শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৫)

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১.০০ পিএম

  শ্রী নিখিলনাথ রায়

 

এইরুপ কথিত আছে যে, মোরাদকে এক বৎসরের মধ্যে মন্ত্রে নির্মাণের আদেশ দিলে, মোরাদ জাফর খাঁর নিকট হইতে অনুমতি লয় যে, তাহার কার্য্যে নবাব যেন কোনরূপ বাধা প্রদান না করেন। এক বৎসরের মধ্যে এই বৃহৎ মজেদ নির্মাণ করা যে কতদূর দুঃসাধ্য, তাহা সহজে অনুমান করা যাইতে পারে। সুতরাং মোরাদ এক বৎসরের মধ্যে নূতন করিয়া ইষ্টকাদি প্রস্তুত করিয়া মজেদ নির্মাণ করিতে গেলে, কখনও কৃতকার্য্য হইতে পারিত না। এইজন্য নিকটবর্তী মন্দিরাদি ভগ্ন করিয়া থাকিবে। কেবল মন্দির বলিয়া কেন, নিকটবর্তী অন্ত্যান্ত ইষ্টকনিম্মিত গৃহাদিরও উক্তরূপ দশা হইয়াছিল বলিয়া জানা যায়।

মুর্শিদকুলী খাঁ হিন্দুবিদ্বেষী বলিয়া ইতিহাসে পরিচিত; কিন্তু আমরা সেরূপ মনে করি না; তবে হিন্দু অপেক্ষা মুসলমানদিগের প্রতি তাঁহার অনুরক্তি কিছু অধিক ছিল। তিনি যে ইচ্ছাপূর্ব্বক মন্দিরভঙ্গের আদেশ দিয়াছিলেন, ইহা বিশ্বাসযোগ্য নহে ৭ কারণ, তিনি নিজে সমাধিমন্দিরনির্মাণপ্রথার কোন রূপ আদেশ প্রদান করেন নাই এবং এক বৎসরের মধ্যে উক্ত প্রকাণ্ড মজেদ ও সমাধির নির্মাণ অসম্ভব বলিয়া সম্ভবতঃ তিনি বাধ্য হইয়া মোরাদের অত্যাচারের প্রতি লক্ষ্য করেন নাই। কিন্তু মোরাদ ফরাসের অত্যাচার অস্বীকার করিবার উপায় নাই। কারণ মুর্শিদকুলীর জামাতা, তাঁহার পরবর্তী নবাব সুজাউদ্দীন মোরাদ ফরাসের অত্যাচারের জন্য তাহার প্রাণদণ্ডের আদেশ দিয়াছিলেন।

হিজরী ১১৩৭ অব্দে। মজেদনির্মাণ ‘শেষ হয়। মক্কার সুপ্রসিদ্ধ মজেদের অনুকরণে ইহার নির্মাণ হইয়াছিল বলিয়া কথিত আছে। মজেদের সঙ্গে মিনার, চৌবাচ্চা ও ইন্দারা প্রভৃতিও প্রস্তুত হয়। মুর্শিদকুলী খাঁ মজেদ নির্মাণের পর এক বৎসরের কিছু অধিক কাল জীবিত ছিলেন। হিঃ ১১৩৯ অব্দে তিনি পরলোক গমন করেন। তাঁহার আদেশে মজেদের প্রবেশদ্বারের সোপানাবলীর নিম্নে একটি প্রকোষ্ঠ নির্মিত হয়; এই প্রকোষ্ঠেই তাঁহাকে সমাহিত করা হয়। তিনি বিনয় হকারে বলিয়াছিলন যে, উপাসকদিগের পদধূলি যেন তাঁহার বক্ষস্থলের উপর পতিত হয়। সাধুদিগের পদধূলি পরলোকে • তাঁহার, কল্যাণসম্পাদন করিতে পারে বলিয়া, তিনি এই রূপ অনুরোধ করিয়াছিলেন। মুর্শিদকুলী খাঁ যেরূপ আনুষ্ঠানিক মুসল্যান ছিলেন, তাহাতে তাঁহার পক্ষে এরূপ ইচ্ছাপ্রকাশ, বড় বিচিত্র নহে।

কাটরার মজেদ এক্ষণে ভগ্নদশায় উপস্থিত; তথাপি ইহার বিরাট্ গৌরবের নিদর্শন এখনও অনেক পরিমাণে উপলব্ধি করা যাইতে পারে। আমরা ইহার বর্তমান অবস্থার একটি চিত্র প্রদান করিতেছি।

 

 

 

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৪)

মুর্শিদাবাদ-কাহিনী (পর্ব-১৪)

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

kjhdf73kjhykjhuhf
© All rights reserved © 2024