিতে একটি নতুন গবেষণা উপস্থাপিত হয়েছিল। এতে বলা হয় যে ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ১০ টির মধ্যে সাতটি হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক প্রতিরোধ করা যেতে পারে যদি প্রত্যেকে “একটি সুন্দর রাতের ঘুম” পায়। যারা রাতে সাত বা আট ঘন্টা ঘুমিয়েছিলেন তাদের দ্বারা কার্ডিয়াক স্বাস্থ্যের সেরা স্কোর অর্জন করতে দেখা গেছে।

অনিদ্রা অন্যান্য রোগ থেকে একটু ভিন্ন। যেমন টাইফয়েড বা করোনাভাইরাস হলে আমরা নিশ্চিত জানি যে আপনার শরীরে একটা জীবাণু প্রবেশ করেছে। অনিদ্রার ক্ষেত্রে তেমন নিশ্চিত একটা কারণ থাকে না।

অধ্যাপক ম্যাথিউ ওয়াকার তার গবেষণায় দেখতে পান  যে, রাতে মাত্র এক ঘন্টার ঘুম কম হওয়ার ফলে মস্তিষ্কের সেই অংশটি নরম হয়ে যেতে পারে যা সামাজিক আচরণকে ব্যহত করে, আমাদের আরও স্বার্থপর করে তোলে এবং আমরা আবিষ্কার করেছি যে, ঘুমের ক্ষতি অসামাজিক আচরণের জন্য একটি ট্রিগার হিসাবে কাজ করে, মানুষের সহজাত আকাঙ্ক্ষাকে হ্রাস করে।

অনিদ্রার রোগীদের চিকিৎসায় আরেকটা পদ্ধতি শেখানো হয়, যেটা আপনারও উপকারে আসতে পারে। তা হল ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ ঘণ্টা রিলাক্স করা। এটাকে বলে ‘ওয়াইন্ড ডাউন’ টাইম। দিনের ব্যস্ততা আর দুশ্চিন্তা গুলো থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে আনতে এই সময়টা ব্যবহার করতে বলা হয়।

এই এক ঘণ্টায় যেসব কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়, সেগুলো হল, বই পড়া, ডাইরি লেখা, গরম পানি দিয়ে গোসল করা, মনে প্রশান্তি আনে এমন শ্রুতিমধুর কিছু শোনা। যেমন ধর্ম গ্রন্থ বা কবিতা আবৃতি, গান – যেটা আপনার জন্য কার্যকর হয়। যেসব কাজ করতে মানা করা হয়, সেগুলো হল ঘুমানোর আগে টিভি দেখা, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা। কারণ এই যন্ত্রগুলোর স্ক্রিনের উজ্জ্বল আলো মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।

অনিদ্রার লক্ষণ  (Symptoms of Insomnia)

১) রাতে ঘুমাতে সমস্যা,

২) রাতে ঘুমানোর চেষ্টা করার সময় কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করা,

৩) একটি নির্দিষ্ট কাজে মনোনিবেশ করতে না পারা,

৪) রাত জেগে থাকা,

৫) সারাদিন তন্দ্রাচ্ছন্ন ও ক্লান্তি ভাব,

৬) স্মৃতিশক্তি হ্রাস,

৭) খিটখিটে ভাব ও বিরক্তিকর আচরণ,

৮) মানুষের সাথে সামাজিক হতে অক্ষমতা,

৯) দৈনন্দিন জীবনে ভুলের পরিমান বেড়ে যাওয়া,

১০) হতাশায় আচ্ছন্ন থাকা, তা থেকে আত্নহত্যার প্রবণতা।

মনে হয় আমরা সবাই “ঘুম” সমস্যায় ভুগছি

গবেষণা দাবি করে যে, যতক্ষণ না আমরা আট ঘণ্টার (অথবা, আরও উদার একাডেমিক কাগজপত্রে, সাতটি) “জাদু সংখ্যা” না পৌঁছাই, আমরা হার্টের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি, টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং ডিমেনশিয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। ২০১৮ সালে এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে মাত্র এক রাতের ঘুম মিস করায় মস্তিষ্কে একটি নির্দিষ্ট প্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।

নুফিল্ড হেলথের এই বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ৭৪ শতাংশ ব্রিটিশ প্রাপ্তবয়স্ক গত ১২ মাসে গুণমানের ঘুম কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে, প্রতি ১০ জনের একজন প্রতি রাতে মাত্র দুই থেকে চার ঘন্টা ঘুমিয়েছেন।

শরীরকে প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে অভ্যস্ত করার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো আর ঘুম থেকে জেগে ওঠা প্রয়োজন। যেমন, আপনি যদি ঠিক করেন যে প্রতিদিন রাত ১১টায় ঘুমাতে যাবেন আর সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠবেন, তাহলে এই রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত সময়ে আপনার শরীর একটা ভালো ঘুম দিতে অভ্যস্ত হয়ে পরবে।

জেগে ওঠার সময়টা প্রতিদিন একই রাখার চেষ্টা করবেন। শুক্রবারে বা ছুটির দিনে আমরা একটু দেরি করে উঠতে পছন্দ করি। এটা পরিহার করতে হবে।   

মহামারী হওয়ার পর থেকে অনিদ্রায় ভোগা লোকের সংখ্যা চারজনের মধ্যে একজন বেড়েছে: “অনিদ্রা” এর জন্য বেশিরভাগ রাতজাগা মানুষগুলি সকাল ৩ টার দিকে গুগল অনুসন্ধানের দিকে হাত বাড়িয়েছে।

অনিদ্রা নিয়ে গবেষণা করেন এমন একজন বিজ্ঞানী বোস্টক বলেন , সমস্যা হল ইতিমধ্যেই অনিদ্রায় ভুগছেন এমন লোকেরা যদি ঘুমের অভাবের সাথে সম্পর্কিত কিছু পড়ে তবে  তাদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে ।

তিনি আরো বলেন, ”আর খারাপ লাগলে আমরা কি করি? আমরা যত দ্রুত সম্ভব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। যদি আমরা আমাদের দুঃখকষ্ট দূর করতে মরিয়া হয়ে থাকি, তাহলে আমরা নিজেদেরকে বোঝাই যে একটি অনুপস্থিত উপাদান থাকতে পারে।” “আমরা একটি দ্রুত সমাধান খুঁজি।”

আশচর্যের বিষয় হলো ঘুম এখন শিল্প হয়ে গেছে। বাজার গবেষক বিসিসি রিসার্চের মতে, ঘুমের সাহায্যের বিশ্বব্যাপী বাজার ২০২০ সালে ৭৪ বিলিয়ন পাউন্ড থেকে ২০২৫ সালে ১০৪ বিলিয়ন পাউন্ডে উন্নীত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে।

নিদ্রাহীনতায় আট বছর ভোগা এক ব্যক্তি জানান, তিনি ঘুমের বড়ি, দামি ল্যাভেন্ডার মোমবাতি, গ্লুপি ম্যাগনেসিয়াম স্প্রে, হিপনোথেরাপি এবং মাথার ত্বকের সাথে সংযুক্ত অদ্ভুত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক দেওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই কাজ করেনি কিন্তু তিনি  টাকা খরচ করেছেন ঠিকই। “এই ধরনের জিনিসগুলোর ভাল উদ্দেশ্য, কিন্তু সন্দেহজনক সুবিধা,”

গাই লেসজিনার হলেন একজন পরামর্শদাতা নিউরোলজিস্ট যিনি লন্ডনের গাই’স হাসপাতালে স্লিপ ডিসঅর্ডার সেন্টার পরিচালনা করেন।তিনি বলেন, রাতের ব্যাঘাতহীন ঘুমের সাধনার জন্য একটি বৈজ্ঞানিক-শব্দযুক্ত নাম রয়েছে: “অর্থোসোমনিয়া”।

সোফি বস্টক হলেন একজন সিবিটিআই এর একজন ধর্মপ্রচারক। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা তিনি বিশ্বাস করেন, “আমাদের দৈনন্দিন সুশৃংখল জীবনযাপন করা, কাজ করে ‘সাধারণভাবে’ ক্লান্ত হয়ে পড়া, যাতে ঘুম অনিবার্য  হয়ে ওঠে আমাদের জন্যে “।

কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চা, কফি, কোমল পানীয় আর এনার্জি ড্রিঙ্কস।

কারণ কী? কারণ এগুলোতে আছে ক্যাফেইন। ক্যাফেইন কী করে? ঘুম আসতে দেয় না, ঘুম আসলেও গভীর হতে দেয় না। তাই ঘুমের সমস্যা থাকলে এগুলো না খাওয়াই ভালো। বিশেষ করে ঘুমের ৬ ঘণ্টা আগে এগুলো খাওয়া যাবে না। তাহলে কি খাবেন? সেটা নিয়েই পরের পরামর্শ।

ঘুমের কাছাকাছি সময়ে গরম দুধ পান করতে পারেন। কারণ দুধে আছে ট্রিপ্টোফ্যান। গবেষণায় দেখা গেছে এটা ভালো এবং লম্বা সময় ধরে ঘুম হতে সাহায্য করে।

অনিদ্রার রোগীদের চিকিৎসায় আরেকটা পদ্ধতি শেখানো হয়, যেটা আপনারও উপকারে আসতে পারে। তা হল ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ ঘণ্টা রিলাক্স করা। এটাকে বলে ‘ওয়াইন্ড ডাউন’ টাইম। দিনের ব্যস্ততা আর দুশ্চিন্তা গুলো থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে আনতে এই সময়টা ব্যবহার করতে বলা হয়।

এই এক ঘণ্টায় যেসব কাজ করার পরামর্শ দেয়া হয়, সেগুলো হল, বই পড়া, ডাইরি লেখা, গরম পানি দিয়ে গোসল করা, মনে প্রশান্তি আনে এমন শ্রুতিমধুর কিছু শোনা। যেমন ধর্ম গ্রন্থ বা কবিতা আবৃতি, গান – যেটা আপনার জন্য কার্যকর হয়। যেসব কাজ করতে মানা করা হয়, সেগুলো হল ঘুমানোর আগে টিভি দেখা, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করা। কারণ এই যন্ত্রগুলোর স্ক্রিনের উজ্জ্বল আলো মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে। ফলে ঘুম আসতে দেরি হয়।

যাদের বিছানায় শুয়ে থাকার পরও ঘুম না আসার সমস্যা আছে, তাদের জন্য ‘stimulus control’ নামক একটা চিকিৎসা পরামর্শ দেয়া হয়। উদ্দেশ্য হল আপনার মস্তিষ্ক যাতে শোবার ঘর এবং বিছানা দেখলে ঘুমের কথা চিন্তা করে। শোবার ঘরের সাথে যাতে অনিদ্রার কথা মাথায় না আসে।

এই চিকিৎসার বেশ কয়েকটা নির্দেশনা আছে। তার মধ্যে একটা হল ঘুম না আসলে জোর করে বিছানায় শুয়ে না থাকা। যদি ১০ থেকে ২০ মিনিট সময় ধরে শুয়ে থেকে ঘুম না আসে, তাহলে বিছানা থেকে উঠে পাশের রুমে যাবেন। রিলাক্স লাগে এমন কিছু কাজ করবেন যতক্ষণ ঘুম না আসে। তারপর ঘুম আসলেই কেবল বিছানায় ফেরত যাবেন।

পাশের রুমে কী কী করতে পারেন? হাল্কা আলোতে বই পড়তে পারেন, গান শুনতে পারেন। তবে মোবাইল ফোন ব্যবহার করবেন না, কারণ ফোনের উজ্জ্বল আলো ঘুম আসতে বাধা দিতে পারে।

‘Stimulus control’ চিকিৎসা পরামর্শের আরেকটি নির্দেশনা হল বিছানা শুধু ঘুমের জন্য ব্যবহার করা। বিছানায় অন্য কাজ না করা।

আমরা অনেকেই বিছানায় খাবার খাই, পড়াশুনা করি, মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার করি। বাসায় থাকলে দিনের অনেকটা সময় বিছানায় কাটাই। ঘুমের সমস্যা কমাতে চাইলে এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

অনেক অনিদ্রার রোগী বারবার ঘড়িতে সময় দেখে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পরে। এটা তাদের ঘুমের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই তাদেরকে ঘড়ির দিকে না তাকানোর পরামর্শ দেয়া হয়।

কী কী উপায়ে এটা করা যেতে পারে? ঘড়ির মুখটা উলটো দিকে ঘুরিয়ে রাখা। দেয়ালে ঘড়ি থাকলে সেটা নামিয়ে নেয়া। আর ফোনটা দুরে রেখে ঘুমানো। আবার এসব ব্যবস্থা নিতে গিয়ে ঘড়ি একদম লুকিয়ে ফেলবেন না! সকালে সময়মত জেগেও উঠতে হবে।

ঘড়ি দুরে আছে কিন্তু সকাল বেলা অ্যালার্ম বাজবে এবং আপনি শুনতে পাবেন – এমন ব্যবস্থা করে ঘুমাবেন। আর বাসায় যদি কেউ ঘুম থেকে ডেকে দেয়ার মত থাকে, তাহলে তো আর অ্যালার্ম নিয়ে এত চিন্তা করার প্রয়োজন নেই।

গবেষণায় দেখা গেছে অনেকের মনে ঘুম নিয়ে এমন কিছু ধারণা থাকে, যা দুশ্চিন্তার উদ্রেক করে এবং ভালো ঘুম হতে ব্যঘাত ঘটায়।

কি সেই চিন্তা গুলো? যেমন, প্রতিদিন আমাকে আট ঘণ্টা ঘুমাতেই হবে যখন আট ঘণ্টা ঘুমানো আপনার জন্য সম্ভব নয়। আবার ঘুমাতে গেছেন, ঘুম আসছে না এর মধ্যে দুশ্চিন্তা শুরু করলেন ‘আজ রাতে ভালো ঘুম না হলে কালকে কাজে খারাপ করবো বা পরীক্ষায় ফেইল করবো’। আবার মাঝ রাতে চিন্তা শুরু করলেন যে অনিদ্রা কোন দিন সারে না আমার এটা সারা জীবন থাকবে। আপনার

মাথায় যদি এমন চিন্তা আসে, তাহলে সেটাকে ধরে ফেলবেন আর ঠাণ্ডা মথায় নিজেকে বোঝাবেন এই চিন্তা গুলোর কোন ভিত্তি আছে কি না।

ঘুমানোর আগে আগে অনেক বেশি করে খেলে কারো কারো ঘুম ভালো না হতে পারে। যাদের রাতে ঘুমের সমস্যা আছে, তাদের জন্য ঘুমানোর ৩-৪ ঘণ্টা আগেই রাতের খাবার সেরে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024